সুদীপ্তের জবানিতেই অগাধ সম্পত্তির হদিস

সারদা কেলেঙ্কারির তদন্তে পাওয়া তথ্যের সঙ্গে তাঁর বয়ানের অসঙ্গতি দূর করতেই ওই গোষ্ঠীর কর্ণধার সুদীপ্ত সেনকে ফের জেরা করতে চেয়েছিল এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট বা ইডি। তবে বৃহস্পতিবার জেলে গিয়ে তারা কিছু জিজ্ঞাসা করতে না-করতেই নিজের বিপুল পরিমাণ সম্পত্তির সন্ধান দিলেন সুদীপ্ত। ইডি-র বক্তব্য, দীর্ঘ তদন্তের পরেও ওই সব সম্পত্তি সম্পর্কে তাদের হাতে কোনও তথ্য ছিল না। এ দিন আলিপুর জেলে গিয়ে সুদীপ্তকে তিন ঘণ্টা জেরা করে ইডি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ জানুয়ারি ২০১৫ ০৩:২২
Share:

সারদা কেলেঙ্কারির তদন্তে পাওয়া তথ্যের সঙ্গে তাঁর বয়ানের অসঙ্গতি দূর করতেই ওই গোষ্ঠীর কর্ণধার সুদীপ্ত সেনকে ফের জেরা করতে চেয়েছিল এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট বা ইডি। তবে বৃহস্পতিবার জেলে গিয়ে তারা কিছু জিজ্ঞাসা করতে না-করতেই নিজের বিপুল পরিমাণ সম্পত্তির সন্ধান দিলেন সুদীপ্ত। ইডি-র বক্তব্য, দীর্ঘ তদন্তের পরেও ওই সব সম্পত্তি সম্পর্কে তাদের হাতে কোনও তথ্য ছিল না। এ দিন আলিপুর জেলে গিয়ে সুদীপ্তকে তিন ঘণ্টা জেরা করে ইডি।

Advertisement

জেল সূত্রের খবর, এ দিন বেলা ২টো থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত সারদা-প্রধানকে জেরা করা হয়। ইডি-র তদন্তকারী অফিসারেরা জানান, জেরায় সহযোগিতা করেছেন সারদা-প্রধান। প্রশ্নাবলি তৈরি রেখেছিলেন তদন্তকারীরা। কিন্তু সেই সব প্রশ্নের উত্তরের বাইরে গিয়েও সুদীপ্ত তদন্তকারীদের জানান, ইডি এখনও তাঁর বেশ কিছু সম্পত্তি নিজেদের হেফাজতে নেয়নি। যেমন উত্তরবঙ্গে ফালাকাটা-সহ একাধিক এলাকায় তাঁর অনেক জমি আছে। তার মধ্যে একটি জমির আয়তন ১০০ বিঘা।

সুদীপ্ত নিজের থেকে এই ধরনের তথ্য জোগানোয় অবাক হয়ে যান তদন্তকারীরা। তাঁরা স্বীকার করে নেন, ওই সব সম্পত্তি সম্পর্কে ইডি-র কোনও রকম ধারণাই ছিল না। তবে নতুন নতুন সম্পত্তির হিসেব দিলেও বিদেশে তাঁর কোনও সম্পত্তির অস্তিত্ব স্বীকার করেননি সারদা-কর্ণধার।

Advertisement

সারদা-প্রধানের দাবি, তাঁর সংস্থার অন্যতম ডিরেক্টর দেবযানী মুখ্যোপাধ্যায়ের এক আত্মীয়ও সারদায় কাজ করতেন। তিনি ওই সব জমি এবং অন্যান্য সম্পত্তির ব্যাপারে ওয়াকিবহাল। এখানেই থেমে থাকেননি সুদীপ্ত। সারদার কয়েক জন গুরুত্বপূর্ণ কর্মী (তাঁদের মধ্যে আছেন কিছু মহিলাও) এবং সারদার বাইরেও বেশ কয়েক জনের কথা বলেছেন তিনি। সারদা-কর্ণধার জানান, ওই সব কর্মী সারদার ব্যবসা সম্পর্কে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানেন। তাঁদের বিস্তারিত ভাবে জেরা করা দরকার বলে মন্তব্য করেন তিনি।

তদন্তকারীদের জেরার মুখে সুদীপ্ত এ দিন তাঁর সংবাদপত্র, টিভি চ্যানেল সম্পর্কেও নানান তথ্য দিয়েছেন। তদন্তে দেখা গিয়েছে, শুধু নিউজপ্রিন্টের পিছনে কোটি কোটি টাকা খরচ করেছিল সারদা। সেই বিষয়ে তদন্ত উঠে আসা তথ্য যাচাইয়ের জন্য সারদার মিডিয়া ব্যবসা নিয়ে তাঁকে জেরা করেন তদন্তকারীরা। সেই সূত্রেই তৃণমূলের এক ছাত্রনেতা সম্পর্কে বেশ কিছু তথ্য দিয়েছেন সুদীপ্ত। ওই ছাত্রনেতাকে ইতিমধ্যেই জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন তদন্তকারীরা। ছাত্রনেতার সঙ্গে সঙ্গে সারদায় কলকাতার কয়েক জন ব্যবসায়ীর ভূমিকা সম্পর্কেও তথ্য দিয়েছেন সুদীপ্ত। ইডি সূত্রের খবর, এক ব্যবসায়ী নিয়মিত সারদার কাছ থেকে কমিশন নিয়েছেন বলে দাবি করেছেন সারদা-প্রধান।

সুদীপ্ত তদন্তে সহযোগিতা করলেও তাঁর সব কথা অবশ্য বিশ্বাস করতে রাজি নন তদন্তকারীরা। কেননা, সারদা-কর্ণধারের এ দিনের কথাবার্তাতেও বেশ কিছু অসঙ্গতি রয়েছে বলে মনে করছেন তাঁরা। যেমন, সারদা কেলেঙ্কারিতে ধৃত, রাজ্যের ক্রীড়া ও পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্রের সঙ্গে সারদার আর্থিক সম্পর্কের বিষয়ে সুদীপ্ত যা বলেছেন, সেই বয়ানের সঙ্গে তদন্তে পাওয়া তথ্যের বিস্তর অসঙ্গতি রয়েছে বলে ইডি সূত্রের দাবি। পরিবহণমন্ত্রীর ছেলের বিয়ের উপহার সামগ্রী এবং অনুষ্ঠানের খরচের টাকা কোথা থেকে এল, সেই বিষয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে। ওই ব্যাপারে সারদা-কর্ণধারের ভূমিকা কী ছিল, জেরায় তা-ও জানতে চায় ইডি। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়ের বিষয়ে সুদীপ্ত যে-সব তথ্য দিয়েছেন, তা নিয়েও ধোঁয়াশা দেখা দিয়েছে।

গত অগস্ট থেকে প্রাক্তন পুলিশকর্তা রজত মজুমদার, ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের কর্মকর্তা দেবব্রত সরকার (নিতু), ব্যবসায়ী সন্ধির অগ্রবাল, সাংসদ সৃঞ্জয় বসু, মন্ত্রী মদনবাবুকে পরপর গ্রেফতার করে সিবিআই। তদন্তে উঠে আসে অজস্র তথ্য। ইতিমধ্যে ইডি-ও বস্ত্রমন্ত্রী শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, শঙ্কুদেব পণ্ডা-সহ বেশ কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। সারদার উধাও হওয়া টাকার সন্ধানে নেমে তাতেও বহু নতুন তথ্য উঠে আসে। সেই জন্যই সুদীপ্তকে ফের জেরা করার প্রয়োজন ছিল বলে জানান ইডি-র তদন্তকারীরা।

দিনের শেষে তাঁদের প্রাপ্তি হয়তো কম নয়। তবে সেই প্রাপ্তি নিয়ে সংশয়-সন্দেহও প্রচুর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন