তেজেন্দ্র বাগ্গা।
কলকাতায় নামার দু’ঘণ্টার মধ্যে পত্রপাঠ দিল্লিতে ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হল বিজেপি-র সর্বভারতীয় নেতা তেজেন্দ্র বাগ্গাকে। মহরমের দিন দুর্গা প্রতিমা বিসর্জন বন্ধ রাখার যে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, তার জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ‘চ্যালেঞ্জ’ জানাতে তিনি কলকাতা যাচ্ছেন বলে টুইটে নিজেই জানিয়েছিলেন বাগ্গা। তার ফলে রাজ্যে পিঠোপিঠি দুই উৎসবকে ঘিরে অশান্তি বাধানোর চেষ্টা হতে পারে, এই যুক্তি দেখিয়ে শনিবার তাঁকে শহরে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। তিনি বিজেপি-র অন্যতম সর্বভারতীয় মুখপাত্রও।
রাজ্য সরকারের তরফে জানানো হয়েছে, রাজ্যে অশান্তি বাধানোর চেষ্টা করা হলে তা আটকানো হবেই। ওই ব্যক্তি গোলমাল বাধাতেই এখানে এসেছিলেন। এমন চেষ্টা যে-ই করবে, তাকেই আটকানো হবে। বিসর্জন ও মহরমকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা তৈরির জন্য বাইরে থেকে লোক আনা হতে পারে, পুজোর আগে থেকেই বারবার বলছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। বাগ্গার টুইট ও কলকাতায় আসার ঘটনাকে রাজ্য সরকার সেই পরিপ্রেক্ষিতেই দেখছে। সরকারের এক শীর্ষ সূত্রের বক্তব্য, বাইরে থেকে যে সত্যিই লোক আসছে, এ বার প্রমাণ হয়ে গেল!
বিজেপি-র কেন্দ্রীয় সম্পাদক রাহুল সিংহ অবশ্য বলেন, ‘‘বাগ্গা কিছু টুইট করেছিলেন তো কী হয়েছে? তিনি কোনও অশান্তি বাধিয়েছিলেন, এমন তথ্য তো প্রশাসনের কাছে নেই! অথচ তাঁকে যে ভাবে ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হল, তাতে এ রাজ্যে গণতন্ত্রের অভাব স্পষ্ট। আরও বোঝা যাচ্ছে, মমতার সরকার বিজেপি-কে ভয় পাচ্ছে!’’
আরও পড়ুন: বিসর্জন থেকেই নতুন বোধনের প্রস্তুতি রাজ্য রাজনীতিতে
আরও পড়ুন: উৎসবের মেজাজে অন্য মিছিল পাহাড়ে
দশমীর পরে রাজ্যে গোলমাল পাকানোর ছক তাদের রয়েছে বলে একটি সংগঠনের এক কর্মীর স্বীকারোক্তি সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে একটি সর্বভারতীয় সংবাদপত্রে। তার জন্য মজুত করা হয়েছে বোমা, গুলি, টাঙ্গি। বিজেপি-র নেতারাও ওই ছকের বিষয়ে পুরোপুরি অবহিত বলে ওই কর্মীর দাবি। সেই খবরের পরে আরও বাড়তি সতর্কতা নিয়েছে রাজ্য প্রশাসন। বাগ্গাকে আটক করে ফিরিয়ে দেওয়া সতর্কতামূলক পদক্ষেপ বলেই প্রশাসনিক সূত্রের বক্তব্য। উত্তেজনা মোকাবিলার চেষ্টায় সরকার পাশে পেয়েছে বিরোধীদেরও। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র বলেছেন, ‘‘বাংলার মানুষই এ সব ছক রুখে দেবেন। বাংলায় অশান্তি চলবে না।’’ আর বাগ্গার ‘চ্যালেঞ্জ’ দেখে টুইটেই দিল্লির কংগ্রেস মুখপাত্র শর্মিষ্ঠা মুখোপাধ্যায় বাইরের লোক গিয়ে বাংলায় অশান্তি বাধানোর পরিকল্পনা প্রতিহত করার আর্জি জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতাকে।
কলকাতা বিমানবন্দর সূত্রের খবর, দশমীর সকালে ১১টা ৪০ মিনিট নাগাদ দিল্লির উড়ান থেকে কলকাতায় এসে নামেন তেজেন্দ্র। বিমানবন্দরের নতুন টার্মিনালের এক তলায় ‘অ্যারাইভাল’ এলাকায় আগে থেকেই উপস্থিত ছিল কলকাতা পুলিশের একটি দল। তেজেন্দ্র নিজের ব্যাগ নিয়ে এগিয়ে আসতেই পুলিশের ওই দলটি তাঁর পথ আটকায়। তাঁকে বুঝিয়ে টার্মিনালের দোতলায় নিয়ে যাওয়া হয়। দিল্লিগামী অন্য উড়ানের টিকিট কাটিয়ে তাঁকে ফেরত পাঠানো হয়। বিমানবন্দর সূত্রে জানা গিয়েছে, তেজেন্দ্র একাই ছিলেন। তিনি বিশেষ প্রতিবাদ না করেই ফেরত চলে যান।
তবে পরে বাগ্গা টুইট করেন, ‘‘কাপুরুষ মমতা আমাকে বিমানবন্দর থেকেই দিল্লি ফেরত পাঠালেন! কলকাতা পুলিশ বলেছে, তাদের উপরে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ আছে।’’ ফেরত পাঠানোর নির্দেশকে ‘ধিক্কার’ জানিয়ে বাংলার বিজেপি-র তরফেও টুইটে প্রশ্ন তোলা হয়েছে, ‘‘বৈধ কাগজপত্র থাকা সত্ত্বেও বাগ্গাকে কেন ফেরত পাঠানো হল? তিনি এক জন নাগরিক। রাজ্য সরকারের কাছে এর জবাব চাই।’’