নিজের বাড়িতে ইমামদের সঙ্গে বৈঠকে অনন্ত মহারাজ। রবিবার কোচবিহারে। —নিজস্ব চিত্র।
রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনের নয়া সমীকরণের ইঙ্গিত কোচবিহারের রাজ্য রাজনীতিতে। রবিবার নিজের বাড়িতে উত্তরবঙ্গ এবং নিম্ন অসমের বেশ কয়েক জন ইমামের সঙ্গে বৈঠক করেন বিজেপির রাজ্যসভার সাংসদ অনন্ত মহারাজ (নগেন্দ্র রায়)। সংখ্যালঘু ভোটের কথা মাথায় রেখেই বিজেপি সাংসদের এই পদক্ষেপ কিনা, তা নিয়ে জল্পনা তুঙ্গে। অনন্তের অবশ্য দাবি, এটা সৌজন্যমূলক সাক্ষাৎ। তবে বিজেপি সাংসদ এই নিয়ে খোঁচা দিতে ছাড়েনি তৃণমূল। জেলা বিজেপি নেতৃত্ব এই ঘটনার মধ্যে অস্বাভাবিক কিছু দেখছেন না।
এই প্রসঙ্গে তৃণমূলের মুখপাত্র তথা কোচবিহারের প্রাক্তন সাংসদ পার্থপ্রতিম রায় বলেন, “অনন্ত মহারাজ বিজেপির রাজ্যসভার সাংসদ। আজ তিনি ইমামদের নিয়ে বৈঠক করেছেন। এই বিষয়ে আমাদের কিছু বলার নেই। কিন্তু বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী থেকে বিজেপির তাবড় তাবড় নেতারা মুসলিম সমাজের মানুষদের নিয়ে বিষোদগার করেন। তাঁদের বাংলাদেশি তকমা দেওয়ার চেষ্টা করেন। অনন্ত মহারাজ কি তার জন্য ক্ষমা চেয়েছেন? আসলে বিজেপির এটা দ্বিচারিতা।” এই বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে বিজেপির জেলা সভাপতি অভিজিৎ বর্মন বলেন, “অনন্ত মহারাজ রাজ্যসভার সাংসদ। তাঁর বাড়িতে হিন্দু-মুসলিম যে কেউ আসতে পারেন। এই বিষয়ে কিছু বলার নেই। হয়তো যাঁরা এসেছিলেন, তাঁরা কোন দাবিদাওয়ার বিষয় নিয়ে কথা বলতে এসেছিলেন।” এই প্রসঙ্গে অনন্ত বলেন, “মুসলিম সম্প্রদায়ের যে সমস্ত মানুষের সঙ্গে বৈঠক করেছি, তাঁদের সঙ্গে আমাদের ঐতিহাসিক কী সম্পর্ক রয়েছে, সেই বিষয়ে আলোচনা করতেই বৈঠক ডাকা হয়েছিল। যাঁরা এসেছিলেন, তাঁরা আমাদের সংগঠনের সদস্য নয়। তাঁরা সাধারণ নাগরিক।”
অনন্ত দ্য গ্রেটার কোচবিহার পিপলস অ্যাসোসিয়েশন-এর নেতা। উত্তরবঙ্গের রাজবংশী সম্প্রদায়ের মধ্যে অনন্তের প্রভাব এবং গ্রহণযোগ্যতার কথা মাথায় রেখেই তাঁকে রাজ্যসভায় পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয় বিজেপি। অতীতে বিভিন্ন নির্বাচনে বিজেপিকে সাংগঠনিক ভাবে সাহায্য করলেও গত লোকসভা নির্বাচনে অনন্ত এবং তাঁর সংগঠন নিষ্ক্রিয় ছিল বলে মনে করেন বিজেপির একাংশ। ঘটনাচক্রে, উত্তরবঙ্গে একমাত্র কোচবিহার লোকসভা কেন্দ্রেই জয়ী হয় তৃ়ণমূল। ভোট মেটার পর কোচবিহারে গিয়ে মদনমোহন মন্দিরে পুজো দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই সময় অনন্তের বাড়িতে গিয়ে তাঁর সঙ্গে দেখাও করেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই অনন্ত বিধানসভা নির্বাচনের আগে নতুন রাজনৈতিক কৌশল তৈরি করছেন কিনা, তা নিয়ে জেলা রাজনীতিতে কৌতূহল তৈরি হয়েছে।