প্রথমে মদন মিত্র। তার পর ফিরহাদ (ববি) হাকিম। এ বার অরূপ বিশ্বাস।
এসএসকেএম হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির শীর্ষ পদে এ বার অরূপকে বসালেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ইঙ্গিতটা অবশ্য আগেই পাওয়া যাচ্ছিল। আনুষ্ঠানিক ঘোষণা হয় বৃহস্পতিবার।
মুখে ববি অবশ্য বলেছেন, হাসপাতাল দেখতে গিয়ে তাঁর উপরে চাপ পড়ে যাচ্ছিল। তাই দায়িত্ব থেকে সরানোর ব্যাপারে তিনি নিজেই একাধিক বার মুখ্যমন্ত্রীকে অনুরোধ জানিয়েছিলেন। কিন্তু হাসপাতালের অন্দরে এ নিয়ে নানা ধরনের জল্পনা শুরু হয়ে গিয়েছে।
মদনকে দায়িত্ব থেকে সরানো হয়েছিল আরও আগে, সারদা কাণ্ডের জেরে তাঁর মন্ত্রিত্ব যাওয়ার পরে। তার বেশ কিছু দিন আগে থেকেই অবশ্য ববি হাকিমের সঙ্গে যৌথ দায়িত্ব সামলাতে হয়েছে তাঁকে। মদন সরার পরে ওই দায়িত্বে ছিলেন একা ববিই। এ বার সেই একক দায়িত্ব বর্তাল অরূপের ওপরে।
জুনিয়র ডাক্তারদের সঙ্গে রোগীর বাড়ির লোকজনের গণ্ডগোল ঘিরে গত কয়েক দিন ধরেই অশান্ত এসএসকেএম। সে নিয়ে তিনি যে বিরক্ত, সে কথা প্রকাশ্যেই জানিয়েছেন মমতা। এমনকী, নিজে হাসপাতালে গিয়ে কর্তৃপক্ষকে পরিষেবার ক্ষেত্রে আরও তৎপর হওয়ারও নির্দেশ দিয়ে এসেছেন। তার ঠিক পরেই এমন সিদ্ধান্তে প্রশ্ন উঠেছে, তবে কি অরূপকেই এ ক্ষেত্রে বেশি নির্ভরযোগ্য মনে করছেন তিনি? ইতিমধ্যেই বাঙুর হাসপাতালের ভোল বদলে দিয়ে সুনাম কুড়িয়েছেন অরূপ। এ বার সঙ্গে যোগ হল রাজ্যের সেরা সরকারি হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির সভাপতির পদ। এ দিন দায়িত্ব পেয়ে তাঁর মন্তব্য, ‘‘আমি দলের অনুগত সৈনিক। আমাকে যে দায়িত্বই দেওয়া হবে তা নিষ্ঠার সঙ্গে পালনের চেষ্টা করব।’’
বহু বছর ধরে এসএসকেএম ছিল মদন মিত্রের খাস তালুক। তিনি নিজেও ওই এলাকারই লোক। তাই অনায়াসে দাপটের সঙ্গে এসএসকেএমে নিজের সাম্রাজ্য চালাতেন তিনি। রোগী ভর্তি থেকে শুরু করে যে কোনও ছোট-বড় ঘটনায় তাঁর ভূমিকাই ছিল অন্যতম। দায়িত্ব পাওয়ার পরে ববি হাকিমও ক্রমশ নিজস্ব প্রভাব তৈরি করতে শুরু করেছিলেন। হাসপাতাল কর্তাদের একাংশের মতে, মদন ও ববির গোষ্ঠীর মধ্যে মাঝেমধ্যেই ‘এলাকা দখল’ নিয়ে গোলমাল বাধছিল। কর্তারা মনে করছেন, সেই জটিলতা কাটাতেই আপাতত অরূপকেই ‘সেরা প্রার্থী’ হিসেবে মনে করেছেন মমতা।
বুধবারেই আলিপুর জেল থেকে হাসপাতালের অধিকর্তা মঞ্জু বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি লিখে প্রোগ্রেসিভ এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন-এর অফিস ঘর বন্ধ করার সিদ্ধান্ত জানিয়েছিলেন ওই ইউনিয়নের সভাপতি মদন। দায়িত্ব পেয়ে অরূপ গোড়াতেই হাসপাতালের হাল শক্ত করে ধরতে চেয়েছেন। শুধু তৃণমূল নয়, হাসপাতাল চত্বর থেকে সমস্ত রাজনৈতিক দলের ইউনিয়নের অফিস সরানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি।
সোমবার রাতে গোলমালের পরে হাসপাতালে ববিকে দেখা যায়নি। তার বদলে মঙ্গলবার এসএসকেএম-এর অবস্থা দেখতে যান অরূপ। তখন থেকেই গুঞ্জন শুরু হয়েছিল, এ বার ববির জায়গায় অরূপই আসতে চলেছেন। বৃহস্পতিবার সেই সিদ্ধান্তেই সরকারি সিলমোহর পড়ল।