সিবিআইয়ের জুজু দেখিয়েই গৌতমের টাকা নেন সুদীপ্ত

যত দিন যাচ্ছে, সুদীপ্তের ধূর্ততার পরিচয় পেয়ে ততই অবাক হচ্ছেন তদন্তকারীরা। গৌতমকে প্রতারণার অভিযোগে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) ৪ নভেম্বর সুদীপ্তকে গ্রেফতার করে। প্রথমে জেল হেফাজতে ছিলেন তিনি। তার পরে, তিন দিন ধরে তাঁকে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে জেরা করছেন ইডি-র তদন্তকারীরা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৬ নভেম্বর ২০১৮ ০৫:৪২
Share:

রোজভ্যালি কাণ্ডে ধৃত ব্যবসায়ী সুদীপ্ত রায়চৌধুরী।—নিজস্ব চিত্র।

অর্থ লগ্নি সংস্থা রোজ ভ্যালির আর্থিক দুর্নীতি নিয়ে সিবিআই তদন্ত শুরু করে ২০১৪ সালে। তার দু’বছর আগেই, ২০১২-য় রোজ ভ্যালির কর্ণধার গৌতম কুণ্ডুর কাছ থেকে দু’‌কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছিলেন সুদীপ্ত রায়চৌধুরী। কী করে? স্রেফ ভয় দেখিয়ে। সিবিআই তদন্তের ভয়।

Advertisement

যত দিন যাচ্ছে, সুদীপ্তের ধূর্ততার পরিচয় পেয়ে ততই অবাক হচ্ছেন তদন্তকারীরা। গৌতমকে প্রতারণার অভিযোগে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) ৪ নভেম্বর সুদীপ্তকে গ্রেফতার করে। প্রথমে জেল হেফাজতে ছিলেন তিনি। তার পরে, তিন দিন ধরে তাঁকে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে জেরা করছেন ইডি-র তদন্তকারীরা।

ইডি সূত্রের খবর, সারদা-রোজ ভ্যালি যে-সময়ে বাজার থেকে কোটি কোটি টাকা তুলছিল, লগ্নি সংস্থার কর্তারা যে-সময়ে মন্ত্রীসান্ত্রিদের সঙ্গে ওঠবোস করছিলেন, সেই পর্বে গৌতমের মতো লগ্নি সংস্থার মালিককে ঠকিয়ে দু’‌কোটি টাকা হাতিয়েছিলেন সুদীপ্ত। বলেছিলেন, গৌতমের নামে তদন্ত শুরু করেছে সিবিআই। সেই মামলা থেকে তাঁকে বাঁচাতে পারেন একমাত্র তিনিই। তাই ওই টাকা প্রয়োজন। সেটা ২০১২।

Advertisement

অথচ ২০১৪ সালের মে মাসে সুপ্রিম কোর্ট লগ্নি সংস্থা নিয়ে তদন্তের ভার দেয় সিবিআইকে। তার পরেই রোজ ভ্যালি নিয়ে সিবিআইয়ের তদন্ত শুরু হয়। অর্থাৎ গৌতমের কাছ থেকে সুদীপ্তের টাকা হাতানোর দু’বছর পরে। ২০১৫ সালের মার্চে ইডি-র হাতে গ্রেফতার হন গৌতম।

বেআইনি লগ্নি সংস্থার বিরুদ্ধে প্রথম অভিযোগ রাজ্য পুলিশের কাছে জমা পড়ে ২০১৩ সালে। সারদার নামে সেই অভিযোগ জমা পড়ার পরে সেই বছরেই গ্রেফতার হন সারদা-প্রধান সুদীপ্ত সেন। ফলে তার আগে সারদা বা অন্য কোনও লগ্নি সংস্থা নিয়ে সিবিআই তদন্ত করেছে— সিবিআইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেও ইডি-র তদন্তকারী অফিসারেরা এমন কোনও তথ্য পাননি।

কোনও মামলাই তো ছিল না। তা হলে ২০১২ সালে গৌতম কেন টাকা দিলেন সুদীপ্ত রায়চৌধুরীকে?

এখানেই সুদীপ্ত রায়চৌধুরীর ধূর্ততা অবাক করে দিয়েছে তদন্তকারীদের। যে-গৌতম লোক ঠকিয়ে কয়েক হাজার কোটি টাকার ব্যবসা ফেঁদে বসেছিলেন বলে অভিযোগ, সুদীপ্ত তাঁকে বোঝাতে সমর্থ হন যে, গৌতমের নামে তদন্ত শুরু করেছে সিবিআই। তদন্তকারী সংস্থা সূত্রের খবর, গৌতমের তরফে যাঁদের কাছে সেই ‘খবর’-এর সত্যতা যাচাইয়ের সম্ভাবনা ছিল, সেই সব লোককেও কোনও না-কোনও ভাবে ‘ম্যানেজ’ করে নেন সুদীপ্ত। ফাঁদে পা দিয়ে ২০১২ সালেই গৌতম দু’‌কোটি টাকা দেন সুদীপ্তকে।

ইডি জানাচ্ছে, গৌতম ছাড়াও সুদীপ্ত আরও অনেক তথাকথিত বুদ্ধিমান লোককে ঠকিয়ে টাকা নিয়েছেন বলে অভিযোগ। বিতর্কিত জমি সস্তায় কিনে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সাহায্যে তা আইনসম্মত করিয়ে নেওয়া এবং পরে সেখানে প্রোমোটিং করেও সুদীপ্ত প্রচুর টাকা রোজগার করেছেন বলে অভিযোগ আছে। অভিযোগ, এক সময় চিকিৎসক পরিচয় দিয়েও দেদার রোজগার করেছেন সুদীপ্ত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন