সাড়ে তিন মাসের আন্দোলনে বেহাল দশা দার্জিলিঙের হোটেলগুলির। কোথাও স্যাঁতসেঁতে ঘর, কোথাও আবর্জনার স্তূপ। কোথাও আবার মরচে পড়েছে কলের লাইনে। এই অবস্থায় কিছুটা সাফসুতরো করেই চালু হয়েছে ছোট-বড় প্রায় সব হোটেলই। সবাই এখন চাইছেন, পর্যটকেরা আসুন, চালু থাক হোটেলের কাজকর্ম। তা হলে অন্তত রোজগারের রাস্তাটা খোলে।
পর্যটক টানতে তাই বড় ছাড়ের কথা ঘোষণা করেছে সব হোটেল। তারা চাইছে, সরকারের তরফে কিছু ছাড় দেওয়া হোক। যাতে সাড়ে তিন মাসের ধাক্কা সামলে ওটা সম্ভব হয়।
লক্ষ্মীপুজো থেকে দীপাবলির সময় পাহাড়ে সাধারণ সময়ে সব হোটেলই একশো শতাংশ বুকিং থাকে। এ বার সেখানে বন্ধ ওঠার পরে এখনও পর্যন্ত মাত্র ১৫ শতাংশ মতো ভর্তি। সেই পর্যটকদের অধিকাংশও বিদেশি। কিন্তু তাতেই আস্তে আস্তে হোটেল ব্যবসায় জোয়ার ফিরছে।
সেই সঙ্গে চলছে হোটেল সাফ সুতরো করার কাজ। জলের পাইপে মরচে ধরে গিয়েছে। তাই অনেক হোটেলেই কল খুললে দূষিত লাল জল বার হচ্ছে। কোথাও আবার শৌচাগারে মাকড়সার জাল পুরোপুরি সাফ হয়নি। রাজভবন লাগোয়া হোটেলের কর্ণধার পলদেন লামা জানান, লক্ষ্মীপুজো অবধি তো হোটেলের বহু কর্মী ছুটিতে ছিলেন। ফলে, সব রুম কোথাও চালু হয়নি। তাই সব হোটেলই কিছু রুম পরিষ্কার করে বিশেষ ছাড় দিয়ে এগোতে চাইছে। যে পর্যটকেরা ইতিমধ্যেই চলে এসেছেন, যুদ্ধকালীন ভিত্তিতে ৮-১০টি ‘রুম’ সাফসুতরো করে পর্যটকদের দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কিচেন তো আর রাতারাতি প্রস্তুত করা সম্ভব হয়নি। তাই এক হোটেলের ‘শেফ’ ও তাঁর সহকারীরা অন্য হোটেলে খাবার তৈরি করে পাঠাচ্ছেন।
এর মধ্যে রাজ্যের কাছে সাহায্যের আর্জিও জানাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। তাঁদের বক্তব্য, তিন মাসের উপরে তাঁরা ব্যবসা বন্ধ ছিল। বিদ্যুতের বিল থেকে শুরু করে নানা করে কিছুটা ছাড় তাই আশা করছেন তাঁরা। দ্রুত রাজ্য সরকার, জিটিএ-র কেয়ারটেকার বোর্ডের সঙ্গেও আলোচনাতেও বসতে চাইছেন দার্জিলিঙের পর্যটন ব্যবসায়ীরা। দার্জিলিংয়ের অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টসের সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ লামা মনে করান, পাহাড়ের অর্ধেক হোটেল ‘লিজ’ নিয়ে চালান সমতলের ব্যবসায়ীরা। গাড়ির অর্ধেকও সমতলের। তাই পর্যটনে গতি আনতে পাহাড়-সমতলকে এক সঙ্গে কাজে নামতে হবে। কেয়ারটেকার বোর্ডের তরফে বিনয় তামাঙ্গ, অনীত থাপারাও রোজ হোটেল মালিকদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন।
বৃহস্পতিবার দিলীপ ঘোষের উপরে হাঙ্গামার ঘটনার পরেও দার্জিলিং থমকে যায়নি। দার্জিলিঙের শতাব্দী প্রাচীন একটি রেস্তোরাঁর কর্ণধার এডওয়ার্ড জানান, একটাও দোকান, হোটেল, মোমো স্টল সে দিন বন্ধ হয়নি। তিনি বলেন, ‘‘রাজনৈতিক গোলমাল হতে পারে। সে জন্য জবরদস্তি দোকানপাট, হোটেল বন্ধ করার প্রবণতা থেকে সরার ইঙ্গিত দিচ্ছে দার্জিলিং।’’
দীপাবলিতে পাহাড়ে সব ঘরে আলো জ্বলুক, লক্ষ্মীপুজোর দিন যেন সেই প্রার্থনাই করল সারা পাহাড়।