দর্শক: মেলায় মজেছেন কর্তারা। শুক্রবার কালিম্পংয়ে। —নিজস্ব চিত্র।
মেলার ময়দানে একজন পর্যটকও নেই! ভিড় যেটুকু রয়েছে, তা নানা সম্প্রদায়ের উন্নয়ন বোর্ডের লোকজনের। শুক্রবার দুপুরে কালিম্পংয়ের ‘মেলা গ্রাউন্ডে’ তারই মধ্যে শুরু হল ‘তিস্তা-রঙ্গিত ট্যুরিস্ট ফেস্টিভ্যাল’-এর দ্বিতীয় পর্ব।
কিন্তু স্থানীয় লোকজনের স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতি নেই। নেই পর্যটকেরা। তা হলে ‘এ কেমন পর্যটন উৎসব হচ্ছে’ সেই কটাক্ষ ছুড়েছেন গোর্খা লিগ, জন আন্দোলন পার্টির অনেক নেতা-কর্মীই। যা শুনেছেন জিটিএ-র কেয়ারটেকার বোর্ডের চেয়ারম্যান বিনয় তামাঙ্গও। তাই উদ্বোধনের মঞ্চ থেকেই বিনয় তার উত্তরে গত চার মাস ধরে পাহাড়ের পরিস্থিতির উপরেই দোষ চাপিয়েছেন। তাঁর যুক্তি, ‘‘উৎসব করা মাত্রই পর্যটকদের ভিড় উপচে পড়বে সেটা কখনও বলিনি। তবে এই উৎসবের মাধ্যমে বার্তা যাচ্ছে, পাহাড় আগের চেয়ে অনেক স্বাভাবিক।’’ তাঁর আশা, সে খবর পৌঁছলে দেশ-বিদেশের পর্যটকরা আগামী গ্রীষ্মের মরসুমে ফের
পাহাড়ে ভিড় করবেন। তিনি জানান, সাধারণত পর্যটকরা ৩-৪ মাস আগে থেকেই বেড়ানোর পরিকল্পনা করে থাকেন। সে কথা মাথায় রেখেই ডিসেম্বরের শেষে উৎসব করেছে জিটিএ। যাতে মার্চ-এপ্রিল থেকেই কালিম্পং-দার্জিলিং ফের জমজমাট হয়ে ওঠে।
ঘটনাচক্রে, বিনয় দার্জিলিঙে উৎসবের পাঠ চুকিয়ে দুপুরে যখন কালিম্পঙে উৎসবের সূচনা করতে পৌঁচেছেন, তার আগে মেলার ময়দানের আশেপাশে অনেকেই ‘গোর্খাল্যান্ডের দাবি ভুলে মেলায় মাতব কেন’ সেই প্রশ্ন তুলেছেন। মেলায় ঢোকার মুখে কয়েকজনকে সে কথা বলাবলি করতে শুনেওছেন অনেকে। তা-ও টের পেয়েছেন বিনয়। তিনি অনুষ্ঠান মঞ্চ থেকেই বলেছেন, ‘‘আবেগকে মর্যাদা দিতে হবে। সেটা মাথায় রেখেই সব করছি। কিন্তু, বাস্তব দুনিয়ায় আবেগের চেয়ে যুক্তিকে প্রাধান্য দিতে হবে।’’
কালিম্পং শহরে না থাকলেও ডেলো, লাভা, লোলেগাঁওয়ে কিন্তু পর্যটকদের দেখা গিয়েছে। ডেলোয় প্যারাগ্লাইডিং করতে ভিড় ছিল। ত্রিবেণীতে মাছ ধরতে দেখা গিয়েছে কিছু পর্যটককে। মুর্শিদাবাদের আমিরুল হোসেন, সাবিনা বেগম, বাঁকুড়ার রম্যাণী পোদ্দারের মতো জনা ৫০ পর্যটককে দেখা গেল লাভায়। কেউ ডুয়ার্সে বেড়ানোর ফাঁকে সারা দিন লাভায় ঘুরেছেন। শিক্ষা দফতরের কর্মী রম্যাণী বললেন, ‘‘পাহাড়ে গোলমাল দেখে বর্ষশেষের ডুয়ার্সে বেড়ানোর বুকিং করেছিলাম। এসে উৎসব হচ্ছে শুনে লাভা এলাম।’’ তিনি জানান, সব ঠিক থাকলে গরমের ছুটিতে পাহাড়ে আসবেন।
এতেই আশার আলো দেখছেন সম্রাট সান্যাল, প্রদীপ লামার মতো ট্যুর অপারেটররা। কালিম্পঙের গাড়ি চালক দীপক প্রধান বললেন, ‘‘উৎসবের ছবি, বিডিও সব সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দিচ্ছি। সবাই জানুক পাহাড় পুরোপুরি ছন্দে ফিরতে চাইছে।’’