নানা মত শিক্ষকদের

সিডি-ডিভিডি কি টিউশনের বিকল্প

ব্ল্যাকবোর্ডের উপরে চকের আঁক কেটে পড়ানোর পদ্ধতি থেকে বেরিয়ে ছাত্রছাত্রীদের একটু অন্য ভাবে শেখাতে এখন উদ্যোগী অনেক শিক্ষক। কম্পিউটারে পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন, প্রোজেক্টরের পাশাপাশি অডিও-ভিস্যুয়াল মাধ্যমের দিকেও এখন ঝুঁকেছেন বহু শিক্ষক। পেন ড্রাইভ বা সিডি করে পাঠ্যবিষয়ের একটা ভিডিও কম্পিউটারে চালিয়ে দিলে ক্লাসঘরের একঘেয়েমি কাটার পাশাপাশি পড়া বোঝাটাও সহজ হয় বলেই মত অভিজ্ঞ শিক্ষকদের একাংশের।

Advertisement

সাবেরী প্রামাণিক

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ জুলাই ২০১৪ ০৩:০১
Share:

ব্ল্যাকবোর্ডের উপরে চকের আঁক কেটে পড়ানোর পদ্ধতি থেকে বেরিয়ে ছাত্রছাত্রীদের একটু অন্য ভাবে শেখাতে এখন উদ্যোগী অনেক শিক্ষক। কম্পিউটারে পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন, প্রোজেক্টরের পাশাপাশি অডিও-ভিস্যুয়াল মাধ্যমের দিকেও এখন ঝুঁকেছেন বহু শিক্ষক। পেন ড্রাইভ বা সিডি করে পাঠ্যবিষয়ের একটা ভিডিও কম্পিউটারে চালিয়ে দিলে ক্লাসঘরের একঘেয়েমি কাটার পাশাপাশি পড়া বোঝাটাও সহজ হয় বলেই মত অভিজ্ঞ শিক্ষকদের একাংশের। তাই বিভিন্ন সরকারি ও সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলেও সিডি ব্যবহার করে পড়ানোর পদ্ধতি বেছে নেওয়া হচ্ছে বলে জানাচ্ছেন শিক্ষক-শিক্ষিকারা।

Advertisement

প্রযুক্তি ব্যবহার করে পঠনপাঠনের এই পদ্ধতি অবলম্বন করার ভাল-মন্দ দু’দিকই আছে। তবে এর সুবিধাই বেশি বলে জানাচ্ছেন অভিজ্ঞ শিক্ষকেরা। তাঁদের মতে, এ ভাবে পড়ানোর বড় সুবিধা হল, এতে ছাত্রছাত্রীদের পক্ষে নতুন বিষয় বোঝা সহজ হয়। টেলিভিশনে কিছু দেখলে যেমন তার ছাপ গভীর ভাবে পড়ে, ভিডিওর মাধ্যমে পড়াশোনাও সেই প্রভাবই ফেলে। তাই, প্রথমে সিডি চালিয়ে বিষয়টি বুঝিয়ে নিয়ে পরে শিক্ষক বা শিক্ষিকা ক্লাসে তা ব্যাখ্যা করলে শেখাটা সহজ হয়।

বিধাননগর সরকারি বিদ্যালয়ের জীবন বিজ্ঞানের শিক্ষক প্রদীপকুমার ঘোষ যেমন মনে করেন, এক বার বই পড়ে নিয়ে তার পরে সিডি দেখলে পড়া বোঝাটা যেমন ছাত্রছাত্রীদের পক্ষে সহজ হয়, তেমনই পরে বিষয়টি ব্যাখ্যা করা সহজ হয় শিক্ষকদের জন্য। ছাত্রছাত্রীদের দিক থেকে দেখেলে কোনও বিষয় ক্লাস বা কোচিংয়ে এক বার বোঝানো হয়ে গেলে সাধারণত ফের বোঝানো হয় না। সিডিতে পরে দেখে বুঝে নেওয়া যায়।

Advertisement

ঝাড়গ্রামের রানি বিনোদমঞ্জরী সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের গণিতের শিক্ষিকা মঞ্জরী সেন জানালেন, অডিও-ভিস্যুয়াল মাধ্যমে পড়াশোনা, গবেষণাগারের কাজকর্ম দেখানো হলে বিষয় সম্বন্ধে ছাত্রছাত্রীদের ধারণা পরিষ্কার হয়। ক্লাসঘরের একঘেয়েমি থেকে স্বাদ বদলও ঘটে। তবে যে সিডি-র সাহায্যে পড়ানো হবে, সেটা যেন সংশ্লিষ্ট বোর্ডের পাঠ্যক্রম মেনে হয়, তা দেখতে হবে। মঞ্জরীদেবী বলেন, “বোর্ড-নির্ধারিত পাঠ্যক্রম মেনে বিষয়গুলির ধারণা ব্যাখ্যা করা হলে পড়ুয়াদের উপকারই হয়।”

অনেকটা মঞ্জরীদেবীর কথারই প্রতিফলন হিন্দু স্কুলের ভৌতবিজ্ঞানের শিক্ষক অনিন্দ্য দে-র কথায়। তাঁর বক্তব্য, “ইন্টারনেট, টেলিভিশনে অভ্যস্ত ছেলেমেয়েদের কাছে পাঠ্যবই একঘেয়ে। বরং ডিভিডি তাদের জন্য আকর্ষক।”

তবে এর খারাপ দিকও জানাচ্ছেন অনেকে। দক্ষিণ কলকাতার একটি স্কুলের গণিতের এক শিক্ষক বলেন, “আমাদের স্কুলে কখনও কখনও সিডি ব্যবহার করে পড়ানো হয়। কিন্তু শিক্ষকের কাছে পড়া বোঝার সুবিধা এতে নেই।” তাঁর মতে, সমস্যা হলে বিভিন্ন ভাবে তা বোঝানো হয় ছাত্রছাত্রীদের। সিডিতে তা সম্ভব নয়। তা ছাড়া, প্রযুক্তি ব্যবহার করে পড়ানো হলে ছাত্রছাত্রীরা পড়াশোনার থেকে পদ্ধতির দিকেই বেশি মনোযোগ দেয়। তাই একাগ্রতা নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে। উত্তর কলকাতার এক স্কুলের প্রধান শিক্ষক বলেন, “বিজ্ঞানের ছোটখাট সংজ্ঞা, পরীক্ষা-নিরীক্ষা সিডি-র সাহায্যে বোঝা যেতে পারে। কিন্তু বিশদ বুঝতে বইয়ের বিকল্প নেই। সাহিত্য, ইতিহাসের ক্ষেত্রেও ডিভিডিগুলি তত সহায়ক নয়।”

তবে সামগ্রিক বিচারে পুরনো পদ্ধতির তুলনায় একটু অন্য ধরনের এই পঠনপাঠনের পথ ছাত্রছাত্রীদের কাছে বেশি আকর্ষক বলে মানছেন অধিকাংশ শিক্ষকই। সম্প্রতি নবম ও দশম শ্রেণির ভৌত বিজ্ঞান, জীবন বিজ্ঞান, গণিতের ডিভিডি তৈরি করেছে একটি সংস্থা। একাদশ, দ্বাদশের ডিভিডি তৈরির কাজ চলছে বলে জানিয়েছেন সংস্থার কর্ণধার বিশ্বজিৎ প্রসাদ।

তিনি বলেন, “বিশিষ্ট শিক্ষকেরা পাঠ্যক্রম ধরে বিষয়গুলি বুঝিয়েছেন। গণিতের বিভিন্ন সমস্যা, বিজ্ঞানের সংজ্ঞা তাঁরা বুঝিয়ে দিয়েছেন। শিক্ষক-শিক্ষিকাদের পরামর্শ নিয়ে তৈরি এই ডিভিডিগুলি ছাত্রছাত্রীদের জন্য বিশেষ সহায়ক হবে বলে আশা করছি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন