ত্রাণ শিবিরে আলো জ্বালল ডুবরু

এত খুশির মধ্যেও কিন্তু আশঙ্কা একেবারে পিছু ছাড়েনি। প্রচণ্ড গরমে ত্রিপলের নীচে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে কী ভাবে সুস্থ রাখবেন সদ্যোজাতকে তা ভেবে চিন্তিত কবিতা ও তাঁর স্বামী সন্তোষ মালাকার।

Advertisement

অভিজিৎ সাহা

মালদহ শেষ আপডেট: ২৫ অগস্ট ২০১৭ ১০:২০
Share:

জন্ম: ত্রাণ শিবিরে আত্মীয়ের কোলে সদ্যোজাত ডুবরু। —নিজস্ব চিত্র।

কারও পছন্দের নাম বালু। কেউ আবার ডুবরু নামটা রেখেই ফেলেছেন। নাম নিয়ে টানাপড়েন যাকে ঘিরে সেই সদ্যোজাতকে ঘিরেই এখন উচ্ছ্বাসে ভাসছেন মালদহের মঙ্গলবাড়ির রেলগেট এলাকার ত্রাণ শিবিরের বাসিন্দারা। প্রসব যন্ত্রণা ওঠায় বুধবার সকালে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল কবিতা সরকারকে। কিন্তু প্রসবের সময় হয়নি জানিয়ে ফেরত পাঠিয়ে দেন চিকিৎসকরা। সে দিন বিকেলেই এই ত্রাণ শিবিরে সন্তানের জন্ম দেন কবিতা।

Advertisement

একদিকে ঘর হারানোর যন্ত্রণা, অন্যদিকে ত্রাণ শিবিরে বসবাসের কষ্ট। তারই মধ্যে যেন হাজার ওয়াটের আলো জ্বেলেছে একরত্তি শিশুটি। তাকে ঘিরেই মেতে রয়েছেন বানভাসি পরিবারগুলি। তাদের উচ্ছ্বাসে খুশি কবিতাও। তাঁর কথায়, ‘‘বাড়ির চারদিকে জল। তাই অনেকে ছেলের নাম ডুবরু রাখতে বলছেন। আবার অনেকে বলছেন বালু রাখতে। কারণ ওর জন্মের সময় বালুরঘাটের ট্রেন যাচ্ছিল। তাই ভাবছি সকলের কথা শুনে দু’টো নামই রাখব।’’

এত খুশির মধ্যেও কিন্তু আশঙ্কা একেবারে পিছু ছাড়েনি। প্রচণ্ড গরমে ত্রিপলের নীচে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে কী ভাবে সুস্থ রাখবেন সদ্যোজাতকে তা ভেবে চিন্তিত কবিতা ও তাঁর স্বামী সন্তোষ মালাকার। পেশায় সাইকেল মিস্ত্রি সন্তোষ জানান, বেহুলার জলে ভাসছে তাঁদের ঘর বাড়ি। ফলে অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী সহ গোটা পরিবার নিয়ে ঠাঁই নিতে হয়েছে রেললাইনের ধারে। তিনি বলেন, ‘‘বুধবার সকালে প্রসব যন্ত্রণা শুরু হওয়ায় আমি স্ত্রীকে মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাই। তবে চিকিৎসকরা জানান, এখনই সন্তান হওয়ার সম্ভাবনা নেই। তাই হাসপাতাল থেকে ফিরিয়ে দেয়। ওই দিন বিকেল চারটা নাগাদ ত্রাণ শিবিরেই সন্তানের জন্ম হয়। এখন আমরাই থাকতে পারছি না। ওকে কী ভাবে রাখব বুঝতে পারছি না।’’

Advertisement

পুরসভার চেয়ারম্যান কার্তিক ঘোষ বলেন, ‘‘ওই পরিবারের সঙ্গে দ্রুত যোগাযোগ করে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’’

শনিবার থেকে পুরাতন মালদহের মঙ্গলবাড়ির রেলগেট এলাকায় রেল লাইনের দু’ধারে আশ্রয় নিয়েছেন পুরাতন মালদহ পুরসভার ১১ নম্বর ওয়ার্ডের সারদা কলোনি, রেল কলোনি-সহ চারটি এলাকার পাঁচশোরও বেশি পরিবার। বানভাসিদের অভিযোগ, পানীয় জল, খাবারের সমস্যাতো রয়েইছে, সঙ্গে মাথা গোঁজার জন্য পর্যাপ্ত ত্রিপলও দেওয়া হচ্ছে না। ফলে একটি ত্রিপলের নিচে দু’টি কিংবা তিনটি পরিবারকে একসঙ্গে বসবাস করতে হচ্ছে। প্রতিদিন চার জোড়া ট্রেন চলছে মঙ্গলবাড়ি রেলগেটের উপর দিয়ে। বহু মানুষ লাইনের ধারে সংসার পেতেছেন বলে ১০ কিলোমিটার গতিতে যাত্রিবাহী ট্রেন গুলি চালানো হচ্ছে বলে রেলসূত্রে জানানো হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন