দাড়িভিট স্কুলের শিক্ষকরা শুক্রবারও তুলতে পারলেন না অক্টোবরের বেতন। এই নিয়ে প্রশ্ন করা হলে এ দিন কলকাতায় শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমি জানি না, ওঁদের বেতন বন্ধ কি না। নিশ্চয়ই খোঁজ নেব। তবে যাঁরা বেতনের জন্য এত আগ্রহী, তাঁরা স্কুল খুলতে ততটা সচেষ্ট নন কেন? স্কুল বন্ধ থাকবে, আর সরকার বেতন দিয়ে যাবে— এমন তো চলতে পারে না!’’
একে তো মাস মাইনে তুলতে পারছেন না ব্যাঙ্ক থেকে। তার উপরে শিক্ষামন্ত্রীর এই কথায় রীতিমতো ক্ষুব্ধ শিক্ষকদের একাংশ। প্রকাশ্যে কেউ মুখ খুলছেন না। তবে ঘনিষ্ঠ মহলে অনেকেই বলেন, ‘‘দু’দিন গিয়ে স্কুলে ঘুরে এসেছেন পাঁচ জন শিক্ষক। প্রশাসন উদ্যোগী হয়নি বলে সমস্যার সমাধান হয়নি। এখন বেতন বন্ধ। তার উপরে এই সব কথার অর্থ কী!’’
নিয়ম মতো বেতন শিক্ষকদের অ্যাকাউন্টে এসেছে। কিন্তু ব্যাঙ্ক বা এটিএম, কোথাওই এই টাকা তোলা যাচ্ছে না। ইসলামপুরের যে সমবায় ব্যাঙ্কে দাড়িভিট স্কুলের শিক্ষকদের বেতন অ্যাকাউন্ট, সেই ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যান নাসিম আখতার বলেন, ‘‘উত্তর দিনাজপুরের স্কুল পরিদর্শকের নির্দেশেই বেতনের টাকা তুলতে দেওয়া হচ্ছে না।’’ স্কুল পরিদর্শক সুজিতকুমার মাইতিকে একাধিক বার ফোন করা হলেও তিনি তা কেটে দিয়েছেন। হোয়াট্সঅ্যাপ বা এসএমএসের কোনও জবাব দেননি।
এই ব্যাপারে শিক্ষকদের পাশে দাঁড়িয়েছেন বিরোধীরা। সিপিএমের জেলা সম্পাদক অপূর্ব পালের বক্তব্য, ‘‘তৃণমূলের দুই বিধায়কের দ্বন্দ্বের ফলেই স্কুলে গোলমাল পেকে ওঠে। এখন শিক্ষকদের উপরে দায় চাপানো হচ্ছে।’’ বিজেপির জেলা সম্পাদক সুরজিৎ সেনও বলেন, ‘‘শিক্ষকদের অধিকাংশের দোষ কোথায়? অথচ তাঁদের শাস্তি দেওয়া হচ্ছে।’’ দাড়িভিট কাণ্ডে গুলিতে নিহত রাজেশ সরকারের বাবা নীলকমল সরকার বলেন, ‘‘স্কুল খোলাতে প্রশাসনের উদ্যোগী হওয়ার কথা।’’ পার্থবাবু অবশ্য বলেন, ‘‘রাজনীতির প্রশ্ন এখানে অবান্তর। এটা শিক্ষা দফতরের প্রশাসনিক বিষয়।’’
পুজোর পরে স্কুল খোলা নিয়ে কিন্তু বাসিন্দাদের উদ্বেগ কাটেনি। পার্থবাবুর বক্তব্য, ‘‘সংশ্লিষ্ট সকলকে অনুরোধ করব, স্কুলে স্বাভাবিক
পঠন-পাঠন শুরু করতে। কারণ, সামনে পরীক্ষা।’’ তাঁর বক্তব্য, ‘‘আন্দোলনের দাবি নিয়ে আমাদের সঙ্গে কথাবার্তা বলতে পারেন। কিন্তু পুজোর ছুটির পর যে দিন স্কুল খোলার কথা, সে দিন থেকেই ওখানে লেখাপড়া শুরু করুন।’’
মন্ত্রী আরও জানান, তিন বছরের মেয়াদ ফুরনোর পরেও ওই স্কুলের পরিচালন সমিতিতে কোনও বদল হয়নি। তাই নতুন পরিচালন সমিতি গঠন না হওয়া পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট মহকুমাশাসক ওই স্কুলের প্রশাসকের দায়িত্ব পালন করবেন।