নার্সিংহোমে প্রয়াত সাংসদ রেণুকা সিংহ। ছবি:হিমাংশুরঞ্জন দেব
সারাদিন কখনও বোঝা যায়নি, রাতে এত বড় দুর্যোগ নেমে আসছে। এ দিন সকাল থেকে নিয়মমাফিক কাজ করে গিয়েছেন তিনি। সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে টিভি দেখছিলেন। তখনই বুকে ব্যথা হয়। তা বাড়তে থাকে। কিছু ক্ষণের মধ্যে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় কাছেই এক নার্সিংহোমে। কিন্তু তত ক্ষণে সব শেষ। বুধবার রাতে মারা গেলেন কোচবিহারের তৃণমূল সাংসদ রেণুকা সিংহ। বয়স হয়েছিল ৬৮ বছর।
রেণুকার মৃত্যুতে রাজনৈতিক মহলে এবং কোচবিহারের মানুষের মধ্যে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শোক প্রকাশ করেছেন। পরিবার সূত্রে জানানো হয়েছে, দলীয় নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলে আজ বৃহস্পতিবারে তার অন্ত্যেষ্টি হবে। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী তথা জেলা তৃণমূল সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ কলকাতায় রয়েছেন। দল সূত্রে জানা গিয়েছে, আজ রবিবার কলকাতায় বৈঠক বাতিল করে জেলায় ফিরতে পারেন। শুধু রবিবাবুই নন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে অন্ত্যেষ্টি অনুষ্ঠানে থাকছেন সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক সুব্রত বক্সীও। কোচবিহারের স্থানীয় বাসিন্দারাও রাতের বেলা নার্সিংহোমে ভিড় জমাতে শুরু করেন।
দীর্ঘদিন কংগ্রেস রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত রেণুকা যখন প্রায় অবসর নিয়ে ফেলেছিলেন রাজনীতি থেকে, তখন তাঁকে লোকসভা ভোটে কোচবিহারের প্রার্থী করেন তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্বই। ২০১৪ সালে সেই নির্বাচনে লক্ষাধিক ভোটে জেতেন রেণুকা। এক সময়ের প্রভাবশালী কংগ্রেস নেত্রী, ১৯৯৫ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত কংগ্রেস পরিচালিত কোচবিহার পুরসভায় ভাইস চেয়ারম্যান রেণুকা ২০১৪ সালে তৃণমূলের টিকিটে সংসদে যান। নিয়মিত অধিবেশনে যোগ দিতেন তিনি। আবার সক্রিয় রাজনীতিতে অংশগ্রহণও শুরু করেন।
কোচবিহার কলেজের পরিচালন সমিতির সভাপতি রেণুকা। এ দিন সমিতির বৈঠক ছিল। দুপুর তিনটে থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সেই বৈঠক করেন রেণুকা। তখনও তাঁর কোনও অসুস্থতার লক্ষণ দেখা যায়নি বলে জানিয়েছেন কলেজের অধ্যক্ষ পঙ্কজ দেবনাথ। পরিবার সূত্রে জানানো হয়েছে, এ দিন রাতে রেণুকা দেবী টিভি দেখছিলেন। সে সময়েই তিনি বুকে ব্যথা হচ্ছে বলে জানান। ক্রমেই ব্যথা বাড়তে থাকে। দ্রুত অ্যাম্বুল্যান্স ডেকে তাঁকে কোচবিহারের বৈরাগীদিঘি রোডের একটি নার্সিংহোমে নিয়ে যাওয়া হয়। নার্সিংহোমে পৌঁছনোর পরেই তাঁকে মৃত ঘোষণা করা হয়েছে।
রেণুকা দেবীর স্বামী বলদেববাবু অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক। রেণুকা দেবীর দুই ছেলে। বড় ছেলে রাজদ্বীপ সরকারি চাকরি করেন, ছোট ছেলে রত্নদ্বীপ স্কুল শিক্ষক। রেণুকার মৃত্যুতে তৃণমূলের রাজ্য নেতারা শোক প্রকাশ করেছেন। তৃণমূল সূত্রের খবর, অন্ত্যেষ্টিতে যোগ দিতে আজ বৃহস্পতিবার রাজ্যের মন্ত্রী এবং সাংসদদের কয়েক জন কোচবিহারে উপস্থিত থাকতে পারেন।
রাতে সাংসদের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়তেই অসংখ্য মানুষ নার্সিংহোমের সামনে ভিড় করেন। অনেকেই কান্নায় ভেঙে পড়েন। শোকস্তব্ধ রাজনৈতিক নেতারাও। তৃণমূলের কোচবিহার জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, “আমরা শোকাহত। প্রয়াত সাংসদের পরিবারকে সমবেদনা জানাচ্ছি।” রেণুকাদেবীর মৃত্যু সংবাদ পেয়ে রাতেই নার্সিংহোমে যান তৃণমূল নেতা আব্দুল জলিল আহমেদ। তিনি বলেন, “ভীষণ ভাল মনের মানুষ ছিলেন। আচমকা এ ভাবে তাঁর মৃত্যুর খবর পাব ভাবিনি।” ভারতীয় ছিটমহল ইউনাইটেড কাউন্সিলের উপদেষ্টা দেবব্রত চাকি বলেন, “সাবেক ছিটমহলের বাসিন্দাদের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের ব্যাপারে যখন তাঁর কাছে গিয়েছি, পাশে দাঁড়িয়েছেন। আমাদের ক্ষতি হয়ে গেল।’’
রেণুকাদেবীর প্রয়াণে শোকপ্রকাশ করেছেন বিরোধী দলের নেতারাও। ফরওয়ার্ড ব্লকের যুব লিগের রাজ্য সম্পাদক আব্দুর রউফ বলেন, “খুব দুঃখজনক ঘটনা। মতাদর্শগত ভাবে বিরোধ হলেও তিনি জেলার প্রথম মহিলা সাংসদ। বেশ কিছু ব্যাপারে মুখর হয়েছিলেন। তাঁর মৃত্যুতে জেলার ক্ষতি হয়ে গেল।” সিপিএমের কোচবিহার জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য মহানন্দ সাহা বলেন, “তিনি বিরোধী দলের নেত্রী হলেও ভাল মানুষ ছিলেন। আমরা শোকাহত।”