কলকাতায় ঘাঁটি গেড়ে ঢাকায় সন্ত্রাসের ছক কষছিল ধৃত জঙ্গিরা

সামশাদদের সঙ্গে ধরা পড়েছে মনোতোষ দে ওরফে শ্যামল দে ওরফে জিয়ারুল নামে এক স্থানীয় অস্ত্র ব্যবসায়ী। কিন্তু এবিটি-র আরও কয়েক জন সদস্য বাংলাদেশ থেকে এসে কলকাতায় ঘাঁটি গাড়ার কাজে যুক্ত ছিল বলে গোয়েন্দাদের ধারণা। তাদের খোঁজে তল্লাশি চলছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ নভেম্বর ২০১৭ ০৪:০৯
Share:

ধৃত: (বাঁ দিক থেকে) মনোতোষ দে, সামশাদ মিয়াঁ ওরফে তনবির, রিয়াজুল ইসলাম ওরফে সুমন। বুধবার আদালতে। ছবি: রণজিৎ নন্দী

এড়ানো গেল আর একটি খাগড়াগড়। বর্ধমানের সেই বিস্ফোরণের পিছনে ছিল জামাত-উল-মুজাহিদিন বাংলাদেশ-এর (জেএমবি) সদস্যরা। মঙ্গলবার লালবাজারের স্পেশ্যাল টাস্ক ফোর্স সামশাদ মিয়াঁ ওরফে তনবির এবং রিয়াজুল ইসলাম ওরফে সুমন নামে যে দুই বাংলাদেশিকে গ্রেফতার করেছে, তারা আনসারুল্লা বাংলা টিম (এবিটি)-এর সদস্য বলে পুলিশের দাবি। কলকাতায় আশেপাশে আস্তানা গেড়ে বাংলাদেশে নাশকতামূলক কাজকর্ম চালানোই তাদের মূল লক্ষ্য ছিল বলেও দাবি করেছেন গোয়েন্দারা।

Advertisement

সামশাদদের সঙ্গে ধরা পড়েছে মনোতোষ দে ওরফে শ্যামল দে ওরফে জিয়ারুল নামে এক স্থানীয় অস্ত্র ব্যবসায়ী। কিন্তু এবিটি-র আরও কয়েক জন সদস্য বাংলাদেশ থেকে এসে কলকাতায় ঘাঁটি গাড়ার কাজে যুক্ত ছিল বলে গোয়েন্দাদের ধারণা। তাদের খোঁজে তল্লাশি চলছে।

খাতায়কলমে মঙ্গলবার কলকাতা স্টেশনের কাছ থেকে সামশাদদের গ্রেফতার করা হয়েছে বলে দেখানো হলেও এসটিএফ সূত্রের খবর, দিন কয়েক আগেই তাদের ধরা হয়েছিল। এই ক’দিন লাগাতার জেরা করার পরে পুলিশের ধারণা, সম্প্রতি এত ভাল জঙ্গি নেটওয়ার্ক আর ধরা পড়েনি। কারণ, বাংলাদেশে বিস্ফোরক পাঠানো এবং কলকাতায় জেহাদি যুবক-যুবতী নিয়োগ করে এবিটি-র সংগঠন তৈরির যাবতীয় প্রস্তুতি সেরে ফেলেছিল সামশাদ, রিয়াজুলরা। স্বরাষ্ট্র দফতরের এক কর্তার কথায়, ‘‘শুধু ঢাকা নয়, বড় বিপদ থেকে বাঁচল কলকাতাও। কিন্তু এদের দলের আরও কয়েকজন অধরা। সংশয় হচ্ছে, এটাই কি একমাত্র মডিউল? যদি আরও মডিউল থেকে থাকে, তাদেরও ধরতে হবে।’’

Advertisement

কেন বড় বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়া গেল তার ব্যাখ্যা দিয়ে স্বরাষ্ট্র দফতরের কর্তারা জানাচ্ছেন, ধৃতদের কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া ডায়েরিতে তাদের পরিকল্পনার যে ছক কষা রয়েছে, তা চমকে ওঠার মতো। তারা কলকাতার বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান, এমনকী বহু বাস স্টপ, রেল স্টেশন পায়ে হেঁটে ঘুরেছে। যা ভবিষ্যতে নাশকতা চালানোর প্রাথমিক ধাপ বলেই গোয়েন্দাদের দাবি। ধৃতেরা কথাবার্তা চালাত প্রোটেক্টেড টেক্সট বা পিটি অ্যাপ ব্যবহার করে। হুন্ডির মাধ্যমে নিয়মিত টাকাও পেয়েছে তারা। সেই সঙ্গে বেশ কয়েক জন স্থানীয় বাসিন্দাকেও তারা নিজেদের দলে নিয়েছিল।

এসটিএফ গোয়েন্দারা জেনেছেন, ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছাত্র সামশাদ মিয়াঁ ওরফে তনবির বনেদি ঘরের ছেলে। তার এক ভাই ইতালিতে থাকেন। ২০১৪ সালে সিলেটে পড়ার সময় জনৈক মামুনের সঙ্গে তার আলাপ হয়। এই মামুনের হাতেই সামশাদের জেহাদের দীক্ষা। মামুনকে বাংলাদেশ পুলিশ আগেই গ্রেফতার করেছে। এসটিএফ-এর ডিসি মুরলীধর শর্মা এ দিন বলেন, ‘‘সামশাদের মগজ ধোলাই করেছিল এবিটি-র বাংলা টিমের প্রধান মেজর জিয়া।’’ তিনি জানান, সামশাদ ও রিয়াজুল দেড় বছর আগে হায়দরাবাদের মান্নেগুড়ার এক কারখানায় কাজ করত। মাস তিনেক পরে ওই কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তারা কর্নাটকের বেলগাঁওতে নির্মাণকর্মী হিসেবে কাজ শুরু করে। গোয়েন্দারা জানাচ্ছেন, সেখানেই ভুয়ো আধার কার্ড ও প্যান কার্ড তৈরি করে সামশাদ। বেলগাঁওতে দু-তিন মাস কাজ করার পরে সামশাদ ও রিয়াজুল পুণেতে যায়। সেখানে কয়েক মাস থাকার পর হায়দরাবাদে ফিরে এসে একটি কম্পিউটার কোর্স করে তারা। এর পরে কয়েক মাস রাঁচী ও পটনায় কাটিয়ে এ বছর দুর্গাপুজোর সময় কলকাতায় আসে। মুরলীধর বলেন, ‘‘ধৃত দুই বাংলাদেশি বিস্ফোরক পদার্থ কেনার জন্য রাঁচী ও পটনায় একাধিক জায়গায় গিয়েছিল। সে ব্যাপারে তথ্যও মিলেছে।’’

আরও পড়ুন: সইদের মুক্তির আদেশ দিল পাক আদালত

সামশাদদের সঙ্গে ধৃত মনোতোষের কাছ থেকে ভারত বা বাংলাদেশের কোনও পরিচয়পত্র পাওয়া না গেলেও ডিসি (এসটিএফ) জানান, সে আগেও একাধিক বার অস্ত্র আইনে গ্রেফতার হয়েছে। মূলত অস্ত্র ব্যবসার কারবারি মনোতোষ বিহারের মুঙ্গের থেকে অস্ত্র কিনত। সে গত ৬ মাসে ৪-৫ বার বাংলাদেশে অস্ত্র পাঠিয়েছিল বলে গোয়েন্দাদের দাবি।

ধৃত তিন জনকে বুধবার দুপুরে কড়া নিরাপত্তায় ব্যাঙ্কশাল কোর্টে তোলা হয়। চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সত্যঅর্ণব ঘোষাল তাদের ১৪ দিন পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন