উৎসবে বিশেষ নজর উপকূলে

২০০৮ সালের মুম্বই হামলায় মৎস্যজীবীদের নৌকা নিয়েই আজমল কাসবেরা এ দেশে ঢুকে পড়েছিল। তার পর থেকে উপকূলীয় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। বা়ড়ানো হয়েছে পরিকাঠামোও।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ অগস্ট ২০১৭ ০৩:১৮
Share:

মুম্বইয়ে জঙ্গিরা হামলা চালিয়েছিল আরবসাগর পাড়ি দিয়ে। পূর্ব উপকূলও সেই আশঙ্কা থেকে মুক্ত নয় বলে মনে করছে উপকূলরক্ষী বাহিনী। বিশেষত উৎসবের মরসুমে সমুদ্রপথে হানা দিতে পারে জঙ্গিরা। শুক্রবার এমনই আশঙ্কার কথা উঠে এল কলকাতায় ওই বাহিনীর বৈঠকে।

Advertisement

এই পরিস্থিতিতে পশ্চিমবঙ্গ এবং ওডিশার উপকূলে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করার নির্দেশ দিয়েছেন উপকূলরক্ষী বাহিনীর আইজি (উত্তর-পূর্বাঞ্চল) কুলদীপ সিংহ শেওরান। টহল, নজরদারিও বাড়াতে বলেছেন তিনি। ওই বাহিনী সূত্রের খবর, ডোকলামে সীমান্ত নিয়ে ভারত ও চিনের মধ্যে উত্তেজনার প্রেক্ষিতেও বাহিনীর কম্যান্ডারদের সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে।

উপকূলরক্ষী বাহিনীর কাজ এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থার মূল্যায়নে এ দিনই কলকাতার আঞ্চলিক সদর দফতরে বৈঠক শুরু হয়েছে। তাতে ডিভিশনাল কম্যান্ডারদের পাশাপাশি ডাকা হয়েছে উপকূলরক্ষী বাহিনীর বিমান স্কোয়াড্রনকেও। আজ, শনিবারেও বৈঠক চলবে। শুধু জঙ্গি হামলা নয়, বিদেশি শত্রুর হামলার ক্ষেত্রেও অবস্থানগত দিক থেকে বঙ্গোপসাগর গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের একাংশ মনে করছেন, ডোকলামের উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়তে পারে সাগরপথেও। তাই বাড়তি সতর্কতা প্রয়োজন।

Advertisement

২০০৮ সালের মুম্বই হামলায় মৎস্যজীবীদের নৌকা নিয়েই আজমল কাসবেরা এ দেশে ঢুকে পড়েছিল। তার পর থেকে উপকূলীয় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। বা়ড়ানো হয়েছে পরিকাঠামোও। গোয়েন্দা সূত্রে বলা হচ্ছে, পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশ উপকূলে প্রচুর মাছ ধরার ট্রলার ও নৌকা ঘোরাফেরা করে। রয়েছে সুন্দরবনের মতো কার্যত অরক্ষিত এলাকাও। এই পরিস্থিতিতে এই উপকূলে জঙ্গিদের অনুপ্রবেশের সুযোগ-সুবিধা বেশি। তাই হামলা ঠেকাতে উপকূলরক্ষী বাহিনীর সঙ্গে সঙ্গে বিএসএফ, কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা ব্যুরো, রাজ্য পুলিশের ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ। বাহিনীর আঞ্চলিক মুখপাত্র ডেপুটি কম্যান্ডান্ট অভিনন্দন মিত্র বলেন, ‘‘নিজেদের প্রস্তুতির পাশাপাশি নিরাপত্তার সঙ্গে জড়িত কেন্দ্র ও রাজ্যের বাকি দফতরগুলির সঙ্গেও সমন্বয় বাড়াতে বলা হয়েছে।’’ প্রতিদিন চারটি জাহাজ এই এলাকায় টহল দেয়। একই ভাবে দিনে গড়ে ন’ঘণ্টা করে আকাশপথে নজরদারি চালানো হয় বলে তাঁর দাবি।

গোয়েন্দারা জানাচ্ছেন, সাগরে প্রতিরক্ষা বাহিনীর চোখ-কান হিসেবে কাজ করেন মৎস্যজীবীরা। নিরাপত্তার ক্ষেত্রেও তাঁদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার জন্য ধীবরদের মধ্যে ‘সোর্স’ নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা প্রয়োজন। উপকূলরক্ষী বাহিনী সূত্রের খবর, মৎস্যজীবীদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়ানোর কাজ চলছে দীর্ঘদিন ধরে। নিরাপত্তার ব্যাপারেও সচেতন করা হয়েছে তাঁদের। গত এক বছরে এই নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ-ওডিশার ধীবর-গ্রামে ৮৩টি আলোচনাচক্রের আয়োজন করা হয়েছে।

এ দেশের উপকূলীয় নিরাপত্তার ফাঁকফোকর চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছিল কাসবেরাই। তাদের সেই ২৬/১১-র হামলার পর থেকেই উপকূলীয় নিরাপত্তার উপরে জোর দিচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকার। সামুদ্রিক নিরাপত্তার কথা বিচার করলে পশ্চিমবঙ্গ উপকূল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই এই এলাকার নিরাপত্তা আরও বাড়ানো উচিত বলে মনে করছেন উপকূলরক্ষী বাহিনীর একাংশ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন