অ্যাসিড বিক্রি বন্ধের সঙ্গে কমুক আক্রোশও, ডাক লক্ষ্মীর

তবে কলকাতায় যে বন্ধুদের পাশে পেলেন, তাঁরাও কম যান না। এক সঙ্গে তথাকথিত মূল স্রোত ও প্রান্তিক গোষ্ঠীর অনেক মুখ এ দিন জড়ো হয়েছিল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ জুলাই ২০১৮ ০২:১৭
Share:

সঞ্চয়িতা ও লক্ষ্মী। নিজস্ব চিত্র

হতে পারে বড় শহর! কিন্তু এখনও সাহস করে অ্যাসিড-ক্ষতের জ্বালা সয়ে সামনে আসতে চান না অনেকেই।

Advertisement

গ্লানি আর হতাশার এই উজান ঠেলতেই কলকাতাকে সোমবার সাহস জুগিয়ে গেলেন লক্ষ্মী অগ্রবাল। #স্টপসেলঅ্যাসিড-এর ডাক দিয়ে গোটা দেশ ঘুরছেন ওই প্রতিবাদী তরুণী। কলকাতায় অবশ্য হাত মেলানোর মতো কয়েক জনকে পেলেন তিনি। তবু আফশোস করছিলেন লক্ষ্মী। ‘‘এখানে আসার আগে অ্যাসিড-হানার শিকার একটি মেয়ে বললেন, আন্দোলনে মুখ দেখাতে পারবেন না। কাউকে দোষ দিচ্ছি না! বড় শহরেও পরিস্থিতির চাপে অনেকেই গুটিয়ে থাকেন।’’

তবে কলকাতায় যে বন্ধুদের পাশে পেলেন, তাঁরাও কম যান না। এক সঙ্গে তথাকথিত মূল স্রোত ও প্রান্তিক গোষ্ঠীর অনেক মুখ এ দিন জড়ো হয়েছিল। এসেছিলেন বছর চারেক আগে দমদমে অ্যাসিড-হানার শিকার সঞ্চয়িতা যাদব। বাকিরা কেউ সমাজকর্মী, কেউ শিক্ষক, কেউ আইনজীবী। আবার কেউ ভিন্‌ধর্মে বিয়ে-করা দম্পতি, যৌনকর্মী বা যৌনকর্মীর সন্তান অথবা রূপান্তরকামী নারী-পুরুষ। হাতে পোস্টার নিয়ে তাঁরা সকলে ভিডিয়ো তুললেন। সমস্বরে বললেন, #স্টপসেলঅ্যাসিড! লক্ষ্মীর লড়াইয়ের এই সুহৃদরা অনেকেই বললেন, কলকাতার পাড়ায় পাড়ায় কী ভাবে খোলাখুলি অ্যাসিড বিক্রি হয়। এমনকি যৌন প্রস্তাবে সাড়া না-দিলে কোনও মেয়ে বা রূপান্তরকামী নারীকে অ্যাসিড মারার হুমকিও দেওয়া হয়। আন্দোলনের সহযোগী, সমাজকর্মী বাপ্পাদিত্য মুখোপাধ্যায় বলছিলেন, ‘‘এলাকা ধরে অ্যাসিড বিক্রি বন্ধের প্রচার শুরু করছি। স্থানীয় প্রশাসনেরও সাহায্য নেব। দেখি, অ্যাসিড-মুক্ত এলাকা গড়ে তোলাই লক্ষ্য।’’

Advertisement

লক্ষ্মীর লড়াইটা শুরু হয়েছিল ২০০৫ সালে। মাত্র ১৫ বছর বয়সে দিল্লির খানমার্কেট এলাকায় অ্যাসিড হানার শিকার হন তিনি। পরের বছরই এ দেশে অ্যাসিড বিক্রি নিষিদ্ধ করতে সুপ্রিম কোর্টে জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেন তিনি। সেই মামলার জেরেই দেশে কিছুটা সচেতনতা বেড়েছে। অ্যাসিড-দগ্ধদের দশ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ক্ষতিপূরণও ধার্য করেছে সুপ্রিম কোর্ট। লক্ষ্মীর এই লড়াই আমেরিকার প্রাক্তন ফার্স্ট লেডি মিশেল ওবামার কাছ থেকে তাঁর জন্য ‘সাহসী নারী’র পুরস্কারও আদায় করে এনেছে। কিন্তু বাস্তবে অ্যাসিড বিক্রি বন্ধ করতে এখনও অনেক পথ হাঁটা বাকি। আইনজীবী ঐন্দ্রিলা চক্রবর্তী বলছিলেন, ‘‘অ্যাসিড বিক্রির নির্দিষ্ট লাইসেন্স থাকার কথা। কারা অ্যাসিড কিনলেন, সেটার নথিও থাকার কথা।’’ বাস্তবে, এ সব নিয়ম কার্যত কেউই মানেন না।

তবে লক্ষ্মীর মত, অ্যাসিড বিক্রি বন্ধের পাশাপাশি এই প্রবণতার বিরুদ্ধে হামলাকারীদের সচেতন করাও গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলছিলেন, ‘‘কয়েক মুহূর্ত আগে যে ভালবাসার কথা বলছিল, সে-ই অ্যাসিড মারার অপরাধ করে! অন্য এক জনের জীবন নষ্ট করার এই আক্রোশটার সঙ্গেও যুদ্ধ করে যেতে হবে।’’ অ্যাসিড বিক্রি বন্ধে কলকাতা কতটা এগোল, তা দেখতে কয়েক মাস বাদে ফের আসবেন লক্ষ্মী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন