ছেলের আবদার, দোল খেলতে হবে। কল্যাণীর ‘বি’ ব্লকের বাসিন্দা স্কুল শিক্ষক মনোরঞ্জন শাসমল তাই বছর সাতেকের ছেলেকে নিয়ে গিয়েছিলেন বাড়ির কাছেই পার্কে।
ছেলের পিচকারি মেরামত করতে গিয়ে আচমকা রং ছুটে গিয়ে লাগে সামনে দিয়ে যাওয়া পুলিশের গাড়িতে। রঙের ছিটে লাগে গাড়ির সামনের আসনে বসে থাকা থানার এএসআই সুমন ঘোষের জামায়। সেই ‘অপরাধে’ই মনোরঞ্জনবাবুকে বেধড়ক মারধর করেই ক্ষান্ত হননি কল্যাণী থানার ওই পুলিশ কর্মী। গ্রেফতার করে তাঁকে থানাতেও নিয়ে যাওয়া হয়। মনোরঞ্জনবাবু মিনতি করেন, নাবালক ছেলে পার্কে একা, তাকে অন্তত বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হোক। কান দেননি ওই পুলিশ কর্মী। ঘটনাটি জানাজানি হতেই স্থানীয় বাসিন্দারা থানায় গিয়ে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করলে অবশ্য ছেড়ে দেওয়া হয় ওই শিক্ষককে। পরে থানায় গিয়ে ওই এএসআই-এর বিরুদ্ধে অভিযোগ জানাতে চাইলেও তাঁকে শুনতে হয়— ‘বাড়ি ফিরে যান, কী দরকার ঝামেলা বাড়িয়ে!’
ঘটনাটি নির্বাচন কমিশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিকদের জানানোর পরে নড়েচড়ে বসেছে পুলিশ। মনোরঞ্জনবাবু নিজেও বিধানসভা নির্বাচনে প্রিসাইডিং অফিসারের দায়িত্ব পেয়েছেন। কল্যাণীর এসডিপিও কৌস্তভকান্তি আচার্য বলেন, ‘‘শুনেছি। যথাযথ তদন্ত হবে।’’ রাতে, নদিয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অজয় প্রসাদ জানান, ওই পুলিশ কর্মীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
তবে, বৃহস্পতিবার সকালেও থানায় দেখা গিয়েছে ওই পুলিশ কর্মীকে। নির্বিকার গলায় তিনি দাবি করেন, ‘‘আমার গায়ে রং দেওয়া হয়েছিল বলেই গ্রেফতার করি। তবে, মারধর করিনি।’’ মনোরঞ্জনবাবুর স্ত্রী সোমাদেবী বলেন, ‘‘স্থানীয় এক মহিলা আমার ছেলেকে কান্নাকাটি করতে দেখে তাকে বাড়ি পৌঁছে দেন।’’ তিনি জানান, বাবাকে ওই ভাবে মারধর করতে দেখে তাঁর ছেলে সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছে। কথা পর্যন্ত বলতে পারছে না।
সিপিএম নেতা তথা কল্যাণীর প্রাক্তন পুরপ্রধান শান্তনু ঝা বলেন, ‘‘এ কোন দেশে বাস করছি আমরা।’’ একই বক্তব্য কল্যাণী ব্লক তৃণমূল সভাপতি অরূপ মুখোপাধ্যায়েরও। তিনি বলেন, ‘‘খুবই অন্যায় ঘটনা। দলের পক্ষ থেকে থানায় অভিযোগ জানানো হয়েছে।’’