লড়াকু: শিলিগুড়িতে।ছবি: বিশ্বরূপ বসাক
এগারো মাস বাড়ি যাননি। বাগডোগরায় নেমেও জলপাইগুড়ির দিকে রওনা দিতে সময় লাগল বেশ খানিকক্ষণ। কারণ, একাধিক সংবর্ধনা অনুষ্ঠান। কারণ, তিনি যে এখন সেলিব্রিটি। তবু মাকে জড়িয়ে ধরতে, তাঁর হাতে সোনার পদক তুলে দিতে আর তর সইছিল না মেয়ের। শিলিগুড়ি, মাটিগাড়ার অনুষ্ঠান মঞ্চ থেকে সে সব কথাই বললেন স্বপ্না বর্মণ, উত্তরবঙ্গের সোনার মেয়ে।
এ দিন সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে কামতাপুরী ভাষায় দু’কলি গান গাইলেন স্বপ্না। কোলে তুলে আদর করলেন শিশুদের। আর বললেন অনেক অনেক মনের কথা।
শুক্রবার দুপুরে দিল্লি থেকে বিমানে বাগডোগরায় নামেন এশিয়াডে হেপ্টাথলনে সোনাজয়ী স্বপ্না। কয়েক ঘণ্টা ধরে এলাকায় এলাকায় সংবর্ধনা, শুভেচ্ছার ফাঁকেই স্বপ্না জানিয়ে দেন, চোট-জখম, ব্যথা সারিয়ে ২০২০ সালে টোকিও অলিম্পিক্সে পদকই এখন পাখির চোখ। আনন্দ, শুভেচ্ছা, অনুষ্ঠানের পাট চুকিয়ে আগামী দেড়-দুই সপ্তাহের মধ্যে আবার কোচের কড়া নজরদারি, টানা প্র্যাকটিস, খাওয়া-দাওয়ায় নিষেধাজ্ঞায় ঢুকে যেতে চান স্বপ্না। তার মধ্যে সারিয়ে তুলতে চান নিজের পা ও পিঠের চোট। দেশের কোনও রোল মডেল নয়, ব্রিটিশ খেলোয়াড় জেসিকা ইনিসহিলকে দেখেই এগোতে চান স্বপ্না।
তাঁর কথায়, ‘‘গত পাঁচ বছর ধরে শুধুমাত্র পরিবার, কোচ এবং আমি মিলে স্বপ্ন দেখেছি। লড়াই করে সফল হয়েছি। চাকরির প্রয়োজন ছিল। তা নিশ্চিত হয়ে গিয়েছে। এখন গোটা দেশ আমার দিকে তাকাচ্ছে। প্রত্যাশা, চাপ অনেক গুণ বেড়ে গিয়েছে তা বুঝতে পারছি। আমি আমার শেষ অবধি লড়াই করব।’’
এদিন মাটিগাড়ায় থিনটিকাটা এলাকায় কামতাপুরী সংস্কৃতি উৎসবে তাকে নিয়ে যাওয়া হয়। কেপিপি নেতা অতুল রায়ের উদ্যোগে হওয়া অনুষ্ঠানে রাজবংশী ভাষায় দুই লাইন গানও গেয়ে দেন স্বপ্না। সেখানে থেকে আসেন শিলিগুড়ি জার্নালিস্ট ক্লাবের একটি অনুষ্ঠানে। শহরে এসেই স্বপ্না বলেন, ‘‘১১ মাস বাড়ি যাইনি। মা-বাবাকে জড়িয়ে ধরব কতক্ষণে! সোনার পদকটা ওদের হাতে দেব!’’
চোট নিয়ে স্বপ্না জানান, অস্ত্রোপচারের দরকার নেই। ‘রিহ্যাব’ এবং ব্যায়ামের সব মিটবে। তিনি ভরসা রাখেন কোচ সুভাষ সরকারের উপরেই। তাঁর কথায়, ‘‘ওঁর পরামর্শই আমার সব। উনি আমার গুরুদেব।’’ এ দিন সুভাষবাবু ছাড়াও ছিলেন আর এক সাই-র কোচ ওয়াসিম আহমেদও। কেন্দ্র ও রাজ্যের আর্থিক সাহায্যের প্রশ্নে স্বপ্না বলেন, ‘‘আমার তো ১০ টাকাও একসময় ছিল না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ধন্যবাদ। উনি যেটা ভাল মনে করছেন দিয়েছেন। আর আমি তো দিনের শেষে রাজ্যের মেয়েই!’’