Advertisement
Mamata-Suvendu

‘রাষ্ট্রদ্রোহী’ কথা বলেছেন মমতা, ‘সরকার পড়ে যেত’ মন্তব্যের পাল্টা শুভেন্দুর

মমতার ‘সরকার পড়ে যাচ্ছিল’ মন্তব্য নিয়ে সরব শুভেন্দু। তৃণমূল অবশ্য তাঁর মন্তব্যকে গুরুত্ব দিতে নারাজ। শাসকদলের দাবি, এক জন ব্যক্তিের সুবিধার্থে কোটি কোটি মানুষের ক্ষতি করছে কেন্দ্র।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং শুভেন্দু অধিকারী। নিজস্ব ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ২০:৪৭
Share:

বাজেট ঘোষণার রাতেই ‘সরকার পড়ে যাচ্ছিল’— মন্তব্যের প্রেক্ষিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে এ বার পাল্টা নিশানা করলেন শুভেন্দু অধিকারী। মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্যের নিন্দা করে বিরোধী দলনেতার মত, ওই মন্তব্য সম্পূর্ণ ‘রাষ্ট্রবিরোধী’ এবং ‘ভিত্তিহীন’। শেয়ার বাজারের পতন রুখতে ‘টাকা চাওয়া’ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী যা দাবি করেছেন, তার ভিত্তিতে শ্বেতপত্র প্রকাশ করারও দাবি জানিয়েছেন শুভেন্দু। অতীতেও নানাবিধ মন্তব্য করে মুখ্যমন্ত্রীকে আক্রমণ করেছেন বিরোধী দলনেতা। কিন্তু এই প্রথম বার তিনি ‘রাষ্ট্রদ্রোহ’ শব্দটি ব্যবহার করায় একে ‘বেনজির’ বলেই মনে করছেন অনেকে। তৃণমূল অবশ্য বিজেপি বিধায়কের মন্তব্যকে গুরুত্ব দিতে নারাজ। শাসকদলের দাবি, একটি সংস্থা বা এক জন ব্যক্তিকে সুবিধা পাইয়ে দিতে কেন্দ্রীয় সরকার কোটি কোটি মানুষের ক্ষতি করছে।

বাজেট ঘোষণার পরের দিন বৃহস্পতিবার বর্ধমানের সভা থেকে কেন্দ্রীয় সরকারকে আক্রমণ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। মমতা দাবি করেছেন, বাজেটের দিনে শেয়ার বাজারে রক্তক্ষরণের জেরে কেন্দ্রীয় সরকার পড়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, ‘‘কাল তো সরকার প্রায় পড়েই যাচ্ছিল! কেন পড়ে যাচ্ছিল? শেয়ার বাজারে ধস নেমে।’’ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কলকাতার মুরলিধর সেন লেনে রাজ্য বিজেপির সদর দফতরে সাংবাদিক বৈঠক করে শুভেন্দুর মন্তব্য, স্কুলের ছোট ছোট বাচ্চাদের সামনে ওই ধরনের মন্তব্য করা মুখ্যমন্ত্রীর একেবারেই উচিত হয়নি। বিরোধী দলনেতার কথায়, ‘‘সম্পূর্ণ রাষ্ট্রবিরোধী মন্তব্য। আমরা যাঁরা জাতীয়তাবাদী, তাঁরা এই মন্তব্যকে গ্রহণ করি না। সরকার পড়ে যাচ্ছিল— এই মন্তব্যের ভিত্তি কী? ওঁর (মুখ্যমন্ত্রী মমতা) কথা কেউ বিশ্বাস করে না।’’

Advertisement

বুধবার কেন্দ্রের বাজেট ঘোষণার দিনে প্রাথমিক ভাবে খুশিই দেখিয়েছিল শেয়ার বাজারকে। কিন্তু তা বেশি ক্ষণ থিতু হয়নি। বাজেট-ভাষণ শেষ হওয়ার পরেই পড়তে শুরু করে শেয়ার বাজার। এতে বিশেষজ্ঞদের একাংশ অবশ্য বাজেটকে না দুষে আঙুল তুলেছেন আদানি গোষ্ঠীর মুখ থুবড়ে পড়া শেয়ারের দিকে। ঘটনাচক্রে, আমেরিকার লগ্নি গবেষণাকারী সংস্থা হিন্ডেনবার্গ রিসার্চের তোলা প্রতারণার অভিযোগে গত কয়েক দিন ধরেই শেয়ার বাজারে ধস দেখা যাচ্ছে। বুধবারও তার অন্যথা হয়নি। মমতার দাবি, চেয়েচিন্তে শেয়ার বাজারের রক্তক্ষরণ আটকানোর চেষ্টা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, ‘‘কাউকে কাউকে রিকোয়েস্ট করা হয়েছে। আমরা জানি তাঁরা কারা। নামগুলি বলে আর তাঁদের অবস্থা দুর্বিষহ করতে চাই না। ৬-৮ জনকে ফোন করেছে। কাউকে ২০ হাজার কোটি টাকা দাও। মানে যাদের শেয়ার পড়ে যাচ্ছিল, তাঁদেরকে দাও। কাউকে বলেছে, ৩০ হাজার কোটি টাকা দাও। কাউকে বলেছে ১০ হাজার কোটি টাকা দাও। এই ভাবে কি সরকার চলে?’’ মমতা অবশ্য আদানি গোষ্ঠীর নাম নেননি।

মমতার মন্তব্যের প্রেক্ষিতে শুভেন্দুর দাবি, কাকে কোথায় টাকা বিনিয়োগ করতে বলা হয়েছে, তা প্রকাশ্যে আনা হোক। মুখ্যমন্ত্রী এই ধরনের ‘আলটপকা’ মন্তব্য আগেও করেছেন বলে দাবি করে বিরোধী দলনেতা বলেন, ‘‘এটা যদি উনি খুব সিরিয়াসলি বলে থাকেন একটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে, তা হলে একটা শ্বেতপত্র প্রকাশ করুন না। কাকে কোথায় টাকা বিনিয়োগ করতে বলা হয়েছিল, উনি জানান সেটা।’’ সাংবাদিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতার সঙ্গে আদানি গোষ্ঠীর কর্ণধার গৌতম আদানির একটি ছবিও প্রকাশ করেছেন শুভেন্দু।

Advertising
Advertising

বিরোধী দলনেতার মন্তব্যের জবাবে তৃণমূল মুখপাত্র তথা রাজ্যসভার সাংসদ শান্তনু সেন বলেন, ‘‘যাঁরা স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় ব্রিটিশদের হয়ে কাজ করেছেন, তাঁদের কাছে জাতীয়তাবাদ শিখব না। যাঁরা নাথুরাম গডসে, সাভারকারের পুজো করেন, তাঁদের কাছে দেশপ্রেমের সংজ্ঞা শিখতে যাব না। একটি সংস্থা বা এক জন ব্যক্তিকে সুবিধা পাইয়ে দিতে কেন্দ্রীয় সরকার যে কত কোটি মানুষের আর্থিক ক্ষতি করতে চলেছে, তা সারা দেশের মানুষ দেখছেন। তাই, যিনি আমাদের নেত্রী সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য করেছেন, তার মন্তব্যের কোনও গুরুত্ব আছে বলে মনে করি না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও পড়ুন
Advertisement