—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
কেন্দ্রীয় সরকার আবাস যোজনার অর্থ দেওয়া বন্ধ করে দেওয়ার পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজ উদ্যোগেই গ্রামীণ জনতাকে বাড়ি নির্মাণের জন্য অর্থ দেওয়ার কথা ঘোষণা করে ‘বাংলার বাড়ি’ প্রকল্পের সূচনা করেছিলেন। সেই আবাস প্রকল্প ‘বাংলার বাড়ি’ নিয়ে কড়া পদক্ষেপ করেছে পঞ্চায়েত দফতর। প্রশাসন সূত্রে খবর, উপভোক্তারা যদি আবাসন তৈরির অনুদান সঠিক খাতে ব্যবহার না করেন, তবে সেই টাকা ফেরত নেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। যাঁদের মাথার উপর ছাদ নেই, তাঁদের বাড়ি তৈরিই এই প্রকল্পের মূল লক্ষ্য— অতএব সরকারি অর্থ অন্য কোনও খাতে খরচ চলবে না কিংবা সেই অর্থ অ্যাকাউন্টে ফেলে রাখা যাবে না।
প্রশাসন সূত্রে খবর, ইতিমধ্যেই একাধিক জেলায় দেখা গিয়েছে কিছু উপভোক্তা টাকা ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে রেখে বসে আছেন, বাড়ি তৈরির কাজ শুরুই করেননি। আবার কয়েক জন সরকারি অনুদান অন্য খাতে খরচ করেছেন। এই পরিস্থিতিতে পঞ্চায়েত দফতর জেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছে, কে কোথায় কত দূর বাড়ি নির্মাণের কাজ এগিয়েছেন, তার খোঁজখবর নিতে হবে। জানা গিয়েছে , কেউ যদি টাকা পেয়েও কাজ শুরু না করেন, তবে তাঁর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা ফেরত নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করা হবে।
পঞ্চায়েতমন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার বলেন, “বাড়ি নির্মাণের শর্তেই রাজ্য সরকার উপভোক্তাদের টাকা দেয়। সরকারি সুযোগসুবিধা নিয়েও যাঁরা বাড়ি তৈরি করছেন না, তাঁদের ক্ষেত্রে টাকা ফেরত নেওয়ার বিধান রয়েছে। অর্থ যেন সঠিক ভাবে খরচ হয়, সেটাই আমরা নিশ্চিত করতে চাই।”
উল্লেখ্য, বাংলার বাড়ি প্রকল্পের মাধ্যমে প্রতিটি পরিবারকে মোট ১.২০ লক্ষ টাকা দেওয়া হয়। তিন ধাপে অনুদান পৌঁছে যায়— প্রথম কিস্তিতে ৪০ হাজার টাকা, দ্বিতীয় কিস্তিতে ৪০ হাজার টাকা এবং ঘর সম্পূর্ণ করার পর চূড়ান্ত ৪০ হাজার টাকা। নির্দেশিকা অনুযায়ী, প্রথম কিস্তি পাওয়ার পর ১২ মাসের মধ্যে বাড়ি সম্পূর্ণ করার কথা। প্রয়োজনে কাজের অগ্রগতির ভিত্তিতে সামান্য সময় বাড়ানো হয়। পরে সিদ্ধান্ত হয়, তিন কিস্তি নয়, দু’কিস্তিতে টাকা দেওয়া হবে।
২০২৪ সালের ডিসেম্বরে এই প্রকল্পের টাকা প্রথম বার দেওয়া হয়। তখন প্রায় ১২ লক্ষ পরিবারের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সরাসরি ৬০,০০০ টাকা পাঠানো হয়। ২০২৫ সালের মে মাসে মুখ্যমন্ত্রী আনুষ্ঠানিক ভাবে দ্বিতীয় কিস্তি হিসেবে আরও ৬০,০০০ টাকা বিতরণের ঘোষণা করেন। ফলে বর্তমানে ১২ লক্ষ উপভোক্তা দুই কিস্তি মিলিয়ে মোট ১.২০ লক্ষ টাকা পেয়েছেন।
রাজ্য সরকারের হিসাবে, বাংলার বাড়ি প্রকল্পের আওতায় মোট ২৮ লক্ষ পরিবার চিহ্নিত হয়েছে। এর মধ্যে ১২ লক্ষ পরিবার প্রথম পর্যায়ে অনুদান পেয়েছে। বাকি ১৬ লক্ষ পরিবার আগামী ডিসেম্বর ২০২৫ ও মে ২০২৬-এ কিস্তি অনুযায়ী সুবিধা পাবে। শুধু তা-ই নয়, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেছেন, অতিরিক্ত আরও ১৬ লক্ষ পরিবারকে প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। অর্থাৎ ভবিষ্যতে প্রায় ৫০ লক্ষ উপভোক্তার কাছে গৃহনির্মাণের সহায়তা পৌঁছোবে।
সরকারি সূত্র বলছে, প্রকল্পে কেন্দ্রীয় অনুদানের পাশাপাশি রাজ্যের অর্থও বিনিয়োগ করা হচ্ছে, যাতে গৃহহীন মানুষ দ্রুত মাথার উপর ছাদ পান। তদারকি জোরদার করতে প্রতিটি জেলায় বিশেষ নজরদারি চালানো হচ্ছে। প্রশাসনের এক আধিকারিক জানান, “যেখানে অনুদান পেয়েও বাড়ি হচ্ছে না, সেই বিষয়ে পঞ্চায়েত দফতরকে জেলা প্রশাসনের তরফে বিস্তারিত রিপোর্ট দেওয়া হবে।”
সব মিলিয়ে, বাংলার বাড়ি প্রকল্প শুধু আবাসনই নয়, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার পরীক্ষায়ও বড় ভূমিকা নিচ্ছে। এই পদক্ষেপের ফলে নয়ছয় রোধ হবে এবং প্রকৃত গৃহহীন মানুষের স্বপ্নপূরণ হবে বলেই মনে করছেন নবান্নের শীর্ষ আধিকারিকরা।