Illegal Arms

কাঁকিনাড়া থেকে কি পিস্তল যেত বাংলাদেশে জামাত জঙ্গিদের হাতে?

সোমবার সেই মালদহে সূত্র ধরেই এই অস্ত্র কারখানার হদিশ পান কলকাতা পুলিশের স্পেশ্যাল টাস্ক ফোর্সের (এসটিএফ) গোয়েন্দারা। কলকাতা পুলিশের এক শীর্ষকর্তা বলেন, “আমরা খবর পেয়েছিলাম, মালদহ থেকে জাল নোট এনে এখানে পরখ করে দেখবে এক জাল নোট কারবারি। সেই সূ্ত্র ধরেই কালিয়াচকের শুকু শেখকে পাকড়াও করা হয়।”

Advertisement

সিজার মণ্ডল

শেষ আপডেট: ৩১ জুলাই ২০১৮ ১৫:৩০
Share:

কাঁকিনাড়ার সেই অস্ত্র কারখানা।

কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে কি কেউটে খুঁজে পাচ্ছেন গোয়েন্দারা? প্রথমে সন্ধান মিলল জাল নোটের কারবারের। সেখান থেকে হদিশ বেআইনি অস্ত্র কারখানার। সে কারখানাতেও আবার সম্পূর্ণ অস্ত্র তৈরি হয় না, সেটা হয় বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী আর একটি জায়গায়। সেখান থেকেই অস্ত্র যেত বাংলাদেশে।

Advertisement

বস্তুত, মুঙ্গের থেকে উত্তর ২৪ পরগনার কাঁকিনাড়া, সেখান থেকে মালদহের কালিয়াচক, সেখান থেকে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশের চাঁপাই নবাবগঞ্জ। বেআইনি অস্ত্রের এই নয়া রুটের সন্ধান পেয়ে কার্যত তাজ্জব হয়ে গিয়েছেন গোয়েন্দারা। এত দিন জামাত জঙ্গিদের মদতে বাংলাদেশ থেকে এই একই পথে আসছিল জাল নোট। এখন সেই একই ফিরতি পথে জাল নোট কারবারিদের হাত ধরে অস্ত্র যাচ্ছে বাংলাদেশে। গোয়েন্দাদের সন্দেহ, এই লেনদেনের পিছনে হাত রয়েছে জামাত জঙ্গিদের।

এসটিএফ সূত্রে খবর, এই কারখানায় তৈরি পিস্তলের ৮০ শতাংশই যেত বাংলাদেশে। আর সেই কারণেই মালদহ জেলার কালিয়াচকে বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী একটি গ্রামে তৈরি করা হয়েছিল আর একটি ইউনিট। কাঁকিনাড়া থেকে অর্ধেক তৈরি এই অস্ত্র সোজা চলে যেত কালিয়াচকে। সেখানে সেই অস্ত্রের কাঠামোর সঙ্গে বাকি যন্ত্রাংশ জুড়ে সেটাকে সম্পূর্ণ করা হত। সেখানেই পালিশ করে ব্যবহারের উপযুক্ত করা হত।

Advertisement

সোমবার সেই মালদহে সূত্র ধরেই এই অস্ত্র কারখানার হদিশ পান কলকাতা পুলিশের স্পেশ্যাল টাস্ক ফোর্সের (এসটিএফ) গোয়েন্দারা। কলকাতা পুলিশের এক শীর্ষকর্তা বলেন, “আমরা খবর পেয়েছিলাম, মালদহ থেকে জাল নোট এনে এখানে পরখ করে দেখবে এক জাল নোট কারবারি। সেই সূ্ত্র ধরেই কালিয়াচকের শুকু শেখকে পাকড়াও করা হয়।”

আরও পড়ুন, নিজের দেশেই উদ্বাস্তু ৪০ লক্ষ, বাঙালি খেদাও চলছে, তোপ মমতার

গোয়েন্দাদের অবাক করে দিয়ে সেই শুকুর কাছ থেকে জাল নোটের সঙ্গে পাওয়া যায় ৪০টি অর্ধেক তৈরি পিস্তল। তাঁকে জেরা করেই প্রথমে হদিশ মেলে দুই অস্ত্র কারবারি আমজাদ রায়ান এবং আবদুল্লা। এদের কাছ থেকে খোঁজ মেলে কাঁকিনাড়ার অস্ত্র কারখানার।

এসটিএফের এক শীর্ষকর্তা জানিয়েছেন, প্রায় সাত মাস ধরে কাঁকিনাড়ায় এই অস্ত্র কারখানা চালাচ্ছিল এরা। এই কারখানায় তল্লাশি চালিয়ে একটি ডায়েরির হদিশ পাওয়া গিয়েছে। সেখান থেকেই জানা যায়, এখানে তৈরি অস্ত্রর প্রায় পুরোটাই চলে যেত বাংলাদেশে। এসটিএফের গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন, গত কয়েক মাসে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র তৈরি করা হয়েছে এই কারখানায়। এক গোয়েন্দা বলেন, “ডায়েরি থেকে জানা গিয়েছে, মাসে প্রায় ৫০০টি পিস্তল তৈরি করা হত এখানে।”


উদ্ধার হওয়া অস্ত্র।

আর সেখান থেকেই উঠে এসেছে প্রশ্ন, এই বিপুল পরিমাণ অস্ত্র কারা কিনছে?

এক গোয়েন্দা বলেন,“ছোটখাট দুষ্কৃতীদলের পক্ষে এত অস্ত্র একসঙ্গে কেনা প্রায় অসম্ভব। তাই এরা যখন এত অস্ত্র নিয়মিত মালদহে পাঠাতো, তার থেকে এটা অনুমান করা যায়, এদের ক্রেতা কোনও বড় গোষ্ঠী।”

গোয়েন্দারা ধৃতদের জেরা করে জানতে পেরেছেন, এরা তিন থেকে পাঁচ হাজার টাকায় এই ৯ মিমি এবং ৭.৬৫ মিমি বোরের পিস্তলগুলি পাইকারি হারে বিক্রি করত তারা। এক গোয়েন্দাকর্তা বলেন, “অস্ত্রের দাম কম রাখতে এবং ঝুঁকি কমাতে মুঙ্গেরের অস্ত্র কারবারিরা ইদানীং নয়া পদ্ধতি নিয়েছে। তারা অস্ত্রের কারিগরদের এখানে নিয়ে এসে অস্ত্র বানাচ্ছে। শুধু তা-ই নয়। এরা এক জায়গায় গোটা অস্ত্র বানাচ্ছে না। এক জায়গায় কাঠামো, কোথাও স্প্রিং, কোথাও ট্রিগার তৈরি হচ্ছে। সেগুলি আবার একটি নির্দিষ্ট জায়গায় জোড়া লাগানো হচ্ছে।”

আরও পড়ুন, সুখবর! রাজ্য সরকারি কর্মীদের ২০১৯ থেকেই বেতন বৃদ্ধির ইঙ্গিত

ধৃতেরা যেহেতু বাংলাদেশে অস্ত্র সরবরাহ করত, তাই সীমান্তবর্তী গ্রামে অ্যাসেম্বল বা জোড়া লাগানোর কারখানা করেছিল। যাতে খুব সহজে ব্যবহারের উপযুক্ত অস্ত্র সোজা ক্রেতাদের হাতে তুলে দেওয়া যায়।

কলকাতা পুলিশ সূত্রে খবর, মালদহের সেই কারখানা চিহ্নিত করা হয়েছে। কিন্তু সেখানে যারা এই কারবারে যুক্ত ছিল তারা ফেরার।

এই অস্ত্র কারখানার বাংলাদেশ যোগ গোয়েন্দাদের ভাবাচ্ছে। তাঁদের সন্দেহ, এই অস্ত্র বাংলাদেশের কোনও জঙ্গি গোষ্ঠীর হাতে যেত। সেই সঙ্গে অসমের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক সমীকরণ আরও ভাবাচ্ছে গোয়েন্দাদের। ২০১২ সালে অসমে বোরো-মুসলিম অশান্তিকে কাজে লাগিয়েই জমি শক্ত করেছিল জামাত-উল-মুজাহিদিন। এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ঘুরে সেই অস্ত্র আবার অসম এবং সীমান্ত লাগোয়া পশ্চিমবঙ্গেও পৌঁছতে পারে আশঙ্কা গোয়েন্দাদের।

নিজস্ব চিত্র।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন