National Education Policy

চার বছরে স্নাতক, মোদীর শিক্ষানীতি চালু হল রাজ্যে, শুরু করল কলকাতার এক খ্যাতনামা বিশ্ববিদ্যালয়

রাজ্যে জাতীয় শিক্ষানীতি চালু হবে কি হবে না, তা নিয়ে অনেক দিন ধরেই দোলাচল চলছে। একটি বিশেষ কমিটিও গড়েছে শিক্ষা দফতর। এরই মধ্যে জাতীয় শিক্ষানীতি মেনে চলার ঘোষণা করল রাজ্যের এক বিশ্ববিদ্যালয়।

Advertisement

পিনাকপাণি ঘোষ

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ মে ২০২৩ ১০:৫৮
Share:

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ দাবি করেছিলেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়েই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী জাতীয় শিক্ষানীতি তৈরি করেছেন। —ফাইল চিত্র।

কেন্দ্রীয় সরকারের নতুন জাতীয় শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে প্রথম থেকেই সরব হয়েছিল পশ্চিমবঙ্গ সরকার তথা রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল। জাতীয় শিক্ষানীতিকে ‘তুঘলকি’ বলে আখ্যা দিয়েছিলেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। ইতিমধ্যেই সেটি পর্যালোচনার জন্য বিশেষ কমিটিও গঠন করেছে শিক্ষা দফতর।

Advertisement

তার মধ্যেই কলকাতার খ্যাতনামা সেন্ট জ়েভিয়ার্স বিশ্ববিদ্যালয় জানিয়ে দিল, চলতি শিক্ষাবর্ষ থেকেই তারা জাতীয় শিক্ষানীতি মেনে পাঠক্রম চালু করবে। এ বছর থেকেই চালু হয়ে যাবে চার বছরের স্নাতক পাঠক্রম। তিন বছর পড়ার পরে দু’বছরের এমএ ডিগ্রির জন্যও পঠনপাঠন করা যাবে। আবার চার বছরে স্নাতক হয়ে এক বছরের এমএ কোর্সও থাকবে। কেউ চাইলে চার বছরে সাম্মানিক (অনার্স)-সহ স্নাতক হয়ে সরাসরি পিএইচডি-ও করতে পারবেন। ইতিমধ্যেই এই পাঠ্যক্রম সংক্রান্ত বিশদ নির্দেশ নিজেদের ওয়েবসাইটে তুলে দিয়েছে সেন্ট জ়েভিয়ার্স বিশ্ববিদ্যালয়।

প্রসঙ্গত, গত পঁচিশে বৈশাখ কলকাতায় এসে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ দাবি করেছিলেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়েই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এই জাতীয় শিক্ষানীতি তৈরি করেছেন। ঘটনাচক্রে, সেই শিক্ষানীতি মেনেই পাঠক্রম চালু করছে সেন্ট জ়েভিয়ার্স বিশ্ববিদ্যালয়।

Advertisement

জাতীয় শিক্ষানীতি নিয়ে দোলাচলের মধ্যেই এমন প্রশ্ন উঠেছিল যে, রাজ্য কি ধীরে ধীরে জাতীয় শিক্ষানীতি মেনে নেবে? গত মার্চ মাসে এই প্রসঙ্গে কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য। তিন বছরের পরিবর্তে জাতীয় শিক্ষানীতি মেনে এ রাজ্যে স্নাতক পাঠক্রম কি চার বছরেরই হবে? আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকেই কি চালু হবে নতুন নিয়ম? এই সমস্ত যাবতীয় প্রশ্ন এবং তৎসংক্রান্ত বিভ্রান্তি নিয়ে বিতর্কও তৈরি হয়েছিল। তখন শিক্ষামন্ত্রী বলেছিলেন, ‘‘এ নিয়ে কোনও কথা বলব না। চার বছরের স্নাতক কোর্সের বিষয়ে উপাচার্যদের নিয়ে কমিটি গঠন করব। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে এই নিয়ম কী ভাবে কার্যকর করা হতে পারে, তা নিয়ে সেই কমিটি মত দেবে। তার পরে এই বিষয় নিয়ে বলতে পারি।’’

এর পরে কমিটি তৈরিও হয়েছিল। মার্চের শেষ সপ্তাহেই ওই কমিটি তৈরি করে রাজ্য। ছয় সদস্যের কমিটির প্রধান করা হয়েছিল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুরঞ্জন দাসকে। এ ছাড়াও কমিটিতে রয়েছেন বাঁকুড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য দেবনারায়ণ বন্দ্যোপাধ্যায়, উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ওমপ্রকাশ মিশ্র, রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নির্মাল্যনারায়ণ চক্রবর্তী, রাজ্যের উচ্চশিক্ষা কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান কৌশিকী দাশগুপ্ত এবং কাউন্সিলের যুগ্ম সম্পাদক (শিক্ষা) মৌমিতা ভট্টাচার্য। ঠিক হয়েছিল, চার সপ্তাহ পর ওই বিশেষজ্ঞ কমিটি তাদের মতামত জানিয়ে উচ্চশিক্ষা দফতরকে রিপোর্ট পেশ করবে। সেই রিপোর্টের ভিত্তিতেই জাতীয় শিক্ষানীতি নিয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ করবে রাজ্য। নির্দিষ্ট সময় অনুযায়ী সেই রিপোর্ট পেশ করার সময় পেরিয়ে গিয়েছে। কিন্তু সেটি এখনও উচ্চশিক্ষা দফতরে পেশ করা হয়েছে কি না, সরকারি ভাবে তা জানা যায়নি। তবে ঘটনাচক্রে দেখা যাচ্ছে, কমিটির অভিমত জেনে রাজ্য কোনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ঘোষণার আগেই তা কার্যকর করার সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিল সেন্ট জ়েভিয়ার্স বিশ্ববিদ্যালয়। অন্তত তাদের নিজস্ব ওয়েবসাইট তেমনই বলছে।

সেন্ট জেভিয়ার্সের উপাচার্য ফেলিক্স রাজের সঙ্গে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে একাধিক বার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছে আনন্দবাজার অনলাইন। কিন্তু তিনি ফোন ধরেননি। পরে এ প্রসঙ্গে তাঁর বা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের তরফএ কোনও পদাধিকারীর বক্তব্য জানা গেলে এই প্রতিবেদনে তা উল্লেখ করা হবে।

প্রসঙ্গত, বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলি জাতীয় শিক্ষানীতি চালু করার সিদ্ধান্ত ইতিমধ্যেই নিয়ে নিয়েছে। বিরোধী শাসিত কিছু রাজ্যও সেই পথে হেঁটেছে। সেখানে দাঁড়িয়ে রাজ্যের পক্ষে উল্টো পথ নেওয়া কঠিন বলেই শিক্ষাজগতের সঙ্গে সক্রিয় ভাবে জড়িতদের একাংশ মনে করছেন। দেশের অন্যত্র চার বছরের অনার্স পাঠ্যক্রম চালু হয়ে গেলে সামঞ্জস্য রাখতে পশ্চিমবঙ্গেও তা চালু করা দরকার বলে আগেই জানিয়েছিলেন শিক্ষামহলের অনেকে। সূত্রের খবর, সেই অনুযায়ী রাজ্য সরকারও ইতিমধ্যেই ভাবতে শুরু করেছে যে, নতুন জাতীয় শিক্ষানীতির কোন কোন অংশ মেনে নেওয়া যায়। তা না করলে এ রাজ্যের পড়ুয়ারা ভবিষ্যতে সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে সমস্যায় পড়তে পারেন। তবে ‘মাল্টিপল এগ্‌জিট অ্যান্ড এন্ট্রি’ অর্থাৎ মাঝপথে পড়া ছেড়ে দিয়েও আবার শুরু করার সুযোগ সংক্রান্ত যে পদ্ধতির কথা কেন্দ্রের জাতীয় শিক্ষানীতিতে রয়েছে, তা মানা হবে কি না তা নিয়ে এখনও দ্বিমত রয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন