TET Scam

‘কাল এসে ২১ কোটির হিসাব দিয়ে দেব’, সাড়ে ১০ ঘণ্টা পর ইডির দফতর থেকে বেরিয়ে বললেন তাপস

অফলাইন রেজিস্ট্রেশনের জন্য নেওয়া টাকা লোক পাঠিয়ে মানিক সংগ্রহ করতেন বলে ইডিকে ‘তথ্য’ দিয়েছেন তাপস। বুধবার এই সংক্রান্ত আর্থিক লেনদেনের হিসাব দিতেই ইডির দফতরে যান তিনি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ নভেম্বর ২০২২ ২২:৫৮
Share:

ইডি-র দফতর থেকে বেরিয়ে আসছেন তাপস মণ্ডল। নিজস্ব চিত্র।

শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হতে বুধবার এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের (ইডি) সল্টলেকের সিজিও কমপ্লেক্সের দফতরে বেলা পৌনে ১২টা নাগাদ হাজির হয়েছিলেন তিনি। প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি মানিক ভট্টাচার্যের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত তাপস মণ্ডলের জিজ্ঞাসাবাদ শেষ হল রাত সাড়ে ১০টারও পরে! দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদের পর সিজিও কমপ্লেক্স থেকে বেরিয়ে গেলেন তাপস।

Advertisement

ইডির দফতর থেকে বেরিয়ে তাপস জানান, বৃহস্পতিবার ১১টায় ফের ইডির দফতরে যাবেন তিনি। তাপস বলেন, ‘‘ছাত্রের সঙ্গে ‘কালেকশনের’ ২১ কোটি টাকার অঙ্কটা মিলছে না। হিসাবের একটা গন্ডগোল আছে। আমি বলেছি, শরীরটা খারাপ আছে, আজ ছেড়ে দিন, কালকে এসে হিসাবটা দিয়ে দেব।’’ তিনি জানান, ৫ হাজার ছাত্রের থেকে মোট ২১ কোটি টাকা সংগ্রহ করা হয়েছিল।”

দুর্নীতি-কাণ্ডে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাপসকে এর আগেও তলব করেছিল ইডি। কিন্তু গত তিন বারের সেই জিজ্ঞাসাবাদ পর্ব এত দীর্ঘ হয়নি। সূত্রের খবর, অফলাইন রেজিস্ট্রেশনের জন্য নেওয়া টাকা লোক পাঠিয়ে মানিক সংগ্রহ করতেন বলে ইডিকে ‘তথ্য’ দিয়েছেন তাপস। বুধবার এই অফলাইন রেজিস্ট্রেশন সংক্রান্ত আর্থিক লেনদেনের হিসাব দিতেই ইডির দফতরে যান তিনি। সেখানেই সাংবাদিকদের কাছে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতির বিরুদ্ধে এই অভিযোগ করেন তিনি। যা কার্যত সিলমোহর দিয়েছে মানিকের বিরুদ্ধে আনা ইডির অভিযোগেই।

Advertisement

ইডি সূত্রে খবর ছিল, ২০১৮ সাল থেকে ২০২২ পর্যন্ত তিনটি শিক্ষাবর্ষে টেটের জন্য ডিএলএড প্রশিক্ষণ নিতে ইচ্ছুক ছাত্রছাত্রীদের থেকে নিয়মিত ভাবে টাকা নেওয়া হয়েছে। মূলত ডিএলএড প্রশিক্ষণের যে ৬০০টি কলেজ রয়েছে, সেখানে অফলাইনে ভর্তির জন্যই নেওয়া হত ওই অর্থ। ইডি জানিয়েছিল, প্রশিক্ষণ নিতে ইচ্ছুক যে শিক্ষার্থীরা অনলাইনে রেজিস্ট্রেশনের জন্য নির্ধারিত তারিখে রেজিস্ট্রেশন করাতে পারতেন না, তাঁদের নামই অফলাইনে নথিভুক্ত করার ব্যবস্থা করে দিতেন মানিক। বিনিময়ে মাথাপিছু নেওয়া হত ৫ হাজার টাকা। এ ভাবে আনুমানিক ২০ কোটি টাকা তোলা হয়েছে বলে মনে করছে ইডি।

বুধবার মানিকের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত তাপসও জানান, অফলাইন রেজিস্ট্রেশনের জন্য টাকা নেওয়া হত। সেই লেনদেন হত মহিষবাথানে তাপসেরই একটি অফিসে। তবে ওই টাকা মানিকের কাছ থেকে কোথায় যেত, তা তাঁর জানা নেই। প্রসঙ্গত, তাপস যে মহিষবাথানের অফিসের কথা বলেছেন, সেখানে ইডি গত ১৫ অক্টোবর অভিযান চালিয়েছিল। ওই অফিস থেকে বেশ কিছু নথিও উদ্ধার করে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা।

এই নিয়ে চতুর্থ বার ইডির দফতরে হাজির হলেন মানিক-ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত তাপস। তাঁর সংস্থা ‘মিনার্ভা এডুকেশনাল ওয়েলফেয়ার সোসাইটি’ ইডির আতশকাচের তলায় রয়েছে। এই সংস্থার অধীনে ছয় থেকে সাতটি পলিটেকনিক এবং আইটিআই কলেজ রয়েছে বলে জানিয়েছে ইডি। সূত্রের খবর, মানিকের ছেলে শৌভিক ভট্টাচার্যের সংস্থার সঙ্গে ৫৩০টি বেসরকারি বিইডি, ডিএলএড কলেজের মানোন্নয়নের জন্য যে ২.৬৪ কোটি টাকার চুক্তি হয়েছিল, সেই সম্পর্কে তাপসের কাছে জানতে চেয়েছে ইডি। যদিও সূত্রের খবর, বুধবার তাপস ইডির দফতরে গিয়েছেন টেটের অফলাইন রেজিস্ট্রেশনে টাকার লেনদেন সংক্রান্ত হিসাব দিতেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন