কলকাতা পুলিশ কমিশনারের বাড়িতে সিবিআই হানার শুনানি হবে আগামিকাল। সোমবার বিষয়টি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয় সিবিআই। প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ বলেন, ‘‘কলকাতা পুলিশ কমিশনার যদি তথ্য লোপাট করে থাকেন, তবে আদালতের সামনে সেই নথি পেশ করুন। আমরা এমন ব্যবস্থা নেব যাতে ভবিষ্যতে তাঁকে অনুতপ্ত হতে হয়।’’ কলকাতা পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমারের বাড়িতে রবিবার কী ঘটনা ঘটেছিল তার বিস্তারিত রিপোর্ট এবং ভিডিয়ো ফুটেজ নিয়ে এ দিনই দিল্লি যান রাজ্যের দুই সিবিআই আধিকারিক। তবে, ঘটনার গতিপ্রকৃতিতে স্পষ্ট যে তথ্য এবং নথি তাঁরা আদালতে পেশ করেছেন তা পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমারের বিরুদ্ধে অপরাধ প্রমাণে যথেষ্ট নয়। প্রধান বিচারপতি সিবিআই-কে আগামিকাল সেই সমস্ত তথ্য পেশ করতে বলেছেন।
মূলত দুটি আবেদন শীর্ষ আদালতে পেশ করা হয়। একটি হল বার বার পুলিশ কমিশনারকে জানানো সত্ত্বেও সিবিআইকে তদন্ত সহযোগিতা না করা। দ্বিতীয়টি, আদালত অবমাননা। কারণ, সিবিআই সু্প্রিম কোর্টের নির্দেশেই চিটফান্ডের তদন্ত করছে। সে জন্য তদন্তে সহযোগিতা না করার ঘটনাকে আদালত অবমাননা দেখতে চাইছে সিবিআই।
এ দিকে, সোমবার ভোরের বিমানেই দিল্লি রওনা হয়েছিলেন সিবিআই ডিএসপি তথাগত বর্ধন ছাড়াও এসপি পদমর্যাদার আর এক আধিকারিক। সিবিআই সূত্রে খবর, রাজ্য পুলিশের দশ জন পুলিশ আধিকারিকের ভূমিকা নিয়ে রিপোর্টে পেশ করেন সিবিআই কর্তারা। এর মধ্যে বেশ কয়েক জন আইপিএসও রয়েছেন। শুধু দিল্লির সিবিআই অফিসেই নয়, এ দিন সুপ্রিম কোর্টেও সিপি-কাণ্ডের রিপোর্ট-ভিডিয়ো পেশ করে সিবিআই। এ বিষয়ে শুনানি আগামিকাল, মঙ্গলবার হবে বলে সুপ্রিম কোর্টের তরফে জানানো হয়েছে।
সিবিআই ও রাজ্য প্রশাসনের টানাপড়েন রবিবার সন্ধ্যা থেকে চরম আকার নেয়। বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থার তদন্তে কলকাতার পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমারের বাড়িতে বসে কথা বলতে চেয়েছিলেন কেন্দ্রীয় সংস্থার তদন্তকারীরা। তাতে বাধা দেয় কলকাতা পুলিশ। তা নিয়েই কথা কাটাকাটি এবং পরে ধাক্কাধাক্কি! তবে এখানেই শেষ নয়।
আরও পড়ুন: সিপি-র বাড়িতে সিবিআই হানা নিয়ে কেন্দ্র-রাজ্য চূড়ান্ত সংঘাত, ধর্নায় মমতা
সন্ধ্যায় নিজাম প্যালেসে সিবিআইয়ের আঞ্চলিক যুগ্ম অধিকর্তা পঙ্কজ শ্রীবাস্তবের সরকারি আবাসনও ঘিরে ফেলে কলকাতা পুলিশ। বিধাননগর পুলিশ ঘিরে ফেলে সল্টলেকের সিজিও কমপ্লেক্সে সিবিআই দফতরও। সিবিআই এবং কেন্দ্রের ভূমিকা নিয়ে তোপ দেগে ধর্মতলায় ধর্না শুরু করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এর পরেই রাতে দিল্লির সিবিআই কর্তাদের সঙ্গে ভিডিয়ো কনফারেন্সের মাধ্যমে পুরো বিষয়টি জানান রাজ্যের সিবিআই আধিকারিকরা।
গভীর রাত পর্যন্ত চলে সেই কনফারেন্স। কী ভাবে তাঁরা বাধার সম্মুখীন হন, সে বিষয় বিস্তারিত রিপোর্ট দিল্লিকে দেন রাজ্য সিবিআই কর্তারা। নিজাম প্যালেসে অফিসারদের নিয়ে বৈঠক করেন সিবিআইয়ের যুগ্ম অধিকর্তা পঙ্কজ শ্রীবাস্তব। গোটা ঘটনাটি রবিবার রাতেই অন্তর্বর্তী সিবিআই প্রধান নাগেশ্বর রাওকেও জানানো হয়। সিবিআই সূত্রে খবর, তখনই রিপোর্ট নিয়ে দিল্লি যাওয়ার বিষয়টি চূড়ান্ত হয়। সেই মতো এ দিন ভোরেই দিল্লি রওনা হন সিবিআইয়ের দুই শীর্ষ কর্তা। এ দিকে, আজই নতুন সিবিআই অধিকর্তা হিসেবে দায়িত্ব নেবেন ঋষিকুমার শুক্ল। সূত্রের খবর, দায়িত্ব নিয়েই এই তদন্তে পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে তা নিয়ে বৈঠক করবেন শুক্ল। এমনকি, তিনি কলকাতা আসতে পারেন বলেও সূত্রের খবর।
আরও পড়ুন: ধর্নামঞ্চ থেকে ‘স্বাধীনতা আন্দোলনে’র জন্য তৃণমূলকে আজ পথে নামার নির্দেশ মমতার
এত দিন ধরে ঠিক কোন কোন তারিখে কলকাতা পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমারকে চিঠি দিয়ে ডেকে পাঠানো হয়েছে, তার আগে কবে রাজ্য প্রশাসনকে এ নিয়ে বলা হয়েছে, কবে রাজ্য পুলিশের ডিজিকে চিঠি দিয়ে রাজীব কুমারকে দেখা করার জন্য বলা হয়েছে, সে সমস্ত নথিপত্র এ দিন এক জায়গায় করে রাতেই দিল্লিতে পাঠানো হয় বলে সিবিআই সূত্রে জানা গিয়েছে। সিবিআইয়ের যুক্তি, এ দিন আচমকাই যে রাজীব কুমারের সঙ্গে দেখা করতে যাওয়া হয়নি, তার প্রমাণ হিসাবে সোমবার সুপ্রিম কোর্টে নথি পেশ করে সিবিআই।
এ দিন সকাল সাড় দশটা নাগাদ সুপ্রিম কোর্টে রিপোর্ট জমা দেয়ে সিবিআই। তখনই সুপ্রিম কোর্টের তরফে আগামীকাল এ বিষয়ে শুনানির কথা জনানো হয়। এর পর প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ জানান, বিষয়টি নিয়ে আজই শুনানি হতে হবে, তা নয়। পাশাপাশি কলকাতার পুলিশ কমিশনার তথ্য নষ্ট করেছেন, তার প্রমাণ দিতেও নির্দেশ দেন তিনি। তখনই তিনি বুঝিয়ে দেন, অভিযোগ প্রমাণ হলে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সূত্রের খবর, রাজনৈতিক কারণে সারদা মামলায় তাঁকে হেনস্থা করার অভিযোগ করে গত অক্টোবরেই তৎকালীন সিবিআই প্রধান অলোক বর্মাকে চিঠি দিয়েছিলেন রাজীব কুমার। তাঁর অভিযোগের আঙুল ছিল মোদী-ঘনিষ্ঠ রাকেশ আস্থানার দিকে। আস্থানার সঙ্গে বর্মার সংঘাত থাকায় আস্থানা শিবির অভিযোগ তোলে, রাজীব কুমারের বিরুদ্ধে মামলা লঘু করে দিয়েছে বর্মা শিবির। রবিবারই ছিল অন্তর্বর্তী সিবিআই প্রধান হিসেবে নাগেশ্বর রাওয়ের শেষ দিন। তৃণমূলের অভিযোগ, সে কারণেই তড়িঘড়ি ওই অভিযানের নির্দেশ দিয়েছিলেন শাসক-ঘনিষ্ঠ নাগেশ্বর।
(বাংলার রাজনীতি, বাংলার শিক্ষা, বাংলার অর্থনীতি, বাংলার সংস্কৃতি, বাংলার স্বাস্থ্য, বাংলার আবহাওয়া -পশ্চিমবঙ্গের সব টাটকা খবরআমাদের রাজ্য বিভাগে।)