‘বন্দি’ তাপসের পাশে কেবল স্ত্রী নন্দিনী

ভুবনেশ্বরের জেলে গিয়েই অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন ‘দাদার কীর্তি’-র নায়ক। বন্দিজীবনের প্রায় গোটাটাই কেটেছে হাসপাতালে। সেই হাসপাতালেই তাঁর সঙ্গে ‘অ্যাটেনড্যান্ট’ হিসেবে রয়েছেন স্ত্রী নন্দিনী। তিনিই জানান, আজকাল প্রায়ই কান্নাকাটি করেন তাপস।

Advertisement

দেবারতি সিংহচৌধুরী

কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৩:০২
Share:

তাপস পাল। —ফাইল চিত্র।

দিনরাত তিনি শুয়ে থাকেন। স্ত্রী ধরে ধরে বসিয়ে দেন কখনও। ভুবনেশ্বরের বেসরকারি হাসপাতালের ৩৩২ নম্বর কেবিনে ‘বন্দি’ তাপস পাল কেঁদে ফেলেন। বারবার জানতে চান, ‘‘কবে ছাড়া পাব?’’

Advertisement

‘ছাড়া’ মানে জামিন। রোজ ভ্যালি মামলায় সিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতার হওয়া কৃষ্ণনগরের তৃণমূল সাংসদ খাতায়-কলমে তো জেল হেফাজতেই রয়েছেন। আট মাস কাটতে চলল। ভুবনেশ্বরের জেলে গিয়েই অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন ‘দাদার কীর্তি’-র নায়ক। বন্দিজীবনের প্রায় গোটাটাই কেটেছে হাসপাতালে। সেই হাসপাতালেই তাঁর সঙ্গে ‘অ্যাটেনড্যান্ট’ হিসেবে রয়েছেন স্ত্রী নন্দিনী। তিনিই জানান, আজকাল প্রায়ই কান্নাকাটি করেন তাপস।

একই হাসপাতালে একই মামলায় বিচারাধীন বন্দি হিসেবে থাকা তৃণমূল সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় জামিন পেয়েছেন মাস তিনেক আগে। সুদীপবাবু এখন রাজনীতিতে ব্যস্ত। ‘উদ্বিগ্ন’ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁকে দেখতে ভুবনেশ্বরে গিয়েছিলেন। তাপসের সঙ্গেও দেখা করেছিলেন। কিন্তু তার পর আর পাত্তা নেই নেতাদের। দলেও ‘উদ্বেগ’ শোনা যায় না তাপসকে নিয়ে। শনিবার ভুবনেশ্বর থেকে নন্দিনী ফোনে বললেন, ‘‘আমার সঙ্গে দলের কারও কথা হয় না। হয়তো দলের কেউ আমার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন না! তবে মনে হয়, দল নিশ্চয়ই পাশে রয়েছে।’’ দলের কেউ আর তাঁর স্বামীর সঙ্গে যোগাযোগ কেন করেন না, সে প্রশ্ন শুনে নন্দিনীর জবাব, ‘‘ওঁরা কি বারবার আসতে পারেন?’’

Advertisement

আরও পড়ুন:গুরুঙ্গদের ধরতে চিঠি

দীর্ঘদিনের সহকর্মী তাপসকে দেখতে যাননি তাঁর ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত, সাংসদ-অভিনেত্রী শতাব্দী রায়। কেন যাননি, জানতে চাইলে শতাব্দী বলেন, ‘‘যাওয়ার পরিকল্পনাই হয়নি কখনও।’’ যাওয়ার ইচ্ছে রয়েছে কি? শতাব্দীর জবাব, ‘‘দল যেতে বললে যাব।’’ আসলে অনেকেই যে দূরে সরে গিয়েছেন, তা স্পষ্ট নন্দিনীর কথাতেই। তাপস-জায়া বললেন, ‘‘আইনজীবীর খরচ আমিই দিই। চিকিৎসার খরচও আমাদের।’’

দিনে ৪২টা ওষুধ খেতে হয় তাপসকে। মাত্রাতিরিক্ত মধুমেহ-সহ নানান শারীরিক সমস্যার জন্য নিয়মিত ফিজিওথেরাপি চলছে তাঁর। নন্দিনী বলছিলেন, ‘‘তাপস খুবই অসুস্থ। চিকিৎসকেরা বলছেন, ওঁর সুস্থ হতে সময় লাগবে। হাঁটতে-চলতে এখন আর পারেন না। কোনও মতে ধরে ধরে বিছানায় বসাতে হয়। ক্ষীণ হচ্ছে চোখের দৃষ্টিও।’’ স্ত্রী আরও জানালেন, তাপস এখন খুব একটা কথাও বলেন না। বারবার করে ‘সাঁই অমৃতচরিত’ পড়ে শোনাতে বলেন। আর বলেন, ‘‘কবে ছাড়া পাব!’’

আবার কবে শুনানি? অবাক করেই নন্দিনী বললেন, তিনি জানেন না! বললেন, ‘‘শেষ কবে শুনানি হয়েছে, মনে পড়ছে না। আবার কবে শুনানি, তা-ও জানি না!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন