Sonali Bibi

বাংলাদেশে তাড়িয়ে দেওয়া সোনালিকে ফিরিয়ে আনতেই হবে! কেন্দ্রকে নির্দেশ সুপ্রিম কোর্টের, প্রশ্ন তুলল পদ্ধতি নিয়ে

সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, দেশে ফিরিয়ে আনার পরে মানবিক কারণে সব রকম চিকিৎসার সুবিধা দিতে হবে সোনালিকে। দেশে ফেরানোর পরে তিন চিকিৎসকের দল সোনালির চিকিৎসা করবে।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৩ ডিসেম্বর ২০২৫ ১১:১৫
Share:

সোনালি বিবিকে ভারতে ফিরিয়ে আনার নির্দেশ দিল সুপ্রিম কোর্ট। —প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র।

বাংলাদেশে তাড়িয়ে দেওয়া পশ্চিমবঙ্গের সোনালি বিবি এবং তাঁর আট বছরের সন্তানকে ভারতে ফিরিয়ে আনতে হবে। বুধবার কেন্দ্রীয় সরকারকে এমনটাই নির্দেশ দিল সুপ্রিম কোর্ট। একই সঙ্গে দেশে ফিরিয়ে আনার পরে তাঁর চিকিৎসার ব্যবস্থা করারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কেউ ভারতের নাগরিক কি না, তা যাচাই করার জন্য কেন্দ্রের পদ্ধতি নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে আদালত।

Advertisement

সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, ভারতে নিয়ে আসার পরে সোনালি এবং তাঁর সন্তানকে বীরভূমের বাড়িতে পাঠানোর ব্যবস্থা করতে হবে। সেখানে স্থানীয় মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সোনালির যাবতীয় চিকিৎসায় সাহায্য করবেন। আগামী ১২ ডিসেম্বর এই মামলার পরবর্তী শুনানি হবে। তার আগে যাবতীয় নথিপত্র যাচাই করে তা আদালতে জমা দিতে হবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে।

বীরভূমের সোনালিকে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া সংক্রান্ত মামলাটির বুধবার শুনানি ছিল দেশের প্রধান বিচারপতি সূর্য কান্তের বেঞ্চে। এজলাসে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে ছিলেন বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীও। সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, দেশে ফিরিয়ে আনার পরে মানবিক কারণে সব রকম চিকিৎসার সুবিধা দিতে হবে সোনালিকে। দেশে ফেরানোর পরে তিন চিকিৎসকের দল সোনালির চিকিৎসা করবে।

Advertisement

সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পরে কেন্দ্রও জানায়, তাঁরা সোনালিকে দেশে ফিরিয়ে আনতে রাজি। তবে তাদের বক্তব্য, বাংলাদেশ থেকে সোনালিকে প্রথমে দিল্লিতে নিয়ে আসা হবে। সোনালি ভারতীয় কি না, তা যাচাই করে দেখা হবে বলেও জানায় কেন্দ্র। শুনানির একটি পর্যায়ে কেন্দ্রের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলে আদালত। প্রধান বিচারপতি কান্ত কেন্দ্রের উদ্দেশে বলেন, “আমরা আপনাদের কাজে বাধা দিচ্ছি না। কিন্তু আপনাদের পদ্ধতি ঠিক নেই।”

কেন্দ্রের কাজের পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন বিচারপতি বাগচীও। তিনিও কেন্দ্রের উদ্দেশে বলেন, “মামলাকারী ভদু শেখ ভারতীয় নাগরিক নন— এ কথা একবারও বলেননি। অর্থাৎ, ভদু শেখ ভারতীয়। তাঁর সন্তান সোনালি ভারতীয় নাগরিক হতে পারেন। ভারতের নাগরিকত্বের যে নিয়ম রয়েছে সেই অনুযায়ী তো আপনারা কাজ করেননি।”

বুধবার সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পরে কেন্দ্রকে নিশানা করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মালদহের সভা থেকে কেন্দ্রের উদ্দেশে তিনি বলেন, “সোনালি বিবি ভারতীয়। তাঁকে পুশ ব্যাক করে দেওয়া হয়েছিল বাংলাদেশে। কোন সাহসে গর্ভবতী মহিলাকে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দিলেন? কোর্টের রায়ে ওকে এখন ফিরিয়ে আনা হচ্ছে।”

পশ্চিমবঙ্গের পরিযায়ী কল্যাণ পর্ষদের চেয়ারম্যান তথা তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ সামিরুল ইসলাম সমাজমাধ্যমে লেখেন, ‘দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর অবশেষে ন্যায়বিচারের হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকার মানবিক কারণে সোনালি খাতুন এবং তাঁর নাবালক সন্তানকে ফিরিয়ে আনতে রাজি হয়েছে। শুধুমাত্র বাংলায় কথা বলার জন্য তাঁকে অবৈধভাবে বাংলাদেশে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। বিজেপিকে কেন বাংলা-বিরোধী জমিদার বলা হয় তার একটি স্পষ্ট উদাহরণ হল সীমান্তের ওপারে তাঁর অগ্নিপরীক্ষা।’

কেন্দ্রীয় সরকার যে ভাবে সোনালিদের ‘পুশ ব্যাক’ করেছে, তা নিয়ে আগেও প্রশ্ন উঠেছে আদালতে। এর আগে গত ২৫ নভেম্বরের শুনানিতে সুপ্রিম কোর্ট প্রশ্ন তুলেছিল, সঠিক ভাবে যাচাই প্রক্রিয়া না করেই সোনালি এবং আরও পাঁচ জনকে কেন বাংলাদেশে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। কেন সোনালিদের বক্তব্য শোনা হয়নি, তা নিয়েও প্রশ্নের মুখে পড়েছিল কেন্দ্র।

ওই সময়ে প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ বলেছিল, ‘‘অনেক তথ্য রেকর্ডে রয়েছে। জন্মের শংসাপত্র, আত্মীয়দের সঙ্গে থাকতেন এটাও এক ধরনের প্রমাণ। অভিযোগ, আপনারা বক্তব্য না শুনেই পাঠিয়ে দিয়েছেন।’’ এর পরেই বেঞ্চের মন্তব্য, ‘‘বাংলাদেশ থেকে বেআইনি ভাবে কেউ প্রবেশ করলে তাকে আপনারা পুশব্যাক করতেই পারেন। তা নিয়ে কোনও আপত্তি নেই। কিন্তু এটা নিশ্চিত করতে হবে, তিনি যেন দেশের নাগরিক নন। কেউ যদি বলেন, ভারতে জন্ম নিয়েছেন, এখানে ছোট থেকে বড় হয়েছেন, তবে তাঁর অধিকার রয়েছে। তাঁর কথা শোনা উচিত।’’ এ বার ফের সুপ্রিম কোর্টে প্রশ্নের মুখে পড়ল কেন্দ্রের পদ্ধতি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement