এসজেডিএ দুর্নীতি

দশ মিনিটেই ৩ কোটি জালিয়াতি

কলমের এক আঁচড়ে শিলিগুড়ি জলপাইগুড়ি ডেভলপমেন্ট অথরিটির (এসজেডিএ) একটি প্রকল্পে বরাদ্দ ৩ কোটি টাকা বেড়ে গিয়েছিল বলে দাবি করল সিআইডি। এসজেডিএ দুর্নীতি নিয়ে সম্প্রতি চার্জশিট দাখিল করেছে সিআইডি। সেখানে সিআইডি-র দাবি, গোটা টেন্ডার প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করা হয়েছিল মাত্র ১০ মিনিটে।

Advertisement

কৌশিক চৌধুরী

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ০১ অগস্ট ২০১৫ ০৩:৪২
Share:

কলমের এক আঁচড়ে শিলিগুড়ি জলপাইগুড়ি ডেভলপমেন্ট অথরিটির (এসজেডিএ) একটি প্রকল্পে বরাদ্দ ৩ কোটি টাকা বেড়ে গিয়েছিল বলে দাবি করল সিআইডি। এসজেডিএ দুর্নীতি নিয়ে সম্প্রতি চার্জশিট দাখিল করেছে সিআইডি। সেখানে সিআইডি-র দাবি, গোটা টেন্ডার প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করা হয়েছিল মাত্র ১০ মিনিটে। ২০১২ সালের ৮ অক্টোবর, বিকাল ৫টা নাগাদ ১০ মিনিটে অভিযুক্ত আইএএস অফিসার এবং সংস্থার একাধিক ইঞ্জিনিয়ার মিলে কাগজপত্র তৈরি করে সরকারি টাকা আত্মসা‌ৎ করেছেন বলে চার্জশিটে অভিযোগ করা হয়েছে।

Advertisement

আদালত সূত্রের খবর, চার্জশিটে তদন্তকারী অফিসার গৌতম ঘোষাল অভিযোগ করেছেন, প্রাথমিক ভাবে ওই প্রকল্পের বরাদ্দ ধরা হয় ১৩ কোটি সাড়ে ৭৭ লক্ষ টাকার মতো। অভিযুক্ত এক ঠিকাদার সংস্থা ওই টাকাই প্রকল্পের কাজের জন্য সর্বনিম্ন দর হিসাবে দেয়। কিন্তু কাজের ওয়ার্ক ওর্ডার দেওয়ার সময় কয়েক মিনিটের মধ্যে নথিপত্রে জালিয়াতি করে তা প্রায় ১৬ কোটি সাড়ে ৯৮ লক্ষ টাকা করে দিয়ে কাজের বরাত দিয়ে দেওয়া হয়। সিআইডি-র এক শীর্ষ কর্তার দাবি, অভিযুক্তরা কয়েক মিনিটের মধ্যে আরও ৩ কোটি টাকা যে ভাবে গরমিল করেন তা অভাবনীয়।

গত ২০১২ সালে অগস্ট মাসে এসজেডিএ-র বোর্ড মিটিং হয়। সেখানে শিলিগুড়ি জলপাইগুড়ি প্ল্যানিং এরিয়ায় বৈদ্যুতিক চুল্লি, বস্তি এলাকায় জল সরবরাহ এবং জল শোধনের প্রকল্প নিয়ে আলোচনা হয়েছিল। তবে কোথায় কোন প্রকল্প হবে তা বোর্ড মিটিংেয় উল্লেখ করা ছিল না। ময়নাগুড়িতে প্রকল্পটি হবে না তাও বৈঠকের নথিতে সেই সময় ছিল না বলে অভিযোগ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে অন্য সমস্ত প্রকল্প বাদ দিয়ে অত্যন্ত তড়িঘড়ি ময়নাগুড়ির প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছিল। সেই সময় গোদালা কিরণ কুমার প্রকল্প অনুমোদন করেছিলেন বলে চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়েছে।

Advertisement

ধৃত আইএএস অফিসার বর্তমানে শিলিগুড়ি জেল হেফাজতে আছেন। আগামী ৩ অগস্ট তাকে ফের আদালতে তোলা হবে। এ দিন তাঁর আইনজীবী অভ্রজ্যোতি দাস বলেন, ‘‘আমার মক্কেল একটি ষড়যন্ত্রের শিকার। উনি সংস্থার প্রশাসনিক অফিসার ছিলেন। সংস্থার বাস্তুকারের নথিপত্র, প্রকল্পের রিপোর্ট তৈরি করেছেন, তিনি তাতে সই করেছিলেন মাত্র। আমরা আদালতে তাই বলেছি।’’

সিআইডি-র দেওয়া চার্জশিটে অভিযোগ, অভিযুক্ত আইএএস অফিসার গোদালা কিরণ কুমার, বাস্তকার মৃগাঙ্কমৌলি সরকার, প্রবীণ কুমার, সপ্তর্ষি পালই সমস্ত নথিপত্র তৈরি করেছিলেন। যাতে গরমিল মিলেছে। সব মিলিয়ে ১৬ জন অভিযুক্তের বাকিরা ঠিকাদার এবং ঠিকাদার সংস্থার কর্মী। কাজ না করেই যে ৯ কোটি ৭৫ লক্ষ টাকা পেমেন্ট করা হয়েছিল, তা সবই বরাত পাওয়া ঠিকাদার সংস্থার হাতে পৌঁছায়। সেখান থেকে তা ভাগ করা হয়। এর মধ্যে মৃগাঙ্কমৌলি সরকারের আত্মীয়ের নামে দুই জায়গায় সম্পত্তি কেনার জন্য দু’জন জমির দালালের মাধ্যমে প্রায় ৩ কোটি ৯১ লক্ষ টাকা দেওয়া হয়।

তদন্তকারী অফিসার দাবি করেছেন, গোদালাকে ২০১২ সেপ্টেম্বর মাস থেকে ২০১৩ সালের জানুয়ারি অবধি হাওয়ালার মাধ্যমে প্রায় ৬ কোটি টাকা অভিযুক্ত ঠিকাদার সংস্থা দিয়েছিল। সেই টাকা কলকাতার এক ব্যবসায়ীর হাত ঘুরে চেন্নাই হয়ে তেলঙ্গানার নেল্লোরে গোদালার দুই আত্মীয়ের কাছে পৌঁছয় বলে অভিযোগ করা হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন