ব্যাঙ্কের লাইনে পথনাটিকা

নাবালিকা বিয়ে নয়, ভিড়কে বোঝাল ছাত্রীরা

ব্যাঙ্কের সামনে লম্বা লাইন। এক-এক জন তিন-চার ঘণ্টা করে দাঁড়িয়ে। হঠাৎই স্কুলের পোশাক পরে কতগুলো ছেলেমেয়ে এসে হাজির।

Advertisement

বিমান হাজরা

জঙ্গিপুর শেষ আপডেট: ১৮ নভেম্বর ২০১৬ ০৩:৪৮
Share:

ব্যাঙ্কের সামনে লম্বা লাইন।

Advertisement

এক-এক জন তিন-চার ঘণ্টা করে দাঁড়িয়ে। হঠাৎই স্কুলের পোশাক পরে কতগুলো ছেলেমেয়ে এসে হাজির।

পাশেই জোতকমল হাইস্কুল। ওরা সেখান থেকেই এসেছে, সন্দেহ নেই। এই ভরদুপুরে ওরাও টাকা তুলতে লাইন দেবে নাকি? লাইনে দাঁড়ানো বড়রা যখন এ সব সাত-পাঁচ ভাবছেন, হঠাৎই খুদেগুলো শুরু করে দিল নাটক। যার পোশাকি নাম ‘পথনাটিকা’।

Advertisement

‘লাইনটা একটু দেখিস ভাই’ বলে এগিয়ে গেলেন সম্মতিনগরের রমজান শেখ। গুটিগুটি পায়ে সাবির মণ্ডল। ব্যাজার মুখে দাঁড়িয়ে থাকা আকিলা বিবি। আরও কত জন। লাইনে যা বকরবকর চলছিল, থিতিয়ে এল। সব ক’টা চোখ একদৃষ্টে তাকিয়ে। নাটকের শুরুতেই মেয়ের বিয়ে ঠিক করা নিয়ে বাবা-মায়ের ঝগড়া। টোটোচালক বাবা চান অষ্টম শ্রেণিতে পড়া বছর চোদ্দোর মেয়েকে বিয়ে দিতে। আর তেরো বছর বয়সে বিয়ে হয়ে শ্বশুরবাড়ির হেঁশেল ঠেলতে চলে আসা মা চান, মেয়ে এখন পড়াশোনা করুক। বিয়ে পরে দেওয়া যাবে। এই নিয়ে টানাপড়েনে মেয়ের স্কুলে যাওয়া বন্ধ। খবর পেয়ে বান্ধবীরা বাড়িতে ডেকে আনে স্কুলের দিদিমণিকে। তাঁরা বোঝান, নাবালিকার বিয়ে কতখানি বিপজ্জনক। শেষে বাবা নিজে গিয়ে মেয়েকে পৌঁছে দেন স্কুলে।

মুর্শিদাবাদের জঙ্গিপুর শহর ঘেঁষা জোতকমল হাইস্কুল। তাদের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী তিথি দাস লিখেছে এই নাটক। টোটোচালক বাবার ভূমিকায় অভিনয়ও করেছে সে। তার সহপাঠী মৌমিতা পাল, সুনীতা হালদার, উম্মে সালমা, সুমনা রহমান আর পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র আক্কাশ আলিও হাজির। দলনেত্রী লক্ষ্মীজনার্দনপুরের তিথিই। দু’বছর আগে দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছেন তার পুলিশকর্মী বাবা। তিন বোনের মধ্যে তিথি ছোট। বড়দির বিয়ে হয়ে গিয়েছে। তবে মেজদি তার স্কুলেরই একাদশ শ্রেণির ছাত্রী। তিথির জানায়, শুধু এই নাটকই নয়। মাঠে শৌচ, বাল্যবিবাহ, স্কুলছুট রুখতে নানা গ্রামে গিয়ে তারা নাটক করে। তার কথায়, ‘‘ক’দিন থেকেই দেখছি, স্কুলের সামনের ব্যাঙ্কটায় খুব ভিড়। ঘণ্টার পর ঘণ্টা লোকে দাঁড়িয়ে। তাই হেডস্যারকে বললাম, এখানেই পথনাটক করলে কেমন হয়? অনেক লোক দেখতে পাবে!’’ প্রধান শিক্ষক শিবশঙ্কর সাহা বলেন, “পদ্মাপাড়ের প্রত্যন্ত গ্রাম থেকেও লোকে এই ব্যাঙ্কে আসেন। এখানে পথনাটক করলে তাঁরা খানিক আনন্দ পাবেন, আবার সামাজিক বার্তাও দেওয়া যাবে— এই ভেবেই ওদের যেতে দিলাম।” আধ ঘণ্টার নাটক শেষে হাততালি আর থামতেই চায় না। এক দৌড়ে লাইনে ফিরে মাঝবয়সী রমজান শেখ বলেন, “ভাবছিলাম, মেয়েটাকে স্কুল ছাড়িয়ে ভাল ঘর দেখে বিয়ে দেব। কিন্তু বাচ্চাগুলো সব ঘেঁটে দিল!”

লাইনে দাঁড়িয়েই একমনে নাটক দেখছিলেন বৃদ্ধা পারুল বেওয়া। পায়ে পায়ে এগিয়ে এসে মেয়ের অভিনয় করা মৌমিতার মাথায় হাত রেখে তিনি বললেন, “তোমরা বড় হও মা, মন দিয়ে পড়াশুনো করো। কেউ যেন ছোট বয়সে বিয়ে না করে!’’

কন্ট্রোল রুম রাজ্যের

নোটের আকালে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি যাতে না-বাড়ে, সে-দিকে নজর রাখতে জেলায় জেলায় কন্ট্রোল রুম খোলার সিদ্ধান্ত নিল রাজ্য সরকার। রাজ্যের স্বরাষ্ট্র দফতরের তরফে সব জেলা প্রশাসনকে সকাল ৮টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত কন্ট্রোল রুম খুলে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসনের অফিসার-কর্মীরা ছাড়াও কন্ট্রোল রুমে কৃষি, কৃষি বিপণন দফতরের অফিসারদের যুক্ত করতে বলা হয়েছে। রোজ বেলা ১২টা এবং বিকেল ৫টায় কন্ট্রোল রুম থেকে পরিস্থিতি জানাতে হবে নবান্নকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন