এভারেস্টে বিপর্যয়

উৎকণ্ঠা বাড়িয়ে এখনও নিখোঁজ দুই

দুপুরের স্বস্তি ফের উদ্বেগে বদলে গেল সন্ধেয়। এভারেস্টে চার বাঙালি অভিযাত্রীর খোঁজ মিলেছে বলে রাজ্য সরকার ঘোষণা করার পরেও নতুন অনিশ্চয়তা। একাধিক সূত্র দাবি করছে এখনও দু’জনের খোঁজ নেই। ব্যারাকপুরের গৌতম ঘোষ ও দুর্গাপুরের পরেশ নাথ।

Advertisement

তিয়াষ মুখোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৩ মে ২০১৬ ০৩:৫৪
Share:

উৎকণ্ঠা বাড়িয়ে এখনও পাহাড়ের বরফ ঢালে লড়ছেন এঁরা চার জন। সময় গড়াচ্ছে, আশঙ্কা বাড়ছে। রবিবার রাতের শেষ খবর বলছে, এখনও নিখোঁজ পরেশ ও গৌতম (নীচে)। সুনীতা ও সুভাষকে (ওপরে) নীচে নামানোর চেষ্টা চলছে। অপেক্ষায় পর্বতারোহী মহল।

দুপুরের স্বস্তি ফের উদ্বেগে বদলে গেল সন্ধেয়। এভারেস্টে চার বাঙালি অভিযাত্রীর খোঁজ মিলেছে বলে রাজ্য সরকার ঘোষণা করার পরেও নতুন অনিশ্চয়তা। একাধিক সূত্র দাবি করছে এখনও দু’জনের খোঁজ নেই। ব্যারাকপুরের গৌতম ঘোষ ও দুর্গাপুরের পরেশ নাথ।

Advertisement

তুষারধস আর ভূমিকম্প— পরপর দু’বছর ধাক্কা খাওয়ার পর এভারেস্ট অভিযানের রুট খুলেছিল এই বছরই। কিন্তু সেই আনন্দ ম্লান হয়ে যাচ্ছে মৃত্যুমিছিলের আশঙ্কায়। ভারতীয় সেনার একটি দল রবিবার শৃঙ্গ ছুঁয়ে নামার পর জানাচ্ছে, এভারেস্ট শৃঙ্গের আশপাশটা এখন যেন মৃত্যুফাঁদ। ১৯৯৬ সালের ১০ মে তুষারঝড়ের দাপটে খোওয়া গিয়েছিল আট জন বিদেশি অভিযাত্রীর প্রাণ। এ বছরও দেশি-বিদেশি মিলিয়ে প্রায় ৩০ জন অভিযাত্রী বিপদের মুখে আটকে রয়েছেন। তাঁদের মধ্যেই ছিলেন চার বাঙালি। দু’জনের খোঁজ মিলেছে। বারাসতের সুনীতা হাজরা এবং বাঁকুড়ার সুভাষ পাল।

শুক্রবার চার নম্বর ক্যাম্প থেকে শৃঙ্গের পথে চূড়ান্ত আরোহণ শুরু করেছিলেন চার জনেই। তাঁদের
খবর জানতে রবিবার দিনভর টেলিভিশনের পর্দা থেকে চোখ সরেনি উৎকণ্ঠিত পরিবারের। বিকেলে যুবকল্যাণ দফতরের পর্বতারোহণ শাখার উপদেষ্টা উজ্জ্বল রায় জানান, চার জনকেই উদ্ধার করে ক্যাম্প ফোরে আনা হয়েছে। একই কথা সাংবাদিক বৈঠকে জানান বিধায়ক অরূপ বিশ্বাসও।

Advertisement

কিন্তু সেই খুশি বেশি ক্ষণ স্থায়ী হয়নি। রবিবার সন্ধেয় এভারেস্ট বেসক্যাম্প থেকে ‘হিমালয়ান রেসকিউ অ্যাসোসিয়েশন’ (এইচআরএ) দাবি করেছে, গৌতম ঘোষ ও পরেশ নাথকে খুঁজে পাওয়া যায়নি শনিবার রাত থেকেই। পিটিআই-এর মতো সংবাদ সংস্থাও সেই কথাই জানিয়েছে।

কিন্তু রবিবার দুপুর পর্যন্ত কাঠমান্ডুর পর্বতারোহণ আয়োজক সংস্থার তরফে যে জানানো হয়েছিল চার জনকেই উদ্ধার করা গিয়েছে, সেই খবর কি তবে ভুল ছিল? ফাঁক থেকে গিয়েছিল যোগাযোগে? সেই তথ্যের ভিত্তিতেই তো সরকারি ভাবে ঘোষণা করা হয়েছিল উদ্ধারের খবর। দানা বাঁধছে অজস্র প্রশ্ন।

এইচআরএ-র বক্তব্য, সুনীতা ও সুভাষকে ক্যাম্প ফোর থেকে নামানোর চেষ্টা করছেন শেরপারা। তাঁদের শারীরিক অবস্থা বেশ খারাপ। তুষার ক্ষতে (ফ্রস্ট বাইট) আক্রান্ত হয়েছেন তাঁরা। একই ভাবে আক্রান্ত তাঁদের সঙ্গী শেরপাও। ফলে স্বাভাবিক ভাবেই খুব শ্লথ গতিতে নীচে নামার চেষ্টা করছেন তাঁরা। আর এই খবরটাই আশঙ্কার পারদ চড়াচ্ছে। এভারেস্ট বেসক্যাম্প থেকে পর্বতারোহী দেবরাজ দত্ত বললেন, ‘‘বড় দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে উঠছে অক্সিজেনের হিসেব।’’ তিনটি বা চারটি সিলিন্ডারে শুক্রবার সন্ধের পর থেকে ৪৮ ঘণ্টারও বেশি সময় কী ভাবে রয়েছেন অভিযাত্রীরা— অঙ্ক মেলাতে পারছেন না একাধিক
সাত-হাজার মিটার শৃঙ্গ ছোঁয়া দেবরাজ। ১৯ তারিখ শৃঙ্গ ছোঁয়ার পর শনিবার বিকেলেই বেসক্যাম্পে নেমে এসেছেন তিনি।

একই উৎকণ্ঠার সুর হিমালয়ান নেচার অ্যান্ড অ্যাডভেঞ্চার ফাউন্ডেশনের প্রোগ্রাম কোঅর্ডিনেটর অনিমেষ বসুর গলায়। বললেন, ‘‘এখন যা পরিস্থিতি, তাতে প্রতিটা মুহূর্ত গুরুত্বপূর্ণ। আট হাজার মিটার উচ্চতায় যত সময় গড়াচ্ছে, ততই বাড়ছে ভয়। তুষার ক্ষত এড়ানো তো অসম্ভব, আরও অনেক রকম উচ্চতা-জনিত অসুস্ততায় আক্রান্ত হতে পারেন আরোহীরা।’’ তিনি জানালেন, এই বছরের যত এভারেস্ট অভিযান হওয়ার কথা ছিল, সবই প্রায় শেষ হয়েছে। আবহাওয়া খারাপ হতে শুরু করেছে। নীচে নেমে গিয়েছেন অভিযাত্রী ও শেরপারা। এই কারণে এখন ওপরের ক্যাম্পে বিপদ হলেও চট করে শেরপা পাঠিয়ে উদ্ধারকাজ শুরু করা বেশ কঠিন।

কিন্তু কোনও প্রাকৃতিক দুর্যোগ ছাড়াই এত বড় বিপদের মুখে পড়ল কেন অভিযাত্রী দল? প্রথম এভারেস্ট ছোঁয়া অসামরিক বাঙালি আরোহী বসন্ত সিংহরায় বলছেন, ‘‘প্রত্যেক অভিযাত্রীকে নিজের শারীরিক সক্ষমতা, প্রতিকূলতা সহ্য করার ক্ষমতা ভাল করে জানতে হবে। নইলে দুর্ঘটনার আশঙ্কা থেকেই যায়।’’ অনিমেষবাবুর অভিযোগ: যতটা তৎপর ভাবে শৃঙ্গ আরোহণ আয়োজন করে কাঠমান্ডুর সংস্থাগুলি, ততটা পেশাদারিত্ব উদ্ধারকাজে দেখানো হয় না। বিপদ ঘটে যাওয়ার পরে নড়েচড়ে বসে সব সময় লাভ হয় না।

এই মুহূর্তে কাঠমান্ডুতে রয়েছেন রাজ্য সরকারের প্রতিনিধি, পর্বতারোহী দীপঙ্কর ঘোষ। রয়েছেন সুনীতা হাজরার পরিবারের তিন জন সদস্য। তাঁদের তরফে কিংশুক চট্টোপাধ্যায় জানালেন, যে কোনও কিছুর বিনিময়ে যাতে দ্রুত উদ্ধারকাজ এগোয়, সেটাই নিশ্চিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। লুকলায় একটি হেলিকপ্টার ইতিমধ্যেই পৌঁছে গিয়েছে। অভিযাত্রীরা ক্যাম্প টু-র কাছাকাছি পৌঁছতে পারলেই সঙ্গে সঙ্গে কাঠমান্ডু উড়িয়ে আনা হবে তাঁদের।

ছ’জন শেরপাকে নিয়ে ধৌলাগিরি বেসক্যাম্প পৌঁছেছেন আর এক পর্বতারোহী দেবদাস নন্দী। প্রায় সাড়ে সাত হাজার মিটার উচ্চতা থেকে রাজীব ভট্টাচার্যের দেহ নামিয়ে আনবেন তাঁরা। ১৯ তারিখ শৃঙ্গ ছুঁয়ে নেমে আসার পথে মৃত্যু হয় রাজীবের।

চরম প্রতিকূল পরিস্থিতিতে বরফরাজ্যে লড়ছেন অভিযাত্রীরা। ভাল খবর আসুক, অপেক্ষা ছাড়া আর কিছুই নেই অসহায় সমতলে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন