লাখে না হাজারে! কত খরচে সারিয়ে নেওয়া যায় ভাঙা মাইক্রোফোন?
গায়ে এপ্রন পরে বিধানসভার মধ্যে প্রতিবাদের অধিকার ঘিরে তুলকালাম বেধেছিল সরকার ও বিরোধী পক্ষে। সে দিনের ধস্তাধস্তিতে ক্ষতিগ্রস্ত মাইক্রোফোনের খরচের অঙ্ক নিয়ে এ বার সংঘাত বাধল স্পিকার ও বিরোধী বামেদের। ধস্তাধস্তির জেরে মাইক ও আসবাব মিলে ১২ লক্ষ টাকারও বেশি ক্ষতি হয়েছে বলে রিপোর্ট দিলেও ওই মেরামতির কাজ ১২ হাজারেই সেরে নেওয়া যায় বলে দাবি করেছেন বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তী। সঙ্গে সঙ্গেই তাঁকে চ্যালেঞ্জ করে স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় বলে দিয়েছেন, ১২ হাজার টাকায় ওই মাইক এবং ভোটিং প্যাড সারিয়ে দিতে পারলে সুজনবাবুকে ওই টাকা বিধানসভার তহবিল থেকেই দিয়ে দেওয়া হবে! সুজনবাবু আবার পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুড়েছেন, স্পিকার যদি বাইরে
থেকে মিস্ত্রি নিয়ে আসার লিখিত অনুমতি দেন, তা হলে তিনি ১২ হাজারের মধ্যেই কাজটা করে দেখিয়ে দেবেন!
বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নানকে সাসপেন্ড করার পরে বিধানসভার নিরাপত্তারক্ষীদের দিয়ে তাঁকে সভা থেকে বার করে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল। নিরাপত্তারক্ষীদের সঙ্গে বিরোধী কংগ্রেস ও বাম বিধায়কদের ধস্তাধস্তিতে মান্নানের আসনের সামনের ডেস্কের একাংশ ও কিছু মাইকের ক্ষতি হয়েছিল। স্পিকারের নির্দেশে বিধানসভার পূর্ত, বিদ্যুৎ ও অসামরিক প্রতিরক্ষা দফতর সমীক্ষা চালিয়ে ১২ লক্ষ ৪৩ হাজার ৬৩৬ টাকার ক্ষয়ক্ষতির হিসাব দিয়েছে। বিতর্ক বেধেছে তা নিয়েই! অধিবেশনের প্রথমার্ধে বিক্ষোভ দেখানোর পরে কংগ্রেস বিধায়কেরা দ্বিতীয়ার্ধে আর বাজেট-বিতর্কে যোগ দিচ্ছেন না। এই পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার চ্যালেঞ্জারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন সুজনবাবুই।
বাজেটের উপরে বলতে গিয়েই সুজনবাবু এ দিন মন্তব্য করেন, ‘‘টাকার তো লুঠ চলছে! স্পিকার স্যর আপনিই দেখুন, বিধানসভার মাইকের ক্ষতির জন্য ১২ লক্ষ টাকার হিসেব দিয়ে দিয়েছে আপনাকে। অথচ ওই কাজ ১২ হাজারে হয়ে যায়!’’ স্পিকার বিমানবাবু তাঁকে পাল্টা বলেন, ‘‘আপনাকে দু’দিন সময় দিচ্ছি। ওই মাইক এবং ভোটিং প্যা়ড আপনি ১২ হাজার টাকায় সারিয়ে দিন। তা হলে বিধানসভার তহবিল থেকে আপনাকে টাকা আমি পাইয়ে দেব।’’ বিদ্যুৎমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় আবার মন্তব্য করেন, সরকারকে দিতে হবে না। তিনিই ওই টাকার ব্যবস্থা করবেন।
সুজনবাবু অবশ্য চ্যালেঞ্জ স্বীকার করে নিয়েছেন। পরে তিনি বলেন, ‘‘বাইরের কেউ তো এমনি বিধানসভায় ঢুকতে পারে না। স্পিকার লিখিত অনুমতি দিলে লোক এনে ওই টাকাতেই কাজ করিয়ে দিতে পারি।’’ তবে সুজনবাবুর শর্ত, ক্ষতিগ্রস্ত মাইক সেই রাতেই ঠিক করে নেওয়া হয়েছিল। ঠিক হওয়া জিনিসের মেরামতি কী করে সম্ভব? তাই মাইক্রোফোনকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে দিতে হবে!
এই চাপানউতরের মধ্যেই আজ, শুক্রবার তৃণমূলের তাপস রায়, সমীর চক্রবর্তী, শীলভদ্র দত্ত ও মহুয়া মৈত্র, কংগ্রেসের নেপাল মাহাতো, অপূর্ব সরকার ও দুলাল বর এবং সিপিএমের খগেন মুর্মু— এই ৮ বিধায়ককে সে দিনের ভাঙচুরের ঘটনা নিয়ে বিধানসভায় শুনানি-বৈঠকে ডেকে পাঠানো হয়েছে।