Calcutta High Court In Khejuri Double Death Case

দুর্ঘটনা বদলে গেল খুনের মামলায়! খেজুরির জোড়া মৃত্যুতে হাই কোর্টে প্রশ্নের মুখে রাজ্য, ভর্ৎসনা ও নির্দেশ

গত ১১ জুলাই মহরম উপলক্ষে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় খেজুরি থানার ভাঙনমারি গ্রামে। পরের দিন সকালে অনুষ্ঠানস্থলের অনতিদূরে দু’জনের দেহ উদ্ধার হয়। মৃতদের এক জনের নাম সুধীর পাইক, অন্য জন সুজিত দাস।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৯ অগস্ট ২০২৫ ২২:০২
Share:

দুই ময়নাতদন্তের রিপোর্ট দু’রকম! কলকাতা হাই কোর্টে প্রশ্নের মুখে রাজ্য। —প্রতীকী চিত্র।

একই দেহের ময়নাতদন্ত। জেলার হাসপাতালে তার রিপোর্ট একরকম, কলকাতার হাসপাতালে আর এরকম! কী ভাবে এটা সম্ভব? পূর্ব মেদিনীপুরের খেজুরিতে জোড়া মৃত্যুর দ্বিতীয় ময়নাতদন্তের রিপোর্ট নিয়ে বিস্মিত কলকাতা হাই কোর্ট। মঙ্গলবার বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষের মন্তব্য, ‘‘এই মামলা নিয়ে আমি খুবই বিরক্ত।” তাঁর পর্যবেক্ষণ, ময়নাতদন্তের প্রথম রিপোর্ট বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যুর কথা বলা হয়েছে। কিন্তু দ্বিতীয় রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, দেহে আঘাতের চিহ্ন ছিল।

Advertisement

গত ১১ জুলাই মহরম উপলক্ষে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় খেজুরি থানার ভাঙনমারি গ্রামে। পরের দিন সকালে অনুষ্ঠানস্থলের অনতিদূরে দু’জনের দেহ উদ্ধার হয়। মৃতদের এক জনের নাম সুধীর পাইক, অন্য জন সুজিত দাস। পরিবারের দাবি, দু’জনের শরীরে একাধিক আঘাতের চিহ্ন ছিল। যদিও অনুষ্ঠানের আয়োজকদের দাবি, বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু হয় তাঁদের। একই দাবি করে শাসকদল তৃণমূল। বিজেপির অভিযোগ, ধর্মীয় কারণে খুন হয়েছেন তাঁরা। ‘জোড়া খুনের’ অভিযোগে ১৩ জুলাই খেজুরিতে বন্‌ধ ডাকে বিজেপি-সহ ধর্মীয় সংগঠন। মিছিলে নেতৃত্ব দেন বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। ঘটনাক্রমে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে নিয়ে পুলিশ জানায়, বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়েই দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু পরিবার তা মানতে নারাজ। তারা আবার ময়নাতদন্তের আবেদন নিয়ে কলকাতা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিল।

বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষের একক বেঞ্চ ওই আবেদন খারিজ করে ময়নাতদন্ত করা চিকিৎসকের বক্তব্য রেকর্ড করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। ওই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে ডিভিশন বেঞ্চের দ্বারস্থ হয় দুই পরিবার। ডিভিশন বেঞ্চ পরিবারের আর্জি মেনে দ্বিতীয় বার ময়নাতদন্তের নির্দেশ দেয়। পাশাপাশি জানানো হয়, ওই মামলাটি শুনবে বিচারপতি ঘোষের একক বেঞ্চই।

Advertisement

দুই দেহের দ্বিতীয় বার ময়নাতদন্ত হয়েছে কলকাতার এসএসকেএমে। মঙ্গলবার সেই রিপোর্ট দুটি দেখে বিরক্তি প্রকাশ করেন বিচারপতি ঘোষ। তাঁর প্রশ্ন, কী ভাবে পূর্ব মেদিনীপুরের তাম্রলিপ্ত মেডিক্যাল কলেজ এবং এসএসকেএমে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট ভিন্ন হয়? বিচারপতি বলেন, ‘‘তবে কি জেলাগুলির ক্ষেত্রে ময়নাতদন্তের রিপোর্টে পার্থক্য থাকছে?’’ তিনি আরও বলেন, “মেদিনীপুরের মেডিক্যাল কলেজের (ময়নাতদন্তের) রিপোর্টের সঙ্গে এসএসকেএমের রিপোর্টের পার্থক্য রয়েছে। এ রকম কেন হবে? অনেক দূরবর্তী জেলার ক্ষেত্রেই এ রকম জিনিস দেখা যাচ্ছে।’’

এখানেই থামেননি বিচারপতি। তাঁর আরও প্রশ্নের মুখে পড়ে রাজ্য। বিচারপতির প্রশ্ন, ‘‘জেলার ফরেন্সিক আধিকারিকেরা কি অভিজ্ঞ নন? নাকি তাঁদের স্থানীয় ব্যক্তিদের উপর নির্ভর করতে হচ্ছে?” এর পর হাই কোর্টের নির্দেশ, সংশ্লিষ্ট মামলার তদন্তে উচ্চপদস্থ পুলিশকর্তাদের নিযুক্ত করতে হবে। রাজ্যের উদ্দেশে বিচারপতি ঘোষ বলেন, “আগে আপনারা বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়েছে ধরে নিয়ে তদন্ত করছিলেন। এখন তো খুনের ধারায় মামলা হবে! পুরো তদন্তের গতিপথ পরিবর্তন হয়ে গিয়েছে। ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক এবং তদন্তকারী আধিকারিকদের ভূমিকা এখন প্রশ্নের মুখে। প্রয়োজনে পদক্ষেপ করতে হবে।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement