দিল্লি দখলের ‘অঙ্গীকার’ করবেন দলনেত্রী, অপেক্ষায় একুশের সমাবেশ

লোকসভা নির্বাচনের আগে এটাই শেষ একুশে জুলাইয়ের সমাবেশ। সেই মঞ্চ থেকে দলনেত্রী তাঁদের উদ্দেশে কী বার্তা দেন, তা নিয়েও যথেষ্ট উৎসাহ রয়েছে সাধারণ দলীয় কর্মীদের মধ্যে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ জুলাই ২০১৮ ২২:০০
Share:

মঞ্চের প্রস্তুতি। নিজস্ব চিত্র।

হুঙ্কারটা শুনিয়ে দিয়েছিলেন এক বছর আগেই। লক্ষ্য যে এ বার দিল্লি, সে বার্তা ২০১৭-র শহিদ স্মরণ সমাবেশ থেকেই দিয়েছিলেন তৃণমূলনেত্রী। এ বছর শহিদ স্মরণের ২৫ বছর পূর্তি। এ বছরের শহিদ স্মরণ আবার পরবর্তী লোকসভা নির্বাচনের আগে শেষ শহিদ স্মরণ। তাই শনিবার ভিক্টোরিয়া হাউসের সামনের মঞ্চ থেকে দিল্লি দখলের ‘অঙ্গীকার’ করতে চলেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ‘অঙ্গীকার দিবস’-এর প্রস্তুতি সেরে ফেলে গোটা বাংলার তৃণমূল কংগ্রেস তাই কলকাতামুখী এখন।

Advertisement

সাধারণত শহিদ স্মরণের আগের রাত থেকে কলকাতায় ভিড় জমাতে শুরু করেন দূর-দূরান্তের জেলাগুলি থেকে আসা তৃণমূলকর্মীরা। কিন্তু, এ বার দু’তিন দিন আগে থেকেই সেই ভিড় জমতে শুরু করেছে। বাইপাস সংলগ্ন মিলনমেলা, রাজডাঙার গীতাঞ্জলি স্টেডিয়াম, নেতাজি ইনডোর সংলগ্ন ক্ষুদিরাম অনুশীলন কেন্দ্র, আলিপুর এলাকার উত্তীর্ণ প্রেক্ষাগৃহ এবং বড়বাজার এলাকার বিভিন্ন ধর্মশালায় রাখা হয়েছে উত্তরবঙ্গ থেকে এবং জঙ্গলমহলের জেলাগুলি থেকে আসা কর্মী-সমর্থকদের। তাঁদের খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থাও তৃণমূলের তরফেই করা হয়েছে।

অন্য বারের চেয়ে এ বার শহিদ দিবস ঘিরে কর্মীদের উৎসাহ কি বেশি? তৃণমূল যুব কংগ্রেস বলছে, এ বার শহিদ দিবসের ২৫ বছর পূর্তি, তাই উৎসাহ বেশি হওয়া অত্যন্ত স্বাভাবিক। আর উৎসাহ বেশি বলেই কয়েক দিন আগে থেকে কর্মী-সমর্থকরা ঢুকতে শুরু করেছেন কলকাতায়। উৎসাহের আরও একটা কারণ রয়েছে। লোকসভা নির্বাচনের আগে এটাই শেষ একুশে জুলাইয়ের সমাবেশ। সেই মঞ্চ থেকে দলনেত্রী তাঁদের উদ্দেশে কী বার্তা দেন, তা নিয়েও যথেষ্ট উৎসাহ রয়েছে সাধারণ দলীয় কর্মীদের মধ্যে।

Advertisement

দেখুন ভিডিয়ো:

১৯৯৩ সালে প্রদেশ যুব কংগ্রেসের ডাকা মহাকরণ অভিযানে গুলি চালিয়েছিল বামফ্রন্ট সরকারের পুলিশ। সেই ঘটনায় ১৩ জন যুব কংগ্রেস কর্মীর প্রাণ যায়। তার পর থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই একুশে জুলাইয়ের সমাবেশকে মূলত সিপিএম বিরোধী আন্দোলনের অঙ্গ হিসাবেই দেখা হত। ২০১১-য় রাজ্যে ক্ষমতার পালাবদলের পরেও সমাবেশের সেই ‘লক্ষ্য’ কোনও ভাবেই বদলায়নি। রাজ্যে তখনও তৃণমূলের প্রধান প্রতিপক্ষ ছিল সিপিএম। কিন্তু, ধীরে ধীরে সিপিএম এ রাজ্যে তার প্রতিপত্তি খুইয়েছে। বিজেপি-র আধিক্য বেড়েছে। সাম্প্রতিক পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিভিন্ন জেলায় বিজেপি ভাল ফলও করেছে। ফলে একটা সময়ের পর থেকে মমতার তির ঘুরে যায় বিজেপি-র দিকে।

সমাবেশ প্রস্তুতি। নিজস্ব চিত্র।

গত বছরের সভা থেকেই মমতা হুঙ্কার দিয়েছিলেন দিল্লি দখলের। গত এক বছরে দেশের আঞ্চলিক দলগুলির একটা অংশের সঙ্গে মমতা সমন্বয় তৈরির চেষ্টাও করেছেন। কলকাতায় এসে তাঁর সঙ্গে দেখা করে গিয়েছেন অনেক নেতাই। কেন্দ্র থেকে বিজেপি সরকারকে উৎখাত করতে অনেকটাই সচেষ্ট হয়েছেন মমতা। কাজেই দলীয় কর্মীদের এ বিষয়ে তিনি একুশের মঞ্চ থেকে বার্তা দেবেন, সেটাই স্বাভাবিক।

ধর্মতলার ভিক্টোরিয়া হাউসের সামনের মঞ্চ এ দিন সন্ধ্যায় পরিদর্শন করতে এসেছিলেন খোদ তৃণমূল নেত্রী। তাঁর সঙ্গে ছিলেন শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। এমনিতেই সারা দিন ধরে মঞ্চের দেখভাল করেছেন সুব্রত বক্সী। এ বারের মঞ্চ অনেকটা খেলার মাঠের গ্যালারির মতো তৈরি হচ্ছে। চারটি স্তরে মূল মঞ্চ। মুখ্যমন্ত্রীর ভাষণ দেওয়ার বর্গাকার ডায়াস অন্য বছরের মতো এ বারও সবচেয়ে উঁচুতে। তার পেছনে তিনটি স্তরে বাকিদের বসার জায়গা।

আগামী কাল সকাল ১১টায় শুরু হবে সভা। প্রথমে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। তার পর একে একে তৃণমূলের নেতারা মঞ্চে উঠবেন। দলীয় সূত্রে খবর, বেলা পৌনে ১টা নাগাদ সভাস্থলে পৌঁছবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

(১৯৯৩ সালে যুব কংগ্রেসের ডাকা মহাকরণ অভিযানে গুলি চালিয়েছিল পুলিশ। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তখন কংগ্রেস সাংসদ এবং প্রদেশ যুব কংগ্রেসের সভানেত্রী। তৃণমূল কংগ্রেস বা তৃণমূল যুব কংগ্রেস তার বছর পাঁচেক পর তৈরি হয়েছিল। কিন্তু এই প্রতিবেদনটি প্রথম প্রকাশের সময় ভুলবশত, ‘তৃণমূল যুব কংগ্রেসের ডাকা মহাকরণ অভিযানে গুলি চালিয়েছিল বামফ্রন্ট সরকারের পুলিশ’ বলে লেখা হয়েছিল। পাঠকদের ধন্যবাদ এই ভুল ধরিয়ে দেওয়ার জন্য। অনিচ্ছাকৃত এই ত্রুটির জন্য আমরা দুঃখিত।)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন