শারীরিক অবস্থার সামান্য উন্নতি হয়েছে। কিন্তু সোয়াইন ফ্লুয়ে আক্রান্ত প্রাক্তন মন্ত্রী গৌতম দেবের সঙ্কট বুধবারেও পুরোপুরি কাটেনি। এ দিন সকালে তাঁকে ভেন্টিলেশন থেকে বার করা হয়। তবে তিনি ইন্টেনসিভ কেয়ার ইউনিটের একটি পৃথক ঘরেই আছেন।
আট সদস্যের মেডিক্যাল বোর্ড এ দিন দুপুরে গৌতমবাবুকে পরীক্ষা করে। তার আগে বেশ কিছু শারীরিক পরীক্ষানিরীক্ষাও হয়। হাসপাতাল সূত্রের খবর, এখনও তাঁর জ্বর রয়েছে। তবে শ্বাসকষ্ট আগের তুলনায় কম। বুকে কফ জমে যাতে শারীরিক অবস্থার অবনতি না-হয়, সেই জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে জানান চিকিৎসকেরা। আচ্ছন্ন ভাব থাকলেও এ দিন তিনি চিকিৎসকদের সঙ্গে দু’টো-একটা কথাও বলেছেন।
সমস্যা বেড়েছে সোয়াইন ফ্লু তার উপসর্গ কিছুটা বদলে ফেলায়। এই নিয়ে রীতিমতো বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে চিকিৎসক ও রোগী দু’পক্ষেই। সোয়াইন ফ্লু-র ক্ষেত্রে সাধারণ ভাবে বেশি জ্বর, সর্দিকাশি এবং গলা-ব্যথার উপসর্গ থাকে। কিন্তু ইদানীং অনেক ক্ষেত্রেই শরীরের তাপমাত্রা খুব বেশি বাড়ছে না। তবে সর্দিকাশি বেশি, এমন অনেকের নমুনা পরীক্ষা করে সোয়াইন ফ্লু ভাইরাস ‘এইচ১এন১’ পাওয়া গিয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, উপসর্গের এই বদলটা খুবই বিপজ্জনক। মরসুম পরিবর্তনের এই সময়টায় অনেকেরই সর্দিকাশি লেগেই থাকে। সারা ক্ষণ গা ম্যাজম্যাজ করে। ঠান্ডা লাগার এই সব সাধারণ উপসর্গ নিয়ে কেউ বিশেষ মাথা ঘামান না। ফলে ডাক্তারের কাছেও যান না অধিকাংশ মানুষ। সেই জন্যই বহু ক্ষেত্রে রোগটা ধরা পড়ছে দেরিতে।
এই অবস্থায় চিকিৎসকদের পরামর্শ, জ্বর বেশি থাক বা না-থাক, সর্দিকাশি এবং হাঁচি যদি বেশি হয়, সব সময়ে যদি ক্লান্ত লাগে এবং আলোর দিকে তাকাতে অসুবিধা হয়, সেগুলোকে অবহেলা না-করে দ্রুত ডাক্তার দেখিয়ে নেওয়াই শ্রেয়।
সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে এ দিনও উপচে পড়েছে জ্বরের রোগী। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী হাসপাতালে ভর্তি না-হলে কারও সোয়াইন ফ্লু পরীক্ষা করা যাচ্ছে না। তাই সকলেই চাইছেন ভর্তি হতে। ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কলেরা অ্যান্ড এন্টেরিক ডিজিজেজ (নাইসেড)-এ পরীক্ষা হচ্ছে নিখরচায়। তাই সরকারি হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার জন্য ভিড় বেশি। কারণ, সেখানে ভর্তি হলে নমুনা পরীক্ষার জন্য টাকা লাগবে না। কিন্তু সরকারি হাসপাতালে এমনিতেই রোগীর চাপ খুব বেশি। তাই শয্যার ব্যবস্থা করতে নাভিশ্বাস ওঠার জোগাড় প্রায় সর্বত্রই। এরই মধ্যে আবার রোগী প্রত্যাখ্যান করা যাবে না বলে স্বাস্থ্যকর্তাদের কড়া নির্দেশ রয়েছে। ফলে পরিস্থিতি সামাল দিতে প্রায় সব হাসপাতালেই পৃথক কিছু শয্যার ব্যবস্থা করতে হয়েছে।
সোয়াইন ফ্লুয়ে প্রাণহানির বিরাম নেই। এ দিন কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ওই রোগে এক বৃদ্ধার মৃত্যু হয়েছে। এই নিয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ২৩।
এ-পর্যন্ত চিকিৎসার পরে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ২৭৩ জন।
এখনও ৬২ জন ভর্তি আছেন হাসপাতালে। রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব মলয় দে জানান, এ দিন আরও ১৮ জনের থুতুর নমুনায় সোয়াইন ফ্লু-র ভাইরাস ধরা পড়েছে। সব মিলিয়ে আক্রান্তের সংখ্যা ৩৫৮।