Prashant Kishor

ছত্রধরের জনপ্রিয়তা মাপছে পিকে-র দল

রিপোর্ট খতিয়ে দেখে ছত্রধরকে দলে নেওয়ার ব্যাপারে পদক্ষেপ করতে পারে তৃণমূল।

Advertisement

বরুণ দে

মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০১:৩৫
Share:

—ফাইল চিত্র

প্রায় দশ বছর জেল খাটার পরে জামিনে মুক্তি পেয়েছেন ছত্রধর মাহাতো। একসময়ের পুলিশি সন্ত্রাস বিরোধী জনসাধারণের কমিটির এই নেতার জনপ্রিয়তা জঙ্গলমহলে এখন কতটা তা মাপছে ভোট কুশলী প্রশান্ত কিশোরের দল। দলটি সমীক্ষাও শুরু করেছে। সূত্রের খবর, ইতিমধ্যে ছত্রধরের বাড়িতে গিয়ে তাঁর সঙ্গে দেখা করেছেন ওই দলের লোকেরা। ছত্রধর কী চাইছেন, তাঁর কী পরিকল্পনা, সে সব বোঝার চেষ্টা করেছেন তাঁরা। সূত্রের খবর, শীঘ্রই প্রশান্তের দল তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বকে তাদের সমীক্ষার রিপোর্ট দেবে। রিপোর্ট খতিয়ে দেখে ছত্রধরকে দলে নেওয়ার ব্যাপারে পদক্ষেপ করতে পারে তৃণমূল। ওই রিপোর্ট না কি তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছেই পৌঁছবে। এরপর নেত্রীর সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।

Advertisement

প্রশান্ত কিশোরের দলের লোকেরা কি বাড়িতে এসে আপনার সঙ্গে দেখা করে গিয়েছেন? সদুত্তর এড়িয়ে মঙ্গলবার ছত্রধর বলেন, ‘‘এই সময়ের মধ্যে অনেকের সঙ্গে দেখা করেছি। নানা বিষয় নিয়ে কথা বলেছি।’’ পরে ছত্রধরের সংযোজন, ‘‘হতে পারে ওই দলের লোকেরা এসে আমার সঙ্গে দেখা করেছেন, কথা বলেছেন, হয়তো পরিচয় দেননি, জানাননি কোথা থেকে এসেছেন!’’ আপনি কি তৃণমূলে যোগ দেবেন? ছত্রধরের জবাব, ‘‘দেখা যাক কী হয়। যখন এ নিয়ে বলার সময় আসবে, তখন বলব!’’ সূত্রের খবর, সমীক্ষায় নেমে প্রশান্ত কিশোরের দল বুঝেছে, জঙ্গলমহলে এখনও ছত্রধরের জনপ্রিয়তা রয়েছে। নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতাও রয়েছে তাঁর মধ্যে। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক প্রশান্তের দলের এক কর্মীর কথায়, ‘‘জঙ্গলমহলে আন্দোলনপর্বে মাওবাদী হামলায় এখানে অনেকে নিহত হয়েছেন। অনেকে এখনও নিখোঁজ রয়েছেন। ক্ষতিপূরণ, চাকরি না পাওয়া নিয়ে ওই সব পরিবারের লোকেদের কিছু অসন্তোষ রয়েছে। এঁদের সমর্থন হয়তো ছত্রধরের দিকে থাকবে না। কিন্তু বাকি একটা বড় অংশের সমর্থনই ছত্রধরের দিকে থাকবে। সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলে আমরা এটাই বুঝেছি।’’

সূত্রের খবর, তৃণমূলে এসে দলের ভারী পদ পেতে পারেন ছত্রধর। তাঁকে দলের ঝাড়গ্রাম জেলা সভাপতির পদে বসানো হবে কি না সে নিয়েই বিস্তর চর্চা চলছে জঙ্গলমহলে। রাজ্যের এক উন্নয়ন বোর্ডেও না কি আসতে পারেন তিনি। ওই বোর্ডের চেয়ারম্যানও হতে পারেন তিনি। বস্তুত, জেল থেকে জামিনে ছাড়া পেয়েই ছত্রধর জানিয়েছেন, রাজনীতি তিনি ছাড়বেন না। জল্পনা আরও বেড়েছে গত শনিবার ঝাড়গ্রামে তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাতের পরে। এই সাক্ষাৎপর্বকে অবশ্য উভয়েই সৌজন্যমূলক বলে দাবি করেছেন।

Advertisement

জঙ্গলমহলের আদিবাসীদের মধ্যে গেরুয়া শিবিরের প্রভাব বেড়েছে। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের ধারণা, ছত্রধরকে সামনে রেখেই ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটের আগে জঙ্গলমহলের হারানো জমি পুনরুদ্ধারে তৎপর হবে তৃণমূল। সেই জন্যই প্রশান্তের দলকে সমীক্ষায় নামানো। সূত্রের খবর, শুধু লালগড় নয়, বেলপাহাড়ি, নয়াগ্রাম, গোপীবল্লভপুরের মতো এলাকায় গিয়েও সমীক্ষা চালাচ্ছে ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোরের দল। ঝাড়গ্রাম জেলার এক তৃণমূল নেতা মানছেন, ‘‘প্রশান্ত কিশোরের দলের লোকেরা আমাদের কাছে এসেছিলেন। ছত্রধর সম্পর্কিত সহ নানা বিষয় নিয়ে জানতে চেয়েছিলেন।’’

বিজেপি অবশ্য বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে নারাজ। দলের রাজ্য সম্পাদক তুষার মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘রাজনৈতিক স্বার্থে ছত্রধরকে ব্যবহার করা হয়েছে। জেলে পাঠানো থেকে জেল থেকে জামিনে মুক্তি, সবটাই হয়েছে রাজনৈতিক কারণে। জঙ্গলমহলের মানুষ জানেন, জনসাধারণের কমিটি আসলে মাওবাদীদেরই মদতপুষ্ট ছিল।’’ তাঁর দাবি, ছত্রধর এখন জনবিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন