মঞ্চে বসে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়। তাঁর সামনেই পরিবহণমন্ত্রী এবং সরকারের প্রতি অনাস্থা প্রকাশ করলেন বেঙ্গল ট্যাক্সি অ্যাসোসিয়েশনের নেতা বিমল গুহ। মঙ্গলবার সুজাতা সদনে এই ঘটনার পরে তৃণমূলের অন্দরেই নতুন করে জল্পনা শুরু হয়েছে। মুকুলবাবু অবশ্য এ নিয়ে মন্তব্য করতে চাননি। মদন মিত্রও ‘মুকুল হয়তো বিষয়টি জানেন না’ বলে এড়িয়ে যেতে চেয়েছেন।
সম্প্রতি সারদা-সহ নানা প্রশ্নে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দূরত্ব ক্রমেই বেড়েছে মুকুল রায়ের। এমনকী, দলের সাংগঠনিক দায়দায়িত্ব থেকেও মুকুলকে অনেকটাই অব্যাহতি দিয়েছেন নেত্রী। এই অবস্থায় মুকুলের সামনে বেঙ্গল ট্যাক্সি অ্যাসোসিয়েশনের আন্দোলন ঘোষণা যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছেন রাজনীতিকরা।
বিমলবাবু বলেন, “হাওড়ায় ট্যাক্সি ঢুকলেই পুলিশ নো পার্কিংয়ের কেস দেয়। ২ নভেম্বর পর্যন্ত দেখা হবে। এর পরেও পুলিশি জুলুম বন্ধ না হলে ট্যাক্সি বয়কট করা হবে।” অর্থাৎ, ট্যাক্সি আর হাওড়া স্টেশনে যাবে না। লক্ষ্যণীয় ভাবে ওয়েস্ট বেঙ্গল ড্রাইভার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের মুখ্য উপদেষ্টা মুকুলবাবু নিজের বক্তব্যে এই বয়কটের ডাকের কোনও প্রতিবাদ বা সমালোচনা করেননি। তিনি সেই প্রসঙ্গে না গিয়ে বলেন, “পুলিশি জুলুমের নির্দিষ্ট মামলার তালিকা যদি সংগঠনের নেতারা আমার কাছে জমা দেন, তবে বিষয়টি অবশ্যই মুখ্যমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করব।” এর আগে পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্রকে অন্ধকারে রেখে একাধিক বিষয়ে বৈঠক করেছেন মুকুলবাবু। বাসমালিকদের সঙ্গে দফায় দফায় আলোচনা করে শেষে মুখ্যমন্ত্রীকে ভাড়াবৃদ্ধিতে রাজি করিয়েছিলেন। সেই নিয়ে ঘনিষ্ঠমহলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মদনবাবু। তবে এ দিন প্রকাশ্যে তিনি বিষয়টি আমল দিতে চাননি। বলেছেন, “মুকুল হয়তো গোটা বিষয়টি জানেন না। ট্যাক্সি সংগঠনের নেতাদেরও ভাল ভাবে চেনেন না। পুলিশের জুলুমের প্রতিবাদে হাওড়ায় ট্যাক্সি বয়কট হলে তা সরকারের বিরুদ্ধেই যাবে। সেটা নিশ্চয়ই মুকুল চাইবেন না। আমি ওঁর সঙ্গে কথা বলব।” আর বিমলবাবুর বয়কটের ডাকের প্রেক্ষিতে তাঁর বক্তব্য, “উনি (বিমলবাবু) অনেক কিছুই বয়কট করেছেন। কিন্তু তার পরে কোনও প্রভাব পড়েনি। আরও বেশি করে হাওড়ায় ট্যাক্সি যাবে।”
তবে দলের অন্দরে এই নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। তৃণমূলের এক শীর্ষ নেতার বক্তব্য, “অনেক ক্ষেত্রেই এখন মুকুল এবং তাঁর পুত্র ঠারেঠোরে দলের কিংবা সরকারের কাজকর্মের বিরোধিতা করছেন। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর দূরত্বও বাড়ছে। ট্যাক্সিমালিকদের তাঁর সামনেই সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের ডাক দেওয়ার ঘটনা যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ।”