Subhas Chandra Bose

Netaji Tablo: প্রজাতন্ত্র দিবসেই সুভাষ ট্যাবলো রাজ্যের

দিল্লির রাজপথের কুচকাওয়াজের জন্য রাজ্যের ট্যাবলোর বিষয়বস্তু ছিল সুভাষচন্দ্রের জীবন এবং স্বাধীনতা সংগ্রামে তাঁর ভূমিকা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৮ জানুয়ারি ২০২২ ০৫:৪২
Share:

আগামী সপ্তাহেই প্রজাতন্ত্র দিবস। তার প্রস্তুতি হিসাবে শীতের ভোরে কুচকাওয়াজের মহড়া।

গঙ্গাজল বাদ দিয়ে গঙ্গাপুজো হয় নাকি! যে বাংলা থেকে সুভাষচন্দ্র বসু অগ্নিপুরুষ হয়ে উঠেছিলেন, সেই বাংলারই সুভাষ-ট্যাবলো বাদ দিয়ে প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজ! এবং সেটা সুভাষচন্দ্রের ১২৫তম জন্মবার্ষিকীর সূচনায়? কেন্দ্রের এই পদক্ষেপের বিপরীতে হেঁটে কলকাতার রেড রোডে ২৬ জানুয়ারি সুভাষ-ট্যাবলো বার করার সিদ্ধান্ত নিল রাজ্য সরকার।

Advertisement

এ বছর সুভাষচন্দ্রের ১২৫তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ২৩ জানুয়ারিকে পরাক্রম দিবস হিসেবে ঘোষণা করেছে কেন্দ্র। কিন্তু সুভাষচন্দ্রকে স্মরণ করে রাজ্য সরকারের তৈরি ট্যাবলো প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজ থেকে বাতিল করে তারা সর্বস্তরে বিরূপ সমালোচনার মুখে পড়েছে। এমনকি এই নিয়ে মতভেদ প্রকট বিজেপিতেও। এই অবস্থায় রেড রোডে প্রজাতন্ত্র দিবসের সংক্ষিপ্ত অনুষ্ঠানে সুভাষ-ট্যাবলো বার করে দিল্লিকে জবাব দিতে চায় রাজ্য।

দিল্লির রাজপথের কুচকাওয়াজের জন্য রাজ্যের ট্যাবলোর বিষয়বস্তু ছিল সুভাষচন্দ্রের জীবন এবং স্বাধীনতা সংগ্রামে তাঁর ভূমিকা। আজাদ হিন্দ ফৌজ, মৈরাংয়ে ভারতের পতাকা উত্তোলন, রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে সুভাষচন্দ্রের সাক্ষাৎ-সহ সবই থাকার কথা ওই ট্যাবলোয়। কিন্তু কোনও এক ‘অজ্ঞাত’ কারণে তা বাতিল হয়েছে। কেন্দ্রের বক্তব্য, রাজ্যগুলি যত ট্যাবলোর প্রস্তাব দিয়েছিল, সব নেওয়া সম্ভব ছিল না। কিছু তো বাদ দিতেই হত। তা বলে সুভাষচন্দ্রের নামাঙ্কিত ট্যাবলোই বাদ! তা-ও আবার তাঁর ১২৫তম জন্মবার্ষিকীর শুরুতে! কেন? সদুত্তর নেই কারও কাছেই।

Advertisement

নবান্ন সূত্রের খবর: রাজ্যের সিদ্ধান্ত, পুরোপুরি সেই বিষয়বস্তু না-হলেও সুভাষচন্দ্রের জীবন এবং স্বাধীনতা সংগ্রামে তাঁর ভূমিকাই হবে রেড রোডে ২৬ জানুয়ারির ট্যাবলোর অন্যতম মূল বিষয়বস্তু। এক কর্তার কথায়, “দিল্লিতে পাঠানো ট্যাবলোটাই এখানে ব্যবহার করা হবে না। তবে বিষয়বস্তু হবে তার কাছাকাছি।”

এর আগে স্বাধীনতার ৭৫ বছর উপলক্ষে কেন্দ্রের বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কোনও প্রস্তাব দেওয়ার সুযোগ পাননি। তা নিয়ে বিভিন্ন মহলে প্রবল সমালোচনা হয়েছিল। দেশের জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে বাংলা এবং বাঙালির ভূমিকাকে অস্বীকার করা হচ্ছে কি না, উঠেছিল সেই প্রশ্ন। এ বার সুভাষ-ট্যাবলো বাতিলকে ঘিরে অনেকটা তেমনই বিতর্ক শুরু হয়েছে বিভিন্ন মহলে। বস্তুত, কেন্দ্র যখন জানাচ্ছে, প্রজাতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠান শুরু হবে ২৩ জানুয়ারি সুভাষচন্দ্রের জন্মদিবস থেকে, তখন রাজ্যের সুভাষ-ট্যাবলো নিয়ে তাদের অবস্থান মানানসই নয় বলে মনে করছেন অনেক প্রশাসনিক পর্যবেক্ষক। অনেক রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মনে করছেন, ২৬ জানুয়ারি সুভাষচন্দ্রকে নিয়ে কলকাতায় ট্যাবলো বার করার সিদ্ধান্ত কেন্দ্রের সঙ্গে রাজ্য সরকারের ‘মানসিকতা’র ফারাক বুঝিয়ে দেওয়ার পক্ষে যথেষ্ট।

কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সরব হয়েছে কংগ্রেস, সিপিএম-ও। বিষয়টি নিয়ে মতান্তর এ বার বিজেপি-তেও। বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ কেন্দ্রের ওই সিদ্ধান্ত সমর্থন করে রাজ্যকে কাঠগড়ায় তুলেছেন। কিন্তু বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি তথা ত্রিপুরা ও মেঘালয়ের প্রাক্তন রাজ্যপাল তথাগত রায় পশ্চিমবঙ্গের সুভাষ-ট্যাবলো প্রজাতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠানে প্রদর্শনের জন্য প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করেছেন। দিলীপবাবু রবিবার ভঙ্গিতে বলেছিলেন, ‘‘বেশ করেছে। ঠিক করেছে। দিল্লির লোককে এখানে ঢুকতে দেবে না, তা হলে ওরাই বা কেন দেবে?’’ সোমবার তিনি প্রশ্ন তোলেন, ‘‘(ট্যাবলোয়) নেতাজি আছে না, কী আছে, আমরা তো জানি না। প্রতি বছর এ রাজ্যের ট্যাবলো নিয়ে বিতর্ক হয়। ইচ্ছা করে কি এখান থেকে বিতর্ক করা হয়? ওখানকার বাছাই কমিটির কাছে সব তথ্য পাঠাতে হয়। মুখ্যমন্ত্রী এখন প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি
লিখছেন। কিন্তু আগে বিষয়টি জানানো হয়নি কেন?’’ সেই সঙ্গে দিলীপবাবুর মন্তব্য, ‘‘এই সরকারের অযোগ্যতার জন্যই পশ্চিমবঙ্গের মানুষ
হতাশ হচ্ছেন।’’

সুভাষচন্দ্রের কন্যা অনিতা বসু এবং ভ্রাতুষ্পুত্র চন্দ্র বসুর বক্তব্যের প্রসঙ্গ তোলামাত্রই দিলীপবাবুর কটাক্ষ, ‘‘তাঁরা কি সরকারের অঙ্গ? সরকারি অনুষ্ঠানের ব্যাপারে সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সরকারি পদ্ধতি মেনেই কাজ হবে।’’ অন্য দিকে, তথাগতবাবু টুইটে জানান, তিনি বঙ্গের ট্যাবলো প্রজাতন্ত্র দিবসে প্রদর্শনের জন্য প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করেছেন, যাতে সুভাষচন্দ্র তথা বাংলার অন্য স্বাধীনতা সংগ্রামীদের অবদান মানুষের চোখের সামনে আসে।

তথাগতবাবুর বক্তব্য নিয়ে দিলীপবাবুর প্রতিক্রিয়া, ‘‘টুইটের রাজনীতিতে আমরা বিশ্বাস করি না।’’

প্রশাসনিক সূত্রের খবর, প্রজাতন্ত্র দিবসে রাজ্যের অনুষ্ঠান হবে খুব বেশি হলে আধ ঘণ্টার। সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনী অনুষ্ঠান করবে। কলকাতা পুলিশ এবং রাজ্যের সশস্ত্র পুলিশের কুচকাওয়াজ থাকবে। কলকাতা পুলিশেরও একটি ট্যাবলো নামবে রাস্তায়। তবে স্কুলপড়ুয়াদের এ বার আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে না। ছোট সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের কথা আছে। তবে দর্শকমুক্তই থাকবে কর্মসূচি।

প্রশাসনিক সূত্রের খবর, ২৩ জানুয়ারি বেলা ১২টা ১৫ মিনিটে ময়দানে সুভাষ-মূর্তিতে মালা দেবেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই সময় সাইরেন বাজাবে পুলিশ। তবে ময়দান থেকে শ্যামবাজারে সুভাষচন্দ্রের মূর্তি পর্যন্ত পদযাত্রার কর্মসূচি কোভিডের কারণে বাতিল করা হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন