কোয়েল প্রশিক্ষণে স্বনির্ভর হচ্ছেন সুন্দরবনের মহিলারা

সুন্দরবনের মহিলাদের স্বর্নিভর করতে কোয়েল চাষের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে ব্যাঘ্র প্রকল্প দফতর। আর সেই চাষে আগ্রহীও সুন্দরবনের বিভিন্ন দ্বীপের কয়েক হাজার মহিলা। প্রায় বছর খানেক ধরে সুন্দরবনের গোসাবা ব্লকের কুমিরমারি, পাখিরালা, আমলামেথি এবং ক্যানিং ব্লকের নিকারিঘাটা গ্রামে শুরু হয়েছে কোয়েল পাখির চাষ।

Advertisement

সামসুল হুদা

ক্যানিং শেষ আপডেট: ০৪ এপ্রিল ২০১৬ ০২:৫৯
Share:

সুন্দরবনের মহিলাদের স্বর্নিভর করতে কোয়েল চাষের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে ব্যাঘ্র প্রকল্প দফতর। আর সেই চাষে আগ্রহীও সুন্দরবনের বিভিন্ন দ্বীপের কয়েক হাজার মহিলা।

Advertisement

প্রায় বছর খানেক ধরে সুন্দরবনের গোসাবা ব্লকের কুমিরমারি, পাখিরালা, আমলামেথি এবং ক্যানিং ব্লকের নিকারিঘাটা গ্রামে শুরু হয়েছে কোয়েল পাখির চাষ। ওই এলাকার কয়েক হাজার মহিলা এবং পুরুষ এখন এই কোয়েল পাখি চাষ করছেন।

বন দফতর সুত্রের খবর, ইতিমধ্যে গ্রামের মহিলাদের প্রায় হাজার দশেক কোয়েল পাখি বিলি করা হয়েছে। সাধারণত, ৩৫-৪০ দিনের কোয়েল পাখি বিক্রি করা হয়। তখন এই পাখির গড় ওজন থাকে ১৮০-২০০ গ্রাম। কোয়েল পাখি পালনে কোনও রকম প্রতিষেধক বা কৃমিনাশকের ওষুধের প্রয়োজন হয় না। তাই মুরগির থেকে কোয়েল পাখি পালনের চাহিদা বাড়ছে সুন্দরবনের বিভিন্ন দ্বীপে। এই পাখি বছরে প্রায় ২৮০টি ডিম দেয়। আর তাই মুরগি বা হাঁসের থেকে কোয়েল পাখি পালন অনেক বেশি লাভজনক।

Advertisement

উত্তর নিকারিঘাটা গ্রামের রামপ্রসাদ নস্কর, আশালতা নস্কররা বলেন, “আগে মুরগি পালন করতাম। কিন্তু তা ছেড়ে দিয়েছি। এখন কোয়েলের চাষ করছি। এতে আমাদের যথেষ্ট লাভ হচ্ছে। আস্তে আস্তে দেখছি কোয়েলের মাংস ও ডিমের প্রতি মানুষের আগ্রহও বাড়ছে।”

বন দফতর জানিয়েছে, গবেষণায় দেখা গিয়েছে, পৃথিবীতে যত প্রকার প্রাণীর ডিম ও মাংস আছে, তার মধ্যে কোয়েলের ডিম ও মাংসের গুণগত মান তুলনায় বেশি। এটি পুষ্টিকরও বটে। এই পাখির মাংস শরীরে কোলেস্টেরল বাড়তে দেয় না। ডিম ও মাংসে প্রোটিনের পরিমাণ মুগরির মাংস ও ডিমের থেকে বেশি। কোয়েলের মাংস শিশুদের মস্তিষ্কের বিকাশে সহায়তা করে। গর্ভবতী মায়েদের সুষম খাদ্য হিসাবে খুবই উপকারী।

ব্যাঘ্র প্রকল্প দফতরের ডেপুটি ফিল্ড ডিরেক্টর কিশোর মানকর বলেন, “কোয়েলের ডিমে ও মাংসের মধ্যে প্রোটিন, মিনারেল ভিটামিন, এনজাইম এবং অ্যামিনো অ্যাসিড এমন ভাবে রয়েছে, যা খেলে শরীরের সব ধরনের পুষ্টির অভাব পূরণ হয়। শরীরের কার্যক্ষমতা বাড়ায়।’’ তাঁর আশা, ধীরে ধীরে কোয়েলের চাষ জীবিকা হিসেবে আরও জনপ্রিয় হবে। তবে বাংলাদেশে যে পরিমাণ কোয়েল চাষ হয়, ভারতে তা হয় না। এ বার এখানকার বিভিন্ন দ্বীপে কেয়েল চাষ করে সেই পরিমাণ বাড়ানো হচ্ছে বলে তিনি জানান।

ইতিমধ্যে কোয়েল পাখির ডিম ও মাংস বাজারজাত করতে শুরু করেছে ব্যাঘ্র প্রকল্প দফতর। পশ্চিমবঙ্গ সরকার অনুমোদিত বিভিন্ন মাংসের দোকানে তা সরবরাহ করার উদ্যোগও করেছে।

কোয়েল পালনের ফলে সুন্দরবনের বিভিন্ন দ্বীপের মহিলারা আর্থিক ভাবে স্বনির্ভর হচ্ছে বলে ব্যঘ্র প্রকল্প দফতরের দাবি। এতে মহিলাদের মধু সংগ্রহ ও মাছ ধরার জন্য জঙ্গলে যাওয়ার প্রবণতা কমছে। বাঘের আক্রমণে মৃত্যুর ঘটনাও যার জেরে কমবে বলে আশা দফতরের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন