মেয়ে বলে স্বীকৃতি চেয়ে আর্জি মেয়েদের দিনে

নারী ও শিশুকল্যাণ দফতরের ট্রান্সজেন্ডার ডেভেলপমেন্ট বোর্ডেরও সদস্য তিনি। কিন্তু বাবার মেয়ে হিসেবে নিজেকে তুলে ধরতে তিনি কতটা নারী, তার প্রমাণ দিতে হচ্ছে চল্লিশোর্ধ্ব রঞ্জিতাকে।

Advertisement

ঋজু বসু

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ মার্চ ২০১৮ ০৪:৩২
Share:

সমাজকর্মী: রঞ্জিতা সিন্হা।

নারীত্বের পরীক্ষা!

Advertisement

এত বছর লড়াইয়ের পরেও এমন ঘটবে ভাবেননি তিনি। কন্যা হিসাবে প্রয়াত বাবা, কলকাতা পুলিশের অফিসার রামচন্দ্র সিন্‌হার পেনশনের অধিকার চেয়ে এ বার পরীক্ষার মুখে পড়েছেন রূপান্তরকামী নারী তথা সমাজকর্মী রঞ্জিতা সিন্হা।

নারী ও শিশুকল্যাণ দফতরের ট্রান্সজেন্ডার ডেভেলপমেন্ট বোর্ডেরও সদস্য তিনি। কিন্তু বাবার মেয়ে হিসেবে নিজেকে তুলে ধরতে তিনি কতটা নারী, তার প্রমাণ দিতে হচ্ছে চল্লিশোর্ধ্ব রঞ্জিতাকে। পুলিশের তরফে তাঁর কাছে লিঙ্গ রূপান্তর সংক্রান্ত অস্ত্রোপচারের (এসআরএস) নথি চাওয়া হয়েছে। আর পুলিশ কমিশনারের চিঠিতে ডাক্তারি শংসাপত্র দেখিয়ে রঞ্জিতাকে রূপান্তরকামী বা ট্রান্সজেন্ডার কন্যা হিসেবে প্রমাণ দিতে বলা হয়েছে। স্বরাষ্ট্র দফতরের এক কর্তার দাবি, ‘‘শুধু অবিবাহিত বা নির্ভরশীল মেয়েরাই বাবার পেনশন পান। ওঁর কাছে তাই নারীত্বের প্রমাণ চাইছি।’’

Advertisement

২০১৪-য় সুপ্রিম কোর্টের নালসা রায়ে (ন্যাশনাল লিগ্যাল সার্ভিসেস অথরিটি বনাম ভারত সরকার মামলার রায়) বলা হয়েছে, পুরুষ, মহিলা বা তৃতীয় লিঙ্গের একজন হিসেবে নিজের লিঙ্গ নির্ণয় ব্যক্তির মৌলিক অধিকার। সর্বোচ্চ আদালতের মতে, লিঙ্গগত পরিচয় মননগতও হতে পারে। শরীরে কাটাছেঁড়া, যোগবিয়োগ দরকার নেই। রঞ্জিতাও বলছেন, ‘‘অস্ত্রোপচার করাবই না। না-করিয়েও কম নারী নই আমি।’’ নালসা মামলার অন্যতম আবেদনকারী তথা বলিউডের অভিনেত্রী, নৃত্যশিল্পী লক্ষ্মীনারায়ণ ত্রিপাঠী রীতিমতো ক্ষুব্ধ। মুম্বই থেকে আনন্দবাজারকে বলেন, ‘‘এ সব ডাক্তারি প্রমাণ চাওয়া সুপ্রিম কোর্টের রায়ের অপমান। নালসা রায় কী, পুলিশ সেটা জানে?’’

রঞ্জিতার সুহৃদ তথা হাইকোর্টের আইনজীবী ঐন্দ্রিলা মুখোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘নারীত্বের প্রমাণে এখনও জন্ম বা পিতৃপরিচয়ের নথিই যথেষ্ট।’’ কিছু দিন আগেই নারী পরিচয়ে পাসপোর্টের আর্জি জানিয়ে রূপান্তরকামী নারী সঙ্গীতা কলকাতায় কার্যত ঘাড়ধাক্কা খেয়েছিলেন। এখন সমাজকর্মী রঞ্জিতার বিড়ম্বনায় অনেকের প্রশ্ন, অপরিচিত রূপান্তরকামীদের তাহলে কী হবে? ট্রান্সজেন্ডার ডেভলপমেন্ট বোর্ডের চেয়ারপার্সন তথা নারী ও শিশুকল্যাণ মন্ত্রী শশী পাঁজার বক্তব্য, ‘‘রূপান্তরকামীদের পরিচয় নির্ণয়ে নালসা রায়ই এখনও পর্যন্ত শেষ কথা।’’ রঞ্জিতার লিঙ্গপরিচয় নিয়ে পুলিশ প্রশ্ন করলে সাহায্যের আশ্বাস দিচ্ছেন মন্ত্রী।

গত দু’দশক ধরে রূপান্তরকামীদের অধিকারের লড়াইও মেয়েদের লড়াইয়ের বন্ধনীভুক্ত। কলকাতায় নারী অধিকার রক্ষা আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত সোমা মারিক, রত্নাবলী রায়েরাও মনে করেন, ডাক্তারি পরীক্ষায় নারীত্বের মাপকাঠি নির্ণয় মেয়েদের অপমান। রূপান্তরকামীদের সঙ্গে নিয়েই আজ, বৃহস্পতিবার নারী দিবসের কর্মসূচি ঠিক করেছেন সোমা। আর মেয়েদের দিনে মেয়ে হওয়ার স্বীকৃতির অপেক্ষায় রঞ্জিতা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন