রামকৃষ্ণ মিশন সেবা প্রতিষ্ঠান-সহ ২২টি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকে পর্যালোচনা বৈঠকে ডাকা হয়েছিল। ছবি: সংগৃহীত।
অনুদান নিয়ে প্রশ্ন এ রাজ্যে। তা-ও আবার সরকারি তরফে!
সরকারি হাসপাতালের কাছাকাছি অবস্থিত স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা পরিচালিত হাসপাতাল বা ক্লিনিককে অনুদান দেওয়ার যৌক্তিকতা নিয়ে স্বাস্থ্য ভবন প্রশ্ন তুলেছে বলে অভিযোগ উঠল। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলির কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, সরকারি হাসপাতাল থাকলেও রোগীদের ভিড়ের চাপ অনেকটাই সামাল দেন তাঁরা। ফলে যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে কেন?
স্বাস্থ্য পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানগুলির দাবি, প্রতি বছর অক্টোবরের মধ্যে প্রথম কিস্তি এবং মার্চের মধ্যে দ্বিতীয় কিস্তিতে অনুদানের টাকা দেওয়া হত। এ বছর এখনও পর্যন্ত প্রথম কিস্তির অনুদানই দেওয়া হয়নি। এই পরিস্থিতিতে ২২ জানুয়ারি রামকৃষ্ণ মিশন সেবা প্রতিষ্ঠান, রহড়া রামকৃষ্ণ মিশন বয়েজ হোম, ইনস্টিটিউট অব চাইল্ড হেলথ, গণদর্পণ-সহ ২২টি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকে পর্যালোচনা বৈঠকে ডাকা হয়। স্বাস্থ্য ভবনের খবর, সরকারি হাসপাতাল থেকে কম দূরত্বে অবস্থিত স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা পরিচালিত স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানগুলিকে অনুদান দেওয়ার যৌক্তিকতা নিয়ে বৈঠকে প্রশ্ন তোলা হয়। সেই সঙ্গে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলি যে পরিষেবা শহরে দিচ্ছেন, তা প্রত্যন্ত এলাকায় দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
অনুদান প্রশ্নে স্বাস্থ্যভবনের এই দৃষ্টিভঙ্গি মোটেই ‘স্বাস্থ্যকর’ নয় বলে দাবি বৈঠকে হাজির প্রতিনিধিদের একাংশের। তাঁদের বক্তব্য, সরকারি হাসপাতালে অসম্ভব রোগীর চাপ। কারও অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হলে মাস তিনেক পরে সময় পাওয়া যায়। উল্টোদিকে, বেসরকারি হাসপাতালে যা খরচ, তা অনেকের পক্ষে দেওয়া কার্যত অসম্ভব। ফলে নাগরিকদের একটা বড় অংশের ভরসা বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা পরিচালিত এই স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানগুলি।
যদিও স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তীর দাবি, ‘‘স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলির পারফর্ম্যান্স বাড়ানোর জন্য নির্দেশিকা দেওয়া হয়েছে। যেখানে পারফর্ম্যান্স কম, সেখানে অনুদান কমানো হয়েছে। পারফর্ম্যান্স যাতে বাড়ানো যায় সে জন্য পুরো বিষয়টি কড়া ভাবে দেখা হচ্ছে।’’ স্বাস্থ্যভবন সূত্রের খবর, আগামী আর্থিক বছরে সংশ্লিষ্ট স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানগুলির কী পরিকল্পনা রয়েছে এবং বিগত বছরে কী কাজ হয়েছে, তার রিপোর্ট আগামী ১০ ফেব্রুয়ারির মধ্যে চাওয়া হয়েছে।’
যদিও বৈঠকে উপস্থিত এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার প্রতিনিধির কথায়, ‘‘এমন পরিস্থিতির মুখে কখনও পড়তে হয়নি। বলা হচ্ছে, সরকারি হাসপাতালে এত সুযোগ-সুবিধা থাকা সত্ত্বেও রোগীরা আমাদের প্রতিষ্ঠানে আসছেন কেন? রোগীরা কেন আসছেন, তা তো কারও অজানা নয়!’’ রামকৃষ্ণ মিশন সেবা প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের তরফে বলা হয়, অন্যান্য বছর অনেক আগে সরকারি অনুদান পাওয়া যায়। এবার এখনও কিছু পাওয়া যায়নি। স্বাস্থ্যভবনের বক্তব্য, সরকারি সুবিধা যেখানে আছে, তার কাছাকাছি এলাকায় একই রকমের পরিষেবা কেন! সুন্দরবন, ডুয়ার্সের মতো প্রত্যন্ত এলাকায় পরিষেবা দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তা অসম্ভব। এই অনুদানের উপরে অনেক প্রতিষ্ঠান নির্ভরশীল। অন্য ক্ষেত্রে অনুদান যখন দিনে দিনে বাড়ছে, তখন স্বাস্থ্যক্ষেত্রে এই পরিস্থিতি উদ্বেগজনক! এ প্রসঙ্গে অজয়বাবু বলেন, ‘‘সরকারি হাসপাতালের কাছাকাছি অবস্থানের কোনও ব্যাপার নেই। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলি হাসপাতালের পরিপূরক নয়। ওরা অন্য কাজ করে।’’