Mental Hospital

Pavlov: পাভলভে কেন অব্যবস্থা, বিদ্ধ স্বাস্থ্য ভবনও

স্বাস্থ্য সূত্রের খবর, মানসিক রোগের চিকিৎসার উৎকর্ষ কেন্দ্র পাভলভেই অব্যবস্থা ছিল সব থেকে বেশি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২০ জুন ২০২২ ০৭:৪৩
Share:

ফাইল চিত্র।

অবহেলা-অব্যবস্থার অভিযোগ তো আজকের নয়। সম্প্রতি দু’মাসে দু’দফার পরিদর্শনেও সেই ভয়ঙ্কর অব্যবস্থার ছবি উঠে এসেছে। প্রশ্ন আর অভিযোগ উঠছে, পাভলভ হাসপাতালে যে দীর্ঘ কাল ধরে অমানবিক পরিস্থিতি চলছে, সেই খবর কি স্বাস্থ্যকর্তাদের কাছে ছিল না? এর দায় কি এড়াতে পারে স্বাস্থ্য ভবন?

Advertisement

দু’টি ঘরে ১৩ জন মহিলা আবাসিককে ‘বন্দি’ করে রাখা, অন্য আবাসিকদের নোংরা বাসনপত্রে আধপেটা খেতে দেওয়ার মতো বিভিন্ন ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পরে এই প্রশ্ন তুলছেন চিকিৎসক মহলের একাংশও। যদিও স্বাস্থ্যকর্তাদের দাবি, ‘‘তদন্ত হয়েছে। শো-কজ়ও করা হয়েছে। যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

এই আশ্বাসের পরেও প্রশ্ন উঠছে, দিনের পর দিন এমন ভয়ঙ্কর অবস্থা চলা সত্ত্বেও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজর ছিল না কেন? এক স্বাস্থ্যকর্তা বলেন, ‘‘রাজ্যে মানসিক স্বাস্থ্যের পরিকাঠামো উন্নয়নে জোর দেওয়া হয়েছে। সব মানসিক হাসপাতালে বিভিন্ন খাতে টাকা বরাদ্দ করা হচ্ছে। তার পরেও কিছু জায়গায় এমন অব্যবস্থার অভিযোগ আসছিল।’’

Advertisement

স্বাস্থ্য শিবির সূত্রের খবর, বছর চারেক আগে মানসিক হাসপাতালের রোগীদের প্রেসক্রিপশন অডিট করার জন্য কমিটি তৈরি করেছিল স্বাস্থ্য দফতর। সেই কমিটির প্রতিনিধিরা পাভলভ-সহ বিভিন্ন হাসপাতাল ঘুরে হতবাক হয়ে গিয়েছিলেন। তাঁদের পর্যবেক্ষণ ছিল, সর্বত্রই পরিষেবার মান কমবেশি খারাপ। সেই সময়েও রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছিল, পাভলভ-সহ কয়েকটি হাসপাতালের অন্তর্বিভাগে প্রতিদিন চিকিৎসকেরা রাউন্ড দেন না। রোগীদের প্রেসক্রিপশনে বার বার ‘রিপিট’ কথাটি লেখা হচ্ছে। প্রশ্ন উঠছে, রোগীকে নির্দিষ্ট সময় অন্তর পরীক্ষা না-করলে নতুন ওষুধ বা অন্য কোনও পরামর্শ লেখা হবে কী করে? অভিযোগ, তার বদলে ভর্তির সময় যে-প্রেসক্রিপশন তৈরি হয়েছিল, সেটাই চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে। হাসপাতালে যথেষ্ট সংখ্যায় সুগার, রক্তচাপ মাপার যন্ত্র, থার্মোমিটার, অক্সিমিটার নেই। রোগীদের সুগার বা হিমোগ্লোবিন নিয়মিত পরীক্ষা হয় না।

ওই কমিটির সদস্য, মনোরোগের চিকিৎসক রঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘মানসিক হাসপাতালগুলি কোনও না কোনও মেডিক্যাল কলেজের সঙ্গে যুক্ত। আমাদের প্রস্তাব ছিল, মানসিক হাসপাতালের বহির্বিভাগ থেকে চিকিৎসকদের তুলে নিয়ে সংশ্লিষ্ট মেডিক্যাল কলেজে পাঠানো হোক। কারণ, অনেক চিকিৎসক মাসে মাত্র তিন দিন বহির্বিভাগে যান। আর ওয়ার্ডে রাউন্ড দেন না বলেই দীর্ঘদিন একই প্রেসক্রিপশন চলতে থাকে। ন্যূনতম ল্যাবরেটরি পরিষেবার বন্দোবস্ত রাখতেও বলা হয়েছিল।’’

স্বাস্থ্য সূত্রের খবর, মানসিক রোগের চিকিৎসার উৎকর্ষ কেন্দ্র পাভলভেই অব্যবস্থা ছিল সব থেকে বেশি। অভিযোগ, ডায়েট কমিটি না-থাকায় সুগারের রোগীরা রুটি পেতেন না। কড়া ডোজ়ের ওষুধের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে খাবারের তালিকা তৈরির কোনও নিয়ম বা ব্যবস্থা ছিল না। সন্ধ্যার মধ্যেই দেওয়া হত রাতের খাবার। তা-ও যথেষ্ট নয়। পাভলভ জুড়েই অব্যবস্থা। পোশাক, বিছানা নোংরা। ছারপোকা, পিঁপড়েতে ভর্তি।

এ দিকে, রবিবার পাভলভের এক আবাসিককে ওয়ার্ডে দেখতে না-পেয়ে হইচই পড়ে য়ায়। খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, তিনি বাগানে পায়চারি করছেন। ধরতে গেলে তিনি সোজা গাছের মগডালে উঠে পড়েন। পরে দমকল এসে তাঁকে নামায়। সুপার গণেশ প্রসাদ বলেন, ‘‘এ-রকম মাঝেমধ্যেই হয়। তবে কেউ হাসপাতাল চত্বরের বাইরে বেরোতে পারেন না।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তেফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন