বিকল্প তৈরির কাজ থমকেই, ছুটি পাচ্ছে না জুবিলি সেতু

বয়স ১২৯। সুদীর্ঘ সেবার পরে বিদায়ের ডাক এসে গিয়েছে। কিন্তু ছুটি মিলেও মিলছে না। কারণ, জুবিলি সেতুর বিকল্প রেলসেতু তৈরির কাজটাই যে বহু দিন ধরে থমকে আছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ জুলাই ২০১৫ ০৪:১৫
Share:

জুবিলি ব্রিজ (ডান দিকে), তার ঠিক পাশেই আধাখেঁচড়া অবস্থায় পড়ে আছে নতুন সেতুটি। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়

Advertisement

বয়স ১২৯। সুদীর্ঘ সেবার পরে বিদায়ের ডাক এসে গিয়েছে। কিন্তু ছুটি মিলেও মিলছে না। কারণ, জুবিলি সেতুর বিকল্প রেলসেতু তৈরির কাজটাই যে বহু দিন ধরে থমকে আছে।

Advertisement

হুগলি নদীর উপরে পূর্ব রেলের নৈহাটি-ব্যান্ডেল শাখার জুবিলি সেতু শুধু প্রবীণতার জন্যই বিশিষ্ট নয়। প্রযুক্তিগত অভিনবত্বের জন্যও বিখ্যাত। ১৮৮২ সালে শুরু হয়েছিল নির্মাণকাজ। রেলসেতুটি চালু হয় তার পাঁচ বছরের মাথায়, ১৮৮৭-র ১৬ ফেব্রুয়ারি। নাটবোল্টহীন সেতুটি তৈরি হয়েছিল বিশেষ প্রযুক্তিতে। সেই অভিনবত্বের জন্য দেশ-বিদেশের বিশেষজ্ঞদেরও বারবার আকর্ষণ করেছে সে। কিন্তু কালের নিয়মেই তার বিদায় আসন্ন।

সেই জন্য জুবিলি সেতুর পাশেই জরুরি ভিত্তিতে শুরু হয়েছিল নতুন সেতু তৈরির কাজ। তারও নাম হবে জুবিলি সেতু। নামের মধ্যেই বাঁচিয়ে রাখা হবে পুরনোকে। কিন্তু কাজ শুরুর কিছু দিন পরে আচমকাই থেমে যায় নতুন সেতুর নির্মাণ। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, ঠিকাদার চলে যাওয়ায় দীর্ঘ আট বছর ধরে বন্ধ হয়ে রয়েছে বিকল্প সেতু নির্মাণের কাজ। অগত্যা বিদায়-ঘণ্টা শোনার পরেও কাজ চালিয়ে যেতে হচ্ছে পুরনো জুবিলিকেই। তার বৃদ্ধ বুকের উপর দিয়েই চলছে ট্রেন। কাজটা খুব সহজ নয়। কারণ প্রতি মুহূর্তে ঝুঁকি অনেক। তাই ট্রেন চালাতে হচ্ছে অতি ধীরে। বিকল্প সেতু সম্পূর্ণ না-হওয়ায় শিয়ালদহ থেকে উত্তরবঙ্গ এবং দিল্লিমুখী অনেক গুরুত্বপূর্ণ ট্রেনকেই এখন বরাহনগর-ডানকুনি হয়ে পাঠানো হচ্ছে হাওড়া-ব্যান্ডেল মেন লাইন দিয়ে।

অথচ ২০০৭ সালেই নতুন সেতু চালু হয়ে যাওয়ার কথা ছিল। তার জন্য নতুন করে তৈরি করা হয়েছিল গরিফা স্টেশনের প্ল্যাটফর্মও। সেটি একদম ঝাঁ-চকচকে ছিল। কিন্তু দীর্ঘদিন ব্যবহার না-হওয়ায় মেঝের টালি ফুঁড়ে এখন আগাছার জঙ্গল হয়ে গিয়েছে। ছাউনির নীচে যাত্রীদের বসার জায়গা। মাঝেমধ্যে সকালে-বিকেলে লোকজন বসেনও তাতে। তাঁরা কেউ যাত্রী নন। নিছক সময় কাটাতে আসা কিছু মানুষ। সন্ধ্যার পরে তাঁরাও থাকেন না। জায়গাটি চলে যায় নেশাড়ুদের দখলে।

নিত্যযাত্রীদের প্রশ্ন, নতুন সেতুর নির্মাণকাজে এত দেরি কেন?

রেলের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘মাঝপথে ঠিকাদার কাজ ছেড়ে যাওয়ায় ওই বিপত্তি।’’ বাসিন্দারা জানান, গঙ্গায় বার্জ রেখে সেতু তৈরির কাজ চলছিল। কিন্তু আচমকা সব যন্ত্রপাতি ফেলে রেখেই ঠিকাদার সংস্থার কর্মীরা চলে যান। সেগুলি পড়ে রয়েছে বছরের পর বছর।

৩৩৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ৪১৭ মিটার লম্বা ওই নতুন সেতু তৈরির কাজ হাতে নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কাজ শেষ করে কবে চালু হবে সেটি?

‘‘সম্প্রতি রেল বোর্ডের নির্দেশে ওই কাজ নতুন করে শুরু করা হয়েছে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই কাজ শেষ করে চালু করে দেওয়া হবে নতুন জুবিলি সেতু,’’ আশ্বাস দিয়েছেন পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক রবি মহাপাত্র।

নতুন সেতুর কাজ শেষ করার ক্ষেত্রে টালবাহানা শুরু হওয়ায় স্থানীয় বাসিন্দারা বিরক্ত তো বটেই। তাঁরা ক্ষুব্ধ নতুন স্টেশনটি চালু না-করে ফেলে রাখার জন্যও। তাঁদের বক্তব্য, পুরনো গরিফা স্টেশনটি তো নষ্টই হতে বসেছে। প্ল্যাটফর্মের এক দিক বসেও গিয়েছে। গঙ্গার অন্য পারে হুগলিঘাট স্টেশনটিকেও গড়ে তোলা হয়েছে নতুন করে। এবং সেটি চালুও হয়ে গিয়েছে। অথচ নতুন গরিফা স্টেশনটিকে মডেল বা আদর্শ স্টেশনের মতো করে গড়ে তুলেও ফেলে রেখে নষ্ট করা হচ্ছে। কেন?

রেল আধিকারিকেরা জানান, নতুন সেতু আর নতুন স্টেশন চলতি বছরেই একসঙ্গে চালু করা হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন