রাস্তা কতটা তৈরি হয়েছে গোসাবার রাঙাবেলিয়ায়? পাথরপ্রতিমার কোন গ্রামে মিড-ডে মিলে কী দেওয়া হয়েছে? কাকদ্বীপে কর্মধারা প্রকল্পের বাড়ি তৈরির কাজ কেমন চলছে? আলিপুরের সদর দফতরে বসেই এগুলো দেখতে পাচ্ছেন দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসনের কর্তারা। সৌজন্যে জিওগ্রাফিক্যাল ইনফর্মেশন সিস্টেম বা জিআইএস প্রযুক্তি।
জেলাশাসক ওয়াই রত্নাকর রাও জানান, এত বড় জেলায় প্রতিটি প্রকল্পের প্রতিটি জায়গায় গিয়ে তাঁর বা অন্য শীর্ষ কর্তাদের নিয়মিত পরিদর্শন করা সম্ভব নয়। তাই এই প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। এর জন্য একটি বিশেষ সফটওয়্যারও তৈরি করানো হয়েছে। নাম দেওয়া হয়েছে ‘মনিট্রা’। জেলা প্রশাসনের একটি সূত্র জানাচ্ছে, অনেক সময়ে নিচু তলার অফিসারেরা পরিদর্শন না-করেই রিপোর্ট পাঠিয়ে দেন। তার ফলে নথি এবং বাস্তবে ফারাক থেকে যায়। পঞ্চায়েত ভোটের আগে সেই ফাঁকি ধরে কাজের খতিয়ান নেওয়াটাও এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য।
জেলাশাসকের কথায়, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রশাসনে স্বচ্ছতা আনার কথা বলছেন। আমরা সেই পথেই চলছি। এমন ব্যবস্থা রাজ্যে এই প্রথম।’’ দক্ষিণ ২৪ পরগনায় মুখ্যমন্ত্রী যে-সব প্রকল্প ঘোষণা করেছেন, সেগুলিও এই ব্যবস্থার অধীনে এনে নজরদারি চালানো হচ্ছে। নজর রাখা হচ্ছে রেশন দোকান, সরকারি-বেসরকারি হোমেও। এই ব্যবস্থার সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়েছে বিভিন্ন খেয়াঘাটের সিসি ক্যামেরাগুলিকেও।
কী ভাবে কাজ করবে এই প্রযুক্তি?
জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, এটি মোবাইল ফোনে অ্যান্ড্রয়েড প্রযুক্তির মাধ্যমে কাজ করবে। প্রতিটি ব্লকে কর্মরত অফিসারদের মধ্য থেকে জিআইএস কো-অর্ডিনেটর নিয়োগ করা হয়েছে। তাঁরা বিভিন্ন প্রকল্পের জায়গায় গিয়ে ছবি তুলে রিপোর্ট পাঠাবেন। সদর দফতরে বসে বা মোবাইলেও শীর্ষ কর্তারা সেই রিপোর্ট দেখতে পারবেন। কোথাও কাজ সন্তোষজনক না-হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাও নেওয়া হবে। এই প্রযুক্তিতে জিপিএস প্রযুক্তি যুক্ত থাকায় কোনও অফিসার সংশ্লিষ্ট জায়গায় না-গিয়ে রিপোর্ট পাঠালে ধরা পড়ে যাবেন। অফিসার ওই জায়গায় আদৌ গিয়েছেন কি না, গিয়ে থাকলে কত দূর গিয়েছেন, কোন পথ ধরে গিয়েছেন, তা-ও দেখিয়ে দেবে জিপিএস।
অফিসারদের কাজের খতিয়ানও নেওয়া যাবে এই ব্যবস্থায়। প্রশাসনের খবর, এসডিও, বিডিও-রা মাসে ক’টি জায়গায় পরিদর্শনে যাচ্ছেন, সেটাও বিশ্লেষণ করে রেখাচিত্র তৈরি করে দেবে এই সফটওয়্যার। রত্নাকর বলেন, ‘‘এই ব্যবস্থায় ভিডিও কলের মাধ্যমে পরিদর্শনে যাওয়া অফিসারের সঙ্গে কথা বলা যাবে, প্রয়োজনীয় নির্দেশও দেওয়া যাবে। সব তথ্য ক্লাউডে সংরক্ষিত থাকায় রিপোর্টে কারচুপি করা সম্ভব হবে না।’’