‘টেনশন ঠাকুর’-এর বেদিতে হু হু করে বাড়ছে ভক্তসংখ্যা।—নিজস্ব চিত্র।
রাস্তায় পড়ে থাকা একটি পাথর যাতায়াতের সময় অসুবিধা তৈরি করছিল বলে সেটিকে রাস্তার ধারে সরিয়ে রাখা হয়েছিল। সেই পাথরকেই দেবতাজ্ঞানে পুজো করা শুরু হয়, মন্দির গড়ে ওঠে। শিবরাম চক্রবর্তীর এ গল্প সুবিদিত। নতুন দেবতার জন্ম হয়েছে কোচবিহার জেলার মেখলিগঞ্জেও। তবে, অন্য চমক রয়েছে। এ দেবতার নাম ‘টেনশন ঠাকুর’। তিনি বেকারত্বের জ্বালা এবং ‘টেনশন’ দূর করেন বলেই ভক্তদের বিশ্বাস।
পূর্বাশ্রমে এই দেবতা পাথরই ছিলেন। কিন্তু মেখলিগঞ্জের নিজতরফ পঞ্চায়েত এলাকায় কে যে কখন সে পাথরকে দেবতাজ্ঞানে বেদিতে স্থাপন করেন, বলা কঠিন! দেবতার মস্তক এবং কণ্ঠদেশের কিয়দংশই দৃশ্যমান। আঁকা হয়েছে দেবতার চোখ এবং গোঁফ। গাত্রবর্ণ সাদা। বেদির রং লাল। পুরোদস্তুর মন্দির গড়ে না উঠলেও টেনশন ঠাকুরের মাথার উপরে রয়েছে ছাউনি। জ্যৈষ্ঠ সংক্রান্তিতে পুজো হয় এই দেবতার। এ বার দ্বিতীয় বছরে পড়েছে। নৈবেদ্য খিচুড়ি। মেখলিগঞ্জ থেকে ভাণ্ডানি হয়ে ময়নাগুড়ি যাওয়ার জল্পেশ রোডের ধারে ‘টেনশন ঠাকুর’-এর বেদিতে হু হু করে বাড়ছে ভক্তসংখ্যা।
তেত্রিশ কোটি দেবদেবীর দেশে নানা লোক-দেবদেবীর জন্ম হয়েছে। মঙ্গলকাব্য জুড়ে তাঁদের অনেকের মাহাত্ম্যকথা। এ দেশে গড়ে ওঠে রাজনীতিকের মন্দিরও, পূজিত হন দল বা সঙ্ঘের প্রতিষ্ঠাতারাও। কিন্তু ‘টেনশন ঠাকুর’ কেন? যে যুক্তিতে বিপত্তারিণী, খানিকটা সেই যুক্তিতেই টেনশন-তারণ দেবতা। পুজোর উদ্যোক্তাদের অন্যতম উজ্জ্বল বর্মণ, জ্যোতিষ বর্মণ, পরিতোষ রায়, দীপক রায়, মদন অধিকারীরা অনেকটা তেমনই জানিয়েছেন। তাঁদের বক্তব্য, এক দিকে সীমানা এলাকার ‘টেনশন’, অন্য দিকে ‘টেনশন’ কাজের সংস্থান না থাকার। কাজের খোঁজে ভিন্ রাজ্যে পাড়ি দিতে হয় স্থানীয়দের। এই ‘টেনশন’ দূর করতে দেবতার শরণ নেওয়া ছাড়া গতি ছিল না। কিন্তু দেবতা নিয়ে গোড়ায় সমস্যায় পড়েছিলেন উদ্যোক্তারা। পরীক্ষা পাশের জন্য সরস্বতী বা ব্যবসায় সাফল্যের জন্য লক্ষ্মী-গণেশ থাকলেও ‘টেনশন’ দূর করার তেমন দেবতা কই! তাই আলোচনা করে এই ‘টেনশন ঠাকুর’-এর রূপকল্প তৈরি করা।
আরও পড়ুন: গুলি খেলে তিন ছাত্রকে স্কুলে ফেরালেন প্রধান শিক্ষক
‘টেনশন’ কি কমেছে? আপাতত ভাবিত নন ভক্তেরা। তাঁরা ‘টেনশন’ না করে পুজোতেই মন দিয়েছেন।