CV Ananda Bose

‘জুনিয়র কর্মী’ ব্রাত্য বসুকে পাত্তাই দিতে নারাজ বোস! আলোচনা করব মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গেই, বললেন রাজ্যপাল

সোমবার রাজভবনে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হন রাজ্যপাল। সেখানে শিক্ষামন্ত্রীর ‘ভ্যাম্পায়ার’ আক্রমণের কোনও জবাব দেননি বোস। অবশ্য কোনও ক্ষেত্রেই তাঁর নাম মুখে আনেননি তিনি।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৪:১০
Share:

(বাঁ দিক থেকে) সিভি আনন্দ বোস, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, ব্রাত্য বসু। — ফাইল চিত্র।

‘জুনিয়র কর্মী’ ব্রাত্য বসুর কোনও মন্তব্যের জবাব দিতে নারাজ রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। এমনকি তাঁর মন্তব্যকে বিশেষ পাত্তা দিতেও তিনি রাজি নন। বরং যে কোনও সমস্যায় রাজ্যপাল সরাসরি কথা বলবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে। সোমবার রাজভবনে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হন তিনি। সেখানে শিক্ষামন্ত্রীর ‘ভ্যাম্পায়ার’ আক্রমণের কোনও জবাব দেননি বোস। অবশ্য কোনও ক্ষেত্রেই তাঁর নাম মুখে আনেননি তিনি।

Advertisement

রাজভবনের সঙ্গে শিক্ষা দফতর বা রাজ্য সরকারের এ হেন দূরত্ব প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে নাম না করে রাজ্যপাল বলেন, ‘‘আমার যদি কিছু বলার থাকে বা কোনও কিছুর প্রয়োজন হয়, তাহলে আমার সংবিধানিক সহকর্মী মুখ্যমন্ত্রীকে বলব, তার অধস্তন সহকর্মীকে বলব না।’’ এমন মন্তব্য করে কার্যত তিনি শিক্ষামন্ত্রীকেই বোঝাতে চেয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে।

উল্লেখ্য, গত শনিবার সকালে একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গিয়েছিলেন রাজ্যপাল। সেখান থেকে বেরোনোর সময় সাংবাদিকেরা প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘‘আজ মধ্যরাতের জন্য অপেক্ষা করুন। অ্যাকশন কাকে বলে দেখতে পাবেন।’’ নিজের এক্স হ্যান্ডেলে রাজ্যপালের এমন মন্তব্যকে কটাক্ষ করেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। শিক্ষামন্ত্রী লেখেন, ‘‘সাবধান! সাবধান! সাবধান! শহরে নতুন রক্তচোষা (ভ্যাম্পায়ার) এসেছে। নাগরিকেরা দয়া করে সতর্ক থাকুন। ভারতীয় পুরাণ অনুযায়ী, ‘রাক্ষস প্রহারের’ জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে আছি।’’ তাঁর এমন কটাক্ষের পর চুপই ছিলেন বোস। সোমবার নাম না করে শিক্ষামন্ত্রীকে কার্যত নীরব বার্তা দিয়েছেন রাজ্যপাল।

Advertisement

মধ্যরাতে নবান্ন এবং দিল্লিতে চিঠি পাঠানো নিয়েও প্রশ্নের মুখে পড়তে হয় রাজ্যপালকে। তবে এই সংক্রান্ত বিষয়ে সব উত্তরই সংক্ষিপ্ত ভাবে দিয়েছেন রাজ্যপাল। কী রয়েছে খামবন্দি সেই চিঠিতে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘যেটা গোপনীয়, সেটা গোপনীয়ই।’’ কেনই বা সেই চিঠি পাঠানোর প্রয়োজন হল? এমন প্রশ্নের জবাবে আনন্দ বোস বলেছেন, ‘‘আমি কিছু জানাতে চেয়েছিলাম।’’

চিঠি বিতর্ক নিয়ে যাতে মুখ্যমন্ত্রীর উপর কোনও চাপ তৈরি না হয়, সে বিষয়েও দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন রাজ্যপাল। মঙ্গলবার বিদেশ সফরে রওনা হচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই সফরে রওনা হওয়ার আগে তিনি কোনও ভার নিয়ে রাজ্য ছাড়ুন, চাইছেন না রাজ্যপাল বোস। মঙ্গলবার মুখ্যমন্ত্রীর রওনা হওয়ার আগে আর কোনও বিতর্ক চান না রাজ্যপাল। মুখ্যমন্ত্রীর সফর সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী বিদেশে যাচ্ছেন, আমি চাই না এমন সময় তাঁর ওপর কোনও চাপ দেওয়া হোক। যখন তিনি বিদেশ সফরে থাকবেন, সেই সময় তাঁর ওপর কোনও অতিরিক্ত ভার যেন না দেওয়া হয়। তিনি ফিরে এলেই আমরা বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনা করব।’’ চিঠি সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে যে তিনি মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে চান, সে কথাই এমন মন্তব্যের মাধ্যমে বুঝিয়েছেন বলে মনে করছে প্রশাসনিক মহলের একাংশ।

রাজ্যপালের এমন মন্তব্যের পর মনে করা হচ্ছে, গত সোমবার নবান্ন থেকে মন্ত্রিসভার রদবদলের যে ফাইলটি পাঠানো হয়েছিল, এক সপ্তাহ পর তা অনুমোদন দিয়ে নবান্নে ফেরত পাঠিয়েছেন রাজ্যপাল। নিজের বক্তৃতা মারফৎ সেই ইঙ্গিতই দিয়েছেন তিনি। শনিবার বিকেলে মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী রাজভবনে যান। সেখানে প্রায় এক ঘণ্টা রাজ্যপালের সঙ্গে বৈঠক হয় তাঁর। তখনই প্রশাসন সূত্রে খবর ছিল, মন্ত্রিসভা রদবদল নিয়ে নিজের সম্মতি নবান্নকে জানিয়ে দিয়েছেন রাজ্যপাল।

তবে রাজভবনে ফাইল আটকে থাকা নিয়ে সরকারপক্ষ যে অভিযোগ তুলেছে, তার জবাবও দিয়েছেন রাজ্যপাল। তাঁর কথায়, ৮টি ফাইল এসেছে। তার মধ্যে ৭টি ফাইল নিয়ে আমি প্রশ্ন পাঠিয়েছি রাজ্য সরকারের কাছে। সাতটি ফাইলের ব্যাখ্যা চেয়েছি, তাই সরকারি দফতর গুলিতেই সাতটি ফাইল আটকে রয়েছে, রাজভবনে আটকে নেই। আর একটা ফাইল আদালতের বিচারাধীন।’’ আবার উপাচার্য নিয়োগ নিয়েও নিজের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন বোস। তিনি বলেছেন, ‘‘স্থায়ী উপাচার্য নিয়োগ একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া। সিলেকশন কমিটি তৈরি হবে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ এবং ইউজিসির নিয়ম অনুযায়ী। তার পরেই স্থায়ী উপাচার্য নিয়োগ হবে। তত দিন পর্যন্ত অস্থায়ী উপাচার্য থাকবেন। অন্তর্বতী উপাচার্যদের জন্য কোনও পৃথক মানদণ্ড নেই।’’

মুখ্যমন্ত্রী এবং শিক্ষামন্ত্রী অভিযোগ করেছেন ১০ বছরের অধ্যাপনার অভিজ্ঞতা ছাড়াই উপাচার্যদের নিয়োগ করা হচ্ছে। এমন অভিযোগের জবাবে রাজ্যপাল বলেন, ‘‘অন্তর্বর্তিকালীন উপাচার্য নিয়োগের জন্য কোনও নির্দিষ্ট অধ্যাপনার যোগ্যতা বলে দেওয়া নেই। যে কোনও যোগ্য ব্যক্তিকেই অন্তর্বর্তী উপাচার্য হিসাবে নিয়োগ করা যায়। সেটাই নিয়ম এবং সেটাই মানা হচ্ছে।’’ তবে এ রাজ্যের কাজ করতে পেরে তিনি যে খুশি, তা আবারও জানিয়েছেন বোস। তবে বেশ কিছু আইএএস এবং আইপিএস যে পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ করছেন, তা জানাতে ভোলেননি তিনি। তবে সব আধিকারিক এমন নয় বলেও মন্তব্য করেছেন রাজ্যপাল।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement