Babita Sarkar

নিয়োগে ‘বৈধতা’ নিয়ে প্রশ্ন! হাই কোর্টে গেলেন মন্ত্রীকন্যার জায়গায় চাকরি পাওয়া ববিতা

সম্প্রতি অভিযোগ উঠেছে, স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি)-এর কাছে আবেদন করার সময় ববিতার স্নাতকস্তরের শতকরা নম্বর বাড়িয়ে দেখানো হয়েছে। যার ফলে তাঁর ‘অ্যাকাডেমিক স্কোর’ বেড়ে গিয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ জানুয়ারি ২০২৩ ১১:৫২
Share:

আবার আলোচনার কেন্দ্রে ববিতা সরকার। ফাইল ছবি।

নিয়োগ-মামলায় দীর্ঘ লড়াইয়ের পর কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশে রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী পরেশচন্দ্র অধিকারীর মেয়ে অঙ্কিতা অধিকারীর চাকরিটি তিনি পেয়েছিলেন। সেই চাকরির ‘বৈধতা’ নিয়েই প্রশ্ন ওঠায় নিজেই কলকাতা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হলেন ববিতা সরকার।

Advertisement

সম্প্রতি অভিযোগ উঠেছে, স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি)-এর কাছে আবেদন করার সময় ববিতার স্নাতকস্তরের শতকরা নম্বর বাড়িয়ে দেখানো হয়েছে। যার ফলে তাঁর ‘অ্যাকাডেমিক স্কোর’ বেড়ে গিয়েছে। এ নিয়ে জটিলতা তৈরি হওয়ার পরেই ববিতা জানিয়েছিলেন, তিনি নিজেই বিষয়টি উচ্চ আদালতের নজরে আনবেন। সেই মতোই সোমবার হাই কোর্টে গেলেন স্কুলশিক্ষিকা। আদালত সূত্রে খবর, তাঁর আবেদন গ্রহণও করেছেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়।

বিচারপতি নির্দেশ দেন, ববিতার আবেদনের ভিত্তিতে এই মামলায় এসএসসি-কে যুক্ত করতে হবে। আগামী বুধবার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেছেন বিচারপতি।

Advertisement

এ প্রসঙ্গে আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘স্কুল সার্ভিস কমিশনের ভুল তথ্যের কারণে কারও চাকরি হয়ে থাকলে সমাজের কাছে তা আরও খারাপ।’’

সম্প্রতি এসএসসি-র কাছে জমা দেওয়া ববিতার আবেদনপত্রের একটি ছবি সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। সেটির সত্যতা আনন্দবাজার অনলাইন যাচাই করেনি। কিন্তু সেই আবেদনপত্রে দেখা যাচ্ছে, স্নাতক স্তরে ৮০০ নম্বরের মধ্যে ৪৪০ নম্বর পেয়েছেন ববিতা। অর্থাৎ, শতকরা হিসাবে ৫৫ শতাংশ। অভিযোগ, ‘ভুল’ সেখানেই! স্নাতকস্তরের প্রাপ্ত নম্বরের শতকরা হিসাব ৬০ শতাংশ বা তার বেশি উল্লেখ করা হয়েছে আবেদনপত্রে। যে কারণে ববিতার ‘অ্যাকাডেমিক স্কোর’ গণনায় ভুল হয়েছে। নিয়োগের দাবিতে আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত থাকা চাকরিপ্রার্থীদের একাংশের দাবি, এই অভিযোগ যদি সত্যি হয়, সে ক্ষেত্রে ববিতার ‘অ্যাকাডেমিক স্কোর’ ৩৩-এর বদলে কমে ৩১ হবে। এতে র‌্যাঙ্কিংয়েও অনেকটাই পিছিয়ে পড়বেন ববিতা! প্রসঙ্গত, চাকরিপ্রার্থীদের মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক, স্নাতকস্তর-সহ সব পর্যায়ের শিক্ষাগত যোগ্যতা (এডুকেশনাল কোয়ালিফিকেশন)-র উপর কিছু নম্বর ধার্য করা হয়। যাকে ‘অ্যাকাডেমিক স্কোর’ বলা হয়।

আবেদনপত্রে ‘ভুল’ তথ্যের বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পরেই তালিকায় ববিতার পিছনে থাকা অনামিকা রায় নামে এক চাকরিপ্রার্থী জানান, অভিযোগ যদি সত্যি হয়, তা হলে ওই চাকরিটি আসলে তাঁর পাওয়ার কথা। অনামিকার কথায়, ‘‘যদি অ্যাকাডেমিকে ২ নম্বর কমে যায়, তা হলে র‌্যাঙ্কও পিছিয়ে যাবে। মেরিট লিস্টে অন্তত ১৪ জনের পিছনে চলে যাওয়ার কথা। সে ক্ষেত্রে চাকরিটা তাঁর (ববিতা) কোনও ভাবেই প্রাপ্য নয়। ববিতা’দি থেকে শুরু করে আমার এবং আরও কয়েক জনের একই নম্বর রয়েছে। এ ক্ষেত্রে বয়সের ভিত্তিতে চাকরি মেলে। এই ভাবে দেখলে পরবর্তী প্রার্থী হিসাবে এই চাকরিটা আমারই পাওয়ার কথা। আমি চাই, চাকরিটা আমায় দেওয়া হোক।’’ অনামিকার স্বামী শুভজিৎ বিশ্বাসও শুক্রবার আনন্দবাজার অনলাইনকে বলেন, ‘‘গোটা বিষয়টিই আমরা দেখেছি। এই বিষয়টি নিয়ে আমরা আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করার কথা ভাবছি।’’

সেই সময় ববিতাও বলেছিলেন, ‘‘কমিশন দু’নম্বর বেশি দিয়েছে ভুল করে। কিন্তু প্রথম দিকে আমরা আমাদের প্রাপ্ত নম্বরই জানতাম না। কমিশনের প্রকাশিত তালিকা নিয়েই আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলাম। আমার মামলার উপর ভিত্তি করেই আদালত নম্বর বিভাজনের তালিকা প্রকাশ করার কথা বলে। নবম-দশম এবং দ্বাদশ-একাদশ শ্রেণির জন্য আলাদা নম্বর বিভাজন থাকে। সে ক্ষেত্রে নবম ও দশম শ্রেণির জন্য আমার নম্বর এই মুহূর্তে ঠিকই আছে।’’ পাশাপাশিই, তাঁর সংযোজন, ‘‘বিষয়টি যাতে বিচারপতির নজরে আনা হয়, তার জন্য বলেছি আমাদের আইনজীবীকে। আমার লড়াইটা এসএসসি কমিশনের অন্যায়ের বিরুদ্ধে। অতীতেও লড়েছি, আগামী দিনেও লড়ব। কোর্ট যা নির্দেশ দেবে, সেই অনুযায়ীই সব হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন