Digital Conclave

খাঁটি তৃণমূল তো? ‘আতসকাচে’ যাচাইয়ের পরে দেওয়া হচ্ছে ডিজিটাল শিবিরের প্রবেশপত্র

যাঁরা কনক্লেভে যোগ দিতে আগ্রহী, তাঁদের সকলকে ৪ সেপ্টেম্বরের মধ্যেই তৃণমূল ভবনে পৌঁছে নাম লিখিয়ে নিতে বলা হয়। উপযুক্ত শংসাপত্র সঙ্গে রাখার নির্দেশও দিয়ে দেওয়া হয়। এই উপযুক্ত শংসাপত্রটি কী?

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ১৪:৪৭
Share:

গ্রাফিক- তিয়াসা দাস

তৃণমূলের টিকিটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির দেওয়া ‘শংসাপত্র’ না থাকলে মিলবে না ‘প্রবেশপত্র’। আর ‘প্রবেশপত্র’ না থাকলে ১০ সেপ্টেম্বর ঢোকা যাবে না নজরুল মঞ্চে। ডিজিটাল কনক্লেভের আগে দলের আইটি সৈনিকদের জন্য এমনই নিয়ম বেঁধে দিল তৃণমূলের সোশ্যাল মিডিয়া সেল। সোমবার থেকে নাম নথিভুক্তিকরণ শুরু হয়েছিল তৃণমূল ভবনে। মঙ্গলবার তা শেষ হয়েছে। শংসাপত্র দেখিয়ে যাঁরা নাম লেখাতে পারলেন, তাঁদেরই প্রবেশপত্র দেওয়া হয়েছে। এর আগে কখনও এমন প্রক্রিয়ায় প্রতিনিধি বাছাই করতে দেখা যায়নি তৃণমূলকে।

Advertisement

নজরুল মঞ্চে ডিজিটাল কনক্লেভ হবে, অনেক আগেই সে কথা জানিয়েছিলেন তৃণমূল নেতৃত্ব। সুপর্ণ মৈত্র এবং দীপ্তাংশু চৌধুরীর তত্ত্বাবধানে প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে গত কয়েক মাস ধরে। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেও নজর রেখেছেন। কারণ ১০ তারিখ নজরুল মঞ্চের ওই কর্মসূচিতে প্রধান বক্তা হিসেবে থাকছেন অভিষেকই।

ডিজিটাল কনক্লেভে যোগ দেওয়ার জন্য গোটা বাংলা থেকেই আবেদনপত্র আহ্বান করা হয়েছিল। যাঁরা তৃণমূলের বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া পেজের সঙ্গে যুক্ত, তাঁরা তো আবেদন করতে পারবেনই। যাঁরা নিজেদের মতো করে তৃণমূলের হয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় সক্রিয়, আবেদন করতে পারবেন তাঁরাও। জানানো হয়েছিল দলের সোশ্যাল মিডিয়া সেলের তরফে। কনক্লেভে যোগ দেওয়ার জন্য আগে থেকে নাম নথিভুক্ত করাতে হবে এবং প্রবেশপত্র সংগ্রহ করতে হবে, সে কথাও প্রথমেই বলা হয়েছিল। কিন্তু দলের টিকিটে নির্বাচিত হওয়া কোনও জনপ্রতিনিধি শংসাপত্র না দিলে নাম নথিভুক্ত হবে না বা প্রবেশপত্র মিলবে না, এমনটা শুরুতে বলা হয়নি। পরে এই নিয়মের কথা সুনির্দিষ্ট ভাবে সবাইকেই জানিয়ে দেওয়া হয়। এতটা সংগঠিত ভঙ্গিতে ডিজিটাল কনক্লেভের আয়োজন দেখে খানিকটা বিস্মিত দলেরই অনেকে।

Advertisement

আরও খবর: ঘরে ঢুকুক পর্যটন, চান মুখ্যমন্ত্রী

তৃণমূলের সোশ্যাল মিডিয়া সেল প্রথমে স্থির করেছিল, ডিজিটাল কনক্লেভে যোগ দিতে ইচ্ছুক কর্মীদের নাম ৩, ৪ ও ৫ সেপ্টেম্বর তৃণমূল ভবনে নথিভুক্ত করা হবে। কিন্তু পরে সেই সময়সীমা এক দিন কমিয়ে দেওয়া হয়। তৃণমূলের সোশ্যাল মিডিয়া সেলের তরফে জানানো হয়েছে, নাম নথিভুক্তিকরণের প্রথম তারিখেই এত বিপুল উৎসাহ দেখা গিয়েছে যে সময়সীমা কমাতে দল বাধ্য হয়েছে। প্রথম দিনেই এত কর্মী নাম লিখিয়েছেন যে, তিন দিন ধরে নাম নেওয়া হলে নজরুল মঞ্চে জায়গা দেওয়া যেত না। তাই ৩ সেপ্টেম্বর রাতেই সর্বত্র খবর পাঠিয়ে দেওয়া হয় যে, ৫ সেপ্টেম্বর আর নাম নথিভুক্তি হবে না। যাঁরা কনক্লেভে যোগ দিতে আগ্রহী, তাঁদের সকলকে ৪ সেপ্টেম্বরের মধ্যেই তৃণমূল ভবনে পৌঁছে নাম লিখিয়ে নিতে বলা হয়। উপযুক্ত শংসাপত্র সঙ্গে রাখার নির্দেশও দিয়ে দেওয়া হয়।

রণকৌশল গোপন রাখতেই অতিরিক্ত সতর্কতা। নিজস্ব চিত্র।

এই উপযুক্ত শংসাপত্রটি কী? কনক্লেভে যোগ দেওয়ার জন্য যাঁরা নাম লেখাতে ইচ্ছুক, নিজের এলাকার কোনও তৃণমূলী জনপ্রতিনিধির কাছ থেকে শংসাপত্র নিয়ে আসতে হবে তাঁদের। খবর তৃণমূল সূত্রের। শুধু সাংসদ বা বিধায়কের কাছ থেকে শংসাপত্র নিতে হবে, এমন নয়। পঞ্চায়েতের যে কোনও স্তরের সদস্য বা কাউন্সিলরের কাছ থেকে লিখে আনলেও চলবে।

আরও পড়ুন: সংগঠনের লোক নিয়েই ভোট-যুদ্ধে সিপিএম

কেন এই ব্যবস্থা? তৃণমূলের সোশ্যাল মিডিয়া সেল বলছে, নজরুল মঞ্চে যে কনক্লেভের আয়োজন করা হয়েছে, তা কোনও জনসভা নয়, তা হল একটি প্রশিক্ষণ শিবির। সোশ্যাল মিডিয়ায় কী ভাবে তুলে ধরতে হবে দল ও সরকারের সাফল্য, কী ভাবে জবাব দিতে হবে বিরোধীদের তোলা প্রশ্নের, কী হবে সামগ্রিক রণকৌশল— সে সব বিশদে ব্যাখ্যা করা হবে ওই ডিজিটাল কনক্লেভে। তাই সেখানে যার-তার প্রবেশ বাঞ্ছনীয় নয়, বিপুল উপস্থিতির জেরে বিশৃঙ্খলাও বাঞ্ছনীয় নয়। সেই কারণেই নিয়ন্ত্রিত ভাবে নাম নথিভুক্ত করা হচ্ছে এবং পরিচয়টাও যাচাই করে নেওয়া হচ্ছে।

আরও পড়ুন: টার্গেট ২০১৯: আঙুলে-আঙুলে ধুন্ধুমার লড়াই পদ্ম আর ঘাসফুলে

ডিজিটাল কনক্লেভে দলের আইটি সৈনিকদের কী বার্তা দেবেন অভিষেক, সোশ্যাল মিডিয়ায় তৃণমূলের রণকৌশল কী হতে চলেছে, তা জানার আগ্রহ রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের অবশ্যই থাকবে। তাই নিজেকে তৃণমূল বলে দাবি করে প্রতিপক্ষের লোকজনও ঢুকে পড়তে পারেন ভিতরে, এমন আশঙ্কা থেকেই যায়। সে রকম কিছু রুখতেই এই পরিচয় যাচাইয়ের ব্যবস্থা করেছে তৃণমূল। খবর সোশ্যাল মিডিয়া সেল সূত্রেরই। যাঁরা বিভিন্ন এলাকায় তৃণমূলের টিকিটে নির্বাচিত, তাঁরা জানেন এলাকায় কারা সক্রিয় ভাবে তৃণমূল করেন বা কারা দীর্ঘ দিন ধরে দলের সঙ্গে যুক্ত। তাই তাঁরা নিজেদের প্যাডে লিখে এবং সিল মেরে যদি কাউকে তৃণমূল সমর্থক বা তৃণমূল কর্মী হিসেবে চিহ্নিত করে দেন, তা হলেই আর সংশয়ের অবকাশ থাকে না বলে বাংলার শাসক দলের সোশ্যাল মিডিয়া সেল মনে করছে।

আরও পড়ুন: কোষাগার বেহাল, ভোটের খরচ জোগাড়ের পথ খুঁজতে ‘ওয়ার রুম’ বৈঠক ডাকল কংগ্রেস

যাঁরা দূরের জেলা থেকে ডিজিটাল কনক্লেভে যোগ দিতে চান, তাঁদের জন্য ১০ সেপ্টেম্বর সকালে নজরুল মঞ্চ চত্বরেই নাম লেখানোর এবং প্রবেশপত্র সংগ্রহের ব্যবস্থা রাখা হবে বলে জানানো হয়েছিল আগে। কিন্তু যে ভাবে মঙ্গলবারই নাম লেখানোর প্রক্রিয়া শেষ করে দেওয়া হয়েছে, তাতে কনক্লেভের দিনে নাম লেখানো যাবে কি না, তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। তবে তৃণমূলের সোশ্যাল মিডিয়া সেলের এক শীর্ষকর্তা জানালেন, সাড়ে চার থেকে পাঁচ হাজারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখা হবে প্রতিনিধি সংখ্যা। ফলে অধিকাংশ আসনই ইতিমধ্যে পূরণ হয়ে গিয়েছে। তবে কনক্লেভের দিন সকালে কিছু নাম লেখানোর জন্য বিশেষ ব্যবস্থা থাকবে।

(বাংলার রাজনীতি, বাংলার শিক্ষা, বাংলার অর্থনীতি, বাংলার সংস্কৃতি, বাংলার স্বাস্থ্য, বাংলার আবহাওয়া - পশ্চিমবঙ্গের সব টাটকা খবর আমাদের রাজ্য বিভাগে।)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন