একই চিকিৎসা, বিভিন্ন হাসপাতালে খরচ বিভিন্ন রকম। রোগীরা দিশেহারা। যে হাসপাতাল বেশি টাকা নিচ্ছে, তারা উন্নততর পরিষেবা দিচ্ছে কি না— তা বোঝার উপায় নেই। এ বার একই ধরনের চিকিৎসায় সমখরচ-এর নিয়ম চালু করতে চাইছে মূলত বেসরকারি হাসপাতালের কাজকর্ম এবং চিকিৎসা খরচের উপর নজরদারিতে গঠিত চিকিৎসা কমিশন।
এর জন্য তারা মাপকাঠি নির্ধারণ করেছে ‘স্বাস্থ্য সাথী’ প্রকল্পের বিভিন্ন প্যাকেজের দামকে। এই প্যাকেজ মেনে উৎকৃষ্ট পরিষেবা দিতে পারবে কি না, সে ব্যাপারে হাসপাতাল ও নার্সিংহোমগুলির কাছ থেকে উত্তর চাওয়া হয়েছে। সোমবার কমিশনের দফতরে শুনানি শুরুর দিনেই বেসরকারি হাসপাতাল ও নার্সিংহোমগুলির জন্য এই নোটিস জারি করা হয়েছে।
নোটিসে জানানো হয়েছে, ‘স্বাস্থ্য সাথী’ প্রকল্পে আপাতত ২২ কোটি মানুষ স্বাস্থ্য বিমার সুবিধা পাচ্ছেন। এই প্রকল্পে বেঁধে দেওয়া ‘রেট’ মানতে চান কি না, তা হাসপাতালগুলিকে ১৬ জুনের মধ্যে জানাতে বলা হয়েছে। মাস দুয়েক আগে টাউন হলে বেসরকারি হাসপাতালের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও বিভিন্ন হাসপাতালে একই চিকিৎসার বিভিন্ন খরচের বিষয়টি তুলেছিলেন। কোনও রোগী কেবিনে থাকলে তাঁর শারীরিক পরীক্ষার খরচ বেশি, আবার সাধারণ শয্যায় থাকলে সেই একই পরীক্ষার খরচ কম কেন হবে, সেই প্রশ্নও তোলেন মুখ্যমন্ত্রী। সোমবার স্বাস্থ্য কমিশনের জারি করা নোটিসেও বিষয়টি উত্থাপন করা হয়েছে।
একই সঙ্গে এ দিন কমিশন একটি নির্দেশনামা জারি করে বলেছে, প্রত্যেক বেসরকারি হাসপাতাল ও নার্সিংহোমকে একটি পাবলিক গ্রিভ্যান্স সেল তৈরি করতে হবে, যেখানে রোগী বা তাঁর স্বজনরা প্রয়োজনে অভিযোগ জানাতে পারেন। সেখানে এক জন অফিসার থাকবেন। তাঁর নাম ও ফোন নম্বর হাসপাতালের বিভিন্ন জায়গায় টাঙিয়ে রাখতে হবে। রোগীর বাড়ির লোকের সঙ্গে কথা বলার জন্য আলাদা কাউন্সেলার নিয়োগ করতে হবে। হাসপাতালের ই-পোর্টালে রোগীর প্রত্যেক দিনের বিল আপলোড করতে হবে। আউটডোর ও ইন্ডোর রোগীদের চিকিৎসার সমস্ত প্যাকেজের খরচ হাসপাতালে টাঙিয়ে দিতে হবে।
এ দিন কমিশনের প্রথম শুনানিতে মোট ন’টি বেসরকারি হাসপাতাল ও নার্সিংহোমকে ডাকা হয়। এর মধ্যে ছিল অ্যাপোলো হাসপাতাল, বেলভিউ, কেপিসি, পার্ক ক্লিনিক, কোন্নগর সারদা নার্সিংহোম, দুর্গাপুর মিশন হাসপাতাল, বিএম বিড়লা হাসপাতাল, হাওড়ার কেয়ার অ্যান্ড কিওর হাসপাতাল ও রামকৃষ্ণ মিশন সেবা প্রতিষ্ঠান। অ্যাপোলোয় এপ্রিলে ৪ মাসের কুহেলি চক্রবর্তীর মৃত্যুর ঘটনায় অভিযুক্ত চিকিৎসক মহেশ গোয়েঙ্কা, বৈশালী শ্রীবাস্তব ও সঞ্জীব মহাবর এ দিন কমিশনে হাজিরা দেন। পরে কমিশনের প্রধান অনিল বর্মা বলেন, ‘‘কমিশন প্রতিটি কেসের ক্ষেত্রেই দু’ পক্ষের বক্তব্য শুনে আইনমাফিক কাজ করবে।’’