আর কোনও রাখঢাক করলেন না মুকুল রায়। বৃহস্পতিবার গাইঘাটার এক জনসভায় সরাসরি আক্রমণ শানালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে। যিনি এক সময় তাঁকে দেশের রেলমন্ত্রীর পদেও বসিয়েছিলেন। সেই মমতাকেই ‘বড় ব্যবসায়ী থেকে দুর্নীতিগ্রস্ত’ বলতেও পিছপা হলেন না মুকুল।
যা শুনে রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন,,‘‘ মুকুলবাবুর মুখে দুর্নীতির কথা সাজে না। যা তথ্য আছে তা নিয়ে তদন্ত শুরু হলেই প্রমাণ হয়ে যাবে ব্যবসায়ী ও দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তি আসলে কে? কৃত়জ্ঞতা বোধ থাকলে ওঁর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পর্কে চুপ থাকা উচিত।’’
তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে আসার পর মুকুলের অবশ্য বরাবরের লক্ষ্য ছিল অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই বিরোধ আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে। এ দিনের চাঁদপাড়া মিলন সঙ্ঘের মাঠে অবশ্য অভিষেককে নিয়ে বিশেষ রা কাড়েননি তিনি। বরং তাঁর নতুন দল বিজেপিকে স্বস্তি দিয়ে তীর ছুঁড়েছেন মুখ্যমন্ত্রীর দিকেই। তাতে সাক্ষী থেকেছেন বসিরহাটের প্রাক্তন বিধায়ক শমীক ভট্টচার্য, লকেট চট্টোপাধ্যায়রা। শমীকের কথায়,‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে গুটিকয় যোদ্ধাকে নিয়ে সিপিএমকে হারানোর স্বপ্ন দেখেছিলেন তেমনই একজন মুকুল রায় এখন বিজেপিতে। পাইপ লাইনে এখনও অনেকে রয়েছেন। তাঁদের মুখেই শুনবেন তৃণমূলের কিস্সা।’’
সেই কিস্সা শোনাতে গিয়ে মুকুল বলেন, ‘‘মানুষকে ২ টাকা কেজি দরে চাল দেওয়া হচ্ছে। তাতে কেন্দ্র ভরতুকি দিচ্ছে প্রতি কেজি ২৮ টাকা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেজিতে ১ টাকা দিয়ে মানুষের কাছ থেকে ২ টাকা নিচ্ছেন। মানে গরিব মানুষকে চাল বেচেও লাভ করছেন। এ তো বড় ব্যবসায়ীও পারেন না।’’
তবে ব্যবসায়ীরা কীভাবে এই সরকারের থেকে লাভবান হচ্ছেন তাও তুলে ধরেন মুকুল। তিনি জানান, মেট্রো ডেয়ারির ৪৭% শেয়ার ৮৭ কোটি টাকায় বিক্রি হল। যিনি কিনলেন তিনি মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ঘুরে বেড়ান। সেই শেয়ারের ১৫% বিক্রি করে ওই ব্যবসায়ী পেয়েছেন ১১৭ কোটি। হিসাব করলে দেখা যায় এই ৪৫০ কোটি টাকা দুর্নীতি হয়েছে। সাহস থাকলে এর তদন্ত করাক সরকার-দাবি করেছেন মুকুল।
প্রাক্তন রেলমন্ত্রী এ দিন তদন্ত চেয়েছেন সর্বত্র নীল-সাদা রঙ করা এবং এলইডি আলো লাগানো নিয়েও। মুকুলের দাবি, ‘‘নীল সাদা রঙ নিয়ে কয়েক হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে। এলইডি লাইট নিয়েও কয়েক শো কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে।’’ তবে এখনই সে সব বিস্তারিত ফাঁস করতে চাননি তিনি।
মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আনলেও তিনি যে এ সব থেকে মুক্ত সে কথাও প্রাণপণ বোঝানোর চেষ্টা করেন মুকুল। তাঁর সাফাই,‘‘সারদা-নারদাসহ ৫৪ টি চিটফাণ্ডের তদন্ত শুরু হয়েছে। কিন্তু আমার বিরুদ্ধে কোনও তথ্য প্রামণ পাওয়া যায় নি। সিবিআই চার্জশিটে আমার নামও রাখেনি।’’
এ সব বলে তিনি রাজ্যে পরিবর্তনের পরিবর্তন করার ডাক দেন। সেই লক্ষ্য পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তিনি যে থামবেন না সে কথা ঘোষণা করে মুকুল বলেন,‘‘জ্যোতিবাবুর ব্যামো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মধ্যে দেখা যাচ্ছে। প্রতি বছর গরমে জ্যোতিবাবু লণ্ডনে যেতেন ছুটি কাটাতে। বলা হত, বিনিয়োগ আনতে গিয়েছেন। এখন মমতাও শীতকালে লন্ডন যাচ্ছেন। কোনও বিনিয়োগ কিন্তু আসছে না। ’
মমতার প্রতি তাঁর কটাক্ষ,‘‘রাজ্যে আশি লক্ষ চাকরি দেওয়া হয়েছে বলে মুখ্যমন্ত্রী দাবি করেছেন। ৬ বছরের হিসাবে ধরলে প্রতি ঘন্টায় ১৩৬ জন চাকরি পাচ্ছেন। যদি এটা সত্যি হয়, তা হলে জগতে মিথ্যা বলে কিছু আছে কি?’’
সত্য-মিথ্যায় না গিয়ে তৃণমূল নেতা জ্যোতিপ্রিয়বাবু পাল্টা বলেন,‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলার জননেত্রী। কিছু ‘এক্সট্রা’ তো সব সময় এদিক-ওদিক ঘোরাফেরা করবেন। তাঁদের জন্য ফু দিলাম। এতেই উড়ে যাবে।’’
লড়াই অবশ্য থামার নয়। রানি রাসমণি অ্যাভিনিউয়ে যুব তৃণমূলের সভায় মুকুলকে ব্যক্তি আক্রমণ করেছিলেন ভাটপাড়ার তৃণমূল বিধায়ক অর্জুন সিংহ। এর প্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার অর্জুনকে মানহানির নোটিস পাঠান মুকুলের আইনজীবী। অর্জুনের প্রতিক্রিয়া, ‘‘এই নোটিস হাস্যকর ও বিভ্রান্তিকর।’’