নিহত সাগর ঘোষের পরিবারের আপত্তি অগ্রাহ্য করেই বিশেষ তদন্তকারী দলের (সিট) দাখিল করা চার্জশিট গ্রহণ করল সিউড়ি আদালত।
বৃহস্পতিবার সিউড়ির মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যজিস্ট্রেট ইন্দ্রনীল চট্টোপাধ্যায়ের এজলাসে উপস্থিত হন নিহতের স্ত্রী সরস্বতী ঘোষ। গত ১৬ জুলাই সিউড়ি আদালতে সিট পাড়ুই-কাণ্ডের চার্জশিট জমা দিয়েছিল। তারই প্রেক্ষিতে নিহতের পরিবারের কোনও বক্তব্য আছে কিনা, তা জানাতে বিচারক সরস্বতীদেবীকে আদালতে হাজির থাকার নির্দেশ দেন। সমন পেয়ে এ দিন বৃদ্ধা মাকে নিয়ে আদালতে যান নিহতের ছেলে হৃদয় ঘোষ। সরকারি আইনজীবী কুন্তল চট্টোপাধ্যায় বলেন, “সিউড়ি আদালতের ওই চার্জশিট গ্রহণ করার ব্যাপারে নিহতের পরিবারের আইনজীবী আপত্তি জানিয়েছিলেন। কিন্তু নিজের আবেদনের প্রেক্ষিতে তিনি কোনও নথি দাখিল করতে পারেননি। বিচারপতি ওই আবেদন নাকচ করেছেন।” এর পরেই মামলার বিচার প্রক্রিয়া শুরু হবে।
এ দিন দুপুর আড়াইটে নাগাদ শুনানি শুরু হয়। এজলাসে দাঁড়িয়ে প্রথমেই সরস্বতীদেবীর আইনজীবী রাজেন দে বিচারকের কাছে একটি আবেদন পেশ করেন। তিনি জানান, সিট-এর উপরে রাজনৈতিক চাপ রয়েছে। তদন্তে সেই ছাপ পড়েছে। নিহতের পরিবার এই তদন্তে একেবারেই সন্তুষ্ট নন। তাই তাঁরা এই হত্যাকাণ্ডের তদন্তভার যাতে সিবিআই-কে দেওয়া হয়, সেই আর্জি জানিয়ে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন। রাজেনবাবু বলেন, “ইতিমধ্যেই ওই মামলার প্রেক্ষিতে ঘটনার তদন্তের ভার কেন সিবিআই-কে দেওয়া হবে না, হাইকোর্ট রাজ্য সরকারকে হলফনামা দিয়ে তা জানাতে নির্দেশ দিয়েছে। এ ব্যাপারে হাইকোর্টে ফয়সালা না হওয়া পর্যন্ত আদালত যেন সিট-এর পেশ করা চার্জশিট গ্রহণ না করে।” বিচারক তখন জানতে চান, এ ব্যাপারে উচ্চ আদালতের কোনও নির্দেশ বা স্থগিতাদেশ তাঁর কাছে আছে কিনা। রাজেনবাবু অবশ্য এমন কিছু দেখাতে পারেননি। এর পরেই উঠে দাঁড়ান সরকারি আইনজীবী। রাজেনবাবুর বক্তব্যের বিরোধিতা করে তিনি বলেন, “হাইকোর্টের তত্ত্বাবধানে সিট যথার্থ ভাবেই ঘটনার তদন্ত করেছে।”
সরকারি আইনজীবীর ওই বক্তব্য শোনার পরে বিচারক এ বার সরাসরি সরস্বতীদেবীকেই প্রশ্ন করে জানতে চান, চার্জশিটে প্রথমে ধৃত চার জনের নাম বাদ দেওয়া নিয়ে তাঁর আপত্তি রয়েছে কিনা। কাঠগড়ার দাঁড়িয়ে বৃদ্ধা সরস্বতীদেবী এ দিন প্রথম থেকেই গুটিয়ে ছিলেন। প্রশ্ন শুনে খানিকটা ঘাবড়েই তিনি ক্ষীণ স্বরে যা বললেন, তা ঠিক ভাবে শোনা যায়নি। তবে, সরস্বতীদেবীর জবাব শেষ হতে না হতেই বিচারককে কুন্তলবাবু জানান, সিট-এর কাছে যাঁরা গোপন জবানবন্দি দিয়েছেন, তাঁরা কেউ-ই ওই চার জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেননি। তাঁদের ঘটনার সঙ্গে যুক্ত থাকার প্রমাণও মেলেনি।
ঘটনা হল, সাগরবাবুর খুনের পরে পুলিশ চার জনকে গ্রেফতার করেছিল। নিহতের পরিবার অবশ্য প্রথম থেকেই তাঁদের নিরপরাধ বলে জানিয়েছিল। ওই ধৃতদের রুজু করা মামলার পরিপ্রেক্ষিতেই হাইকোর্ট প্রথমে সিআইডি-কে ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দেয়। কুন্তলবাবুর দাবি, এ দিন বিচারকের প্রশ্নের উত্তরে সরস্বতী ‘আপত্তি রয়েছে’ বলে জানিয়েছেন। এজলাস থেকে বেরিয়ে সরস্বতীদেবী নিজে অবশ্য দাবি করেন, “সবাই আমার দিকেই তাকিয়ে ছিল। খুব ঘাবড়ে গিয়েছিলাম। ভাবলাম, বিচারক অনুব্রত মণ্ডলদের নাম বাদ পড়ার কথা বলছেন। তাতেই আপত্তি রয়েছে বলে জানালাম।” একই দাবি তাঁর ছেলেরও। হৃদয়বাবু বলেন, “এজলাসে বাবার দুই খুনি ভগীরথ ঘোষ আর সুব্রত রায়ও ছিল। চোখের সামনে বাবাকে গুলি করতে দেখার পরে মা এই প্রথম ওঁদের দেখলেন। ভয়ে গুটিয়ে গিয়েছিলেন।” শুনানির প্রায় চল্লিশ মিনিট পরে বিচারকের নির্দেশ আসে। তাতে দেখা যায়, আদালত সিট-এর দাখিল করা চার্জশিট গ্রহণ করেছে। এ দিনই জামিনের আবেদন নাকচ করে বিচারক চার্জশিটে নাম থাকা ভগীরথ আর সুব্রতকে ১৪ দিনের জেল হাজতে পাঠিয়েছেন।