Supreme Court

দ্বন্দ্ব মেটাতে নির্দেশ শীর্ষ আদালতের

শিশু পাচার সংক্রান্ত একটি মামলা ঘিরে একে অপরের এক্তিয়ার নিয়ে প্রশ্ন তুলে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েছিল রাজ্য ও কেন্দ্রের শিশু সুরক্ষা কমিশন।

Advertisement

অনির্বাণ রায়

জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০২:৪১
Share:

ছবি: সংগৃহীত

শিশু পাচার সংক্রান্ত একটি মামলা ঘিরে একে অপরের এক্তিয়ার নিয়ে প্রশ্ন তুলে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েছিল রাজ্য ও কেন্দ্রের শিশু সুরক্ষা কমিশন। সেই নিয়ে ২০১৮ সালে দু’পক্ষই দ্বারস্থ হয়েছিল আদালতের। তার পরিপ্রেক্ষিতে চলতি বছরের জানুয়ারিতে শিশু পাচার কাণ্ডে রাজ্য এবং কেন্দ্রের শিশু সুরক্ষা কমিশনের ‘সংঘাত’ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করল সুপ্রিম কোর্ট। ১৩ জানুয়ারি সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি দীপক গুপ্ত এবং বিচারপতি অনিরুদ্ধ বসুর ডিভিশন বেঞ্চ এই বিরোধকে ‘দুঃখজনক’ অ্যাখ্যা দিয়ে সব বিবাদ দ্রুত মিটিয়ে ফেলতে নির্দেশ দিয়েছেন।

Advertisement

সুপ্রিম কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ ৪০ পাতা রায়ের শুরুতেই মন্তব্য করেছেন, “এটি খুবই দুঃখজনক ঘটনা (ইট ইজ় সো স্যাড)।” দুঃখপ্রকাশ করে রায় শুরু করার কথাও উল্লেখ করে ডিভিশন বেঞ্চ বলেছেন, “আমরা দুঃখ করে শুরু করলাম, কারণ যে সংস্থাগুলির উপর শিশুদের অধিকার রক্ষা করার ভার রয়েছে, তারা নিজেদের তথাকথিত এক্তিয়ার নিয়ে লড়াইতে নেমেছে।”

২০১৭ সালে জলপাইগুড়িতে একটি দত্তক দেওয়ার অনুমতিপ্রাপ্ত সংস্থার বিরুদ্ধে শিশু বিক্রি করার অভিযোগ ওঠে। সেই মামলার তদন্ত শুরু করে সিআইডি। গ্রেফতার করা হয় সংস্থার পরিচালনমণ্ডলীর একাধিক সদস্যকে। ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয় সরকারি আধিকারিককেও। শিশু বিক্রিতে মদত দেওয়ার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয় স্থানীয় বিজেপি নেত্রী জুহি চৌধুরীকে। উঠে আসে বিজেপির একাধিক নেতা-নেত্রী, সাংসদের নাম। তার পরেই তৃণমূল-বিজেপি টানাপড়েন শুরু হয়। দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ে কেন্দ্র ও রাজ্যের শিশু সুরক্ষা কমিশন। সিআইডির বিরুদ্ধে তদন্তে সহযোগিতা না করার অভিযোগ তোলে কেন্দ্রীয় শিশু সুরক্ষা কমিশন। জানুয়ারিতে সিআইডিকে সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দিয়েছে, কেন্দ্রীয় কমিশনকে যাবতীয় তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করতে।

Advertisement

২০১৭ সালে জলপাইগুড়িতে এসে কেন্দ্রীয় কমিশনের প্রতিনিধিরা অভিযোগ তুলেছিলেন, তাঁদের তদন্তে সহযোগিতা করা হচ্ছে না, যে বিষয়গুলি তাঁদের এক্তিয়ারে রয়েছে তা রাজ্য কমিশন করছে। রাজ্য কমিশনের পাল্টা অভিযোগ ছিল, কেন্দ্রীয় কমিশন তদন্ত প্রক্রিয়ায় বাধা দিচ্ছে, সহযোগিতা করছে না। সুপ্রিম কোর্টের রায়ের প্রেক্ষিতে কোনও কমিশনই মন্তব্য করতে চায়নি। রাজ্য কমিশনের এক সদস্যের কথায়, ‘‘সুপ্রিম কোর্ট একটা প্রক্রিয়া ঠিক করে দিয়েছে। সেই প্রক্রিয়া চলছে। তাই মন্তব্য করা যাবে না।”

সম্প্রতি রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ও এই মামলার প্রসঙ্গ তোলেন। তার পরে ফের তৃণমূল-বিজেপি টানাপড়েন শুরু হয়। মামলায় নাম উঠেছিল বিজেপি নেতা কৈলাস বিজয়বর্গীয়র। তাঁর আইনজীবী অখিল বিশ্বাস বলেন, “জুহি চৌধুরীকে রাজনৈতিক কারণে গ্রেফতার করা হয়েছিল। রাজনৈতিক কারণেই কৈলাস বিজয়বর্গীয়-সহ কয়েক জনের নাম উল্লেখ করেছিল পুলিশ। মামলার মূল অভিযুক্ত পরে আদালতে বয়ান দিয়েছেন যে, তিনি কৈলাস, রূপা গঙ্গোপাধ্যায়দের চেনেন না। পুলিশের ষড়যন্ত্র সামনে চলে আসে। মামলার তদন্ত হলে সে সময়কার সরকারি আধিকারিক, দায়িত্বে থাকা কর্মীর নাম সামনে আসবে। তাঁরাই দত্তকের বিভিন্ন নথিতে সই করেছেন।” অখিলের আরও প্রশ্ন, “শিশু চুরি বলা হচ্ছে। কিন্তু যাঁদের থেকে চুরি হয়েছে, তাঁদের কোনও অভিযোগের উল্লেখ নেই কেন? চুরি যদি হয়ে থাকে, তবে শিশুদের কি উদ্ধার করা হয়েছে? ফেরানো হয়েছে বাবা-মায়ের কাছে?” অন্য দিকে তৃণমূল নেতা তথা আইনজীবী গৌতম দাস বলেন, “সিআইডি তথ্যপ্রমাণ পেয়েই পদক্ষেপ করছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন