চড়ছে পারদ, ভোট দিন তাই সকাল সকাল

সামনে কঠিন দিন। তেতে-পুড়ে একশা হওয়ার দিন। তারই মাঝে ভোট। কড়া গরমের চোখরাঙানি আঁচ করে আমজনতাকে হাওয়া অফিসও তাই নিদান দিচ্ছে— আজ বৃহস্পতিবার যত তাড়াতাড়ি পারেন ভোট দিয়ে এসে বাড়িতে সেঁধিয়ে পড়ুন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ এপ্রিল ২০১৬ ০৩:২৯
Share:

অধরা বৃষ্টি। ভরসা পাখায়। শুভাশিস ভট্টাচার্যের তোলা ছবি।

সামনে কঠিন দিন। তেতে-পুড়ে একশা হওয়ার দিন। তারই মাঝে ভোট।

Advertisement

কড়া গরমের চোখরাঙানি আঁচ করে আমজনতাকে হাওয়া অফিসও তাই নিদান দিচ্ছে— আজ বৃহস্পতিবার যত তাড়াতাড়ি পারেন ভোট দিয়ে এসে বাড়িতে সেঁধিয়ে পড়ুন। নচেৎ লাইনে দাঁড়িয়ে রোদের কড়াইয়ে ভাজা ভাজা হওয়ার বিলক্ষণ সম্ভাবনা।

বৃহস্পতিবারের গরমের বহরটা কেমন হতে পারে, পূর্বাভাসে সে ইঙ্গিত স্পষ্ট। আবহবিদেরা জানাচ্ছেন, বর্ধমানে আজ তাপপ্রবাহ বইবে। একই পরিস্থিতি থাকবে কলকাতা, নদিয়া মুশির্দাবাদেও। ভোরের দিকে কিছুটা বাতাস বইলেও বেলা গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে তা মিলিয়ে যাবে। থম মারা গুমোটে থার্মোমিটারের পারা চড়বে লাফিয়ে লাফিয়ে।

Advertisement

অর্থাৎ, তুঙ্গ দুর্ভোগের আভাস। বুধবার কলকাতার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস, স্বাভাবিকের এক ডিগ্রি বেশি। কিন্তু বেশি আর্দ্রতার সুবাদে এ দিনও ঘেমে-নেয়ে নাকাল হতে হয়েছে। বাতাস না-থাকায় ঘাম শুকোয়নি, পরিণামে শরীরের ভিতরকার তাপমাত্রা চড়েছে। সব মিলিয়ে হাঁসফাঁস অবস্থা। আজ তাপমাত্রাও বাড়বে। আবহবিদদের ধারণা, আকাশে যেটুকু মেঘ রয়েছে, বুধবার রাতে তা সরতে শুরু করবে। আর বৃহস্পতিবার বেলা দু’টো নাগাদ মহানগরের তাপমাত্রা পৌঁছে যাবে ৪০ ডিগ্রিতে। বর্ধমানে তা ৪২ ডিগ্রি, বহরমপুরে ৪১ ডিগ্রি ছুঁয়ে ফেলতে পারে। বস্তুত আজ বেলা ন’টা থেকে বারোটা— তিন ঘণ্টার মধ্যে তাপমাত্রা চার ডিগ্রি বাড়ার সমূহ আশঙ্কা।

এমতাবস্থায় নাগরিকদের প্রতি হাওয়া অফিসের পরামর্শ, ‘চেষ্টা করুন সকাল ন’টার আগে ভোট চুকিয়ে ফেলতে।’ তার পরে বুথে গেলে বেশ কিছু সতর্কতা অবলম্বনে জোর দিয়েছে আলিপুর। ক’দিন বিরতি দিয়ে ফের তাপপ্রবাহের আগমন কেন?

কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতরের ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল গোকুলচন্দ্র দেবনাথের ব্যাখ্যা: ‘‘বৃহস্পতিবার থেকে সামুদ্রিক বাতাসে টান পড়বে। কলকাতার তাপমাত্রা চল্লিশ ডিগ্রিতে উঠতে পারে। সঙ্গে জলীয় বাষ্পের উপস্থিতি অস্বস্তি বাড়াবে।’’ বর্ধমান, বহরমপুর, কৃষ্ণনগরেও আজ রীতিমতো লু চলতে পারে।

চলতি মাসে খাস কলকাতায় মহা দাপটে ব্যাট হাঁকিয়েছে শুকনো গরম। এমনকী, গরমের নিরিখে সম্প্রতি মরুশহর জয়সলমেরকেও টেক্কা দিয়েছে কলকাতা। আবহবিজ্ঞানীদের পর্যবেক্ষণ: এ সময় বঙ্গোপসাগরের যে উচ্চচাপ বলয় এ তল্লাটে জলীয় বাষ্প জুগিয়ে থাকে, তা বাংলার উপকূল থেকে সরে যাওয়াতেই বিপত্তি। তার জায়গায় এসে জাঁকিয়ে বসেছে ঝাড়খণ্ডের শুকনো গরম বাতাস। দিন দুয়েক আগে বাংলাদেশ উপকূলের কাছে একটা নিম্নচাপ-অক্ষরেখা দানা বাঁধে। সেটা এখানকার পরিমণ্ডলে কিছুটা জলীয় বাষ্প ঠেলে ঢোকালেও বৃষ্টি নামাতে পারেনি। তাপমাত্রা শুধু সামান্য নেমেছিল। ‘‘অক্ষরেখার জোর কমতেই তাপপ্রবাহ ফের
ধমকি দিতে শুরু করেছে।’’— মন্তব্য এক আবহবিদের।

এ হেন প্রতিকূল পরিস্থিতিতে সুস্থ থাকার জন্য আবহবিজ্ঞানী ও ডাক্তারেরা বলছেন, যতটা সম্ভব রোদ এড়িয়ে চলতে হবে। বয়স্কেরা যেন ভোট দিতে গেলে সঙ্গে কাউকে রাখেন। লালবাজারও হুঁশিয়ার। পুলিশ, কেন্দ্রীয় বাহিনী ও অন্যান্য ভোটকর্মীর জন্য গ্লুকোজ, ওআরএস ও পর্যাপ্ত জলের বন্দোবস্ত থাকছে।

কলকাতায় প্রথম দফার ভোটে মানুষের হাঙ্গামায় আইন-শৃঙ্খলার পরিবেশ তপ্ত হবে কিনা, সময়ই বলবে। তবে প্রকৃতির হাওয়া যে ঘোর গরম হয়ে উঠবে, তা বলার অপেক্ষা থাকছে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন