al-qaeda

গত কয়েক বছরে তলে তলে রাজ্যের মাটিতে দ্রুত ডালপালা মেলতে শুরু করেছে আল কায়দা! বলছে রিপোর্ট

রাজ্য পুলিশের স্পেশ্যাল টাস্ক ফোর্স ও গোয়েন্দা সূত্রের খবর, এ রাজ্যে ওই জঙ্গি সংগঠনের অন্তত তিনটি কেন্দ্র তৈরি হয়েছে। তার মধ্যে একটি দুই ২৪ পরগনা, একটি হাওড়া এবং তৃতীয়টি উত্তরবঙ্গে।

Advertisement

শিবাজী দে সরকার

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৬:৩১
Share:

চমকে দিয়েছে এ রাজ্যের গোয়েন্দাদের। প্রতীকী ছবি।

এর আগেও বিচ্ছিন্ন ভাবে আল কায়দা-ঘনিষ্ঠ জঙ্গি ধরা পড়েছিল রাজ্যে। কিন্তু তা নিয়ে দু’চার দিন পুলিশি তৎপরতার পরেই ফের থিতিয়ে গিয়েছিল সব কিছু। গত কয়েক বছরে তলে তলে পশ্চিমবঙ্গের মাটিতে যে ওই জঙ্গি সংগঠন দ্রুত ডালপালা মেলতে শুরু করেছে, তা জানতে পারেননি গোয়েন্দারা। সম্প্রতি রাজ্যে আবার আল কায়দার উপমহাদেশীয় শাখার (আল কায়দা-ইন্ডিয়ান সাবকন্টিনেন্ট বা একিউআইএস) চার সদস্য গ্রেফতার হওয়ার পরেই গোয়েন্দাদের সামনে এসেছে জঙ্গি সংগঠন বিস্তারের তথ্য। ওসামা বিন লাদেনের নেতৃত্বে যে জঙ্গি সংগঠন এক সময়ে ৯/১১-র মতো শিউরে ওঠার ঘটনা ঘটিয়েছিল, তাদেরই শাখার রাজ্যে এ হেন বাড়বাড়ন্ত কার্যত খানিকটা চমকে দিয়েছে এ রাজ্যের গোয়েন্দাদের।

Advertisement

রাজ্য পুলিশের স্পেশ্যাল টাস্ক ফোর্স এবং গোয়েন্দা শাখা সূত্রের খবর, এ রাজ্যে ওই জঙ্গি সংগঠনের অন্তত তিনটি কেন্দ্র বা মডিউল তৈরি হয়েছে। তার মধ্যে একটি দুই ২৪ পরগনা, একটি হাওড়া এবং তৃতীয়টি উত্তরবঙ্গে কাজ করছে।

গোয়েন্দা সূত্রের খবর, ধৃতদের জেরা করে তিনটি মডিউলের অন্তত ১৯ জনের নাম মিলেছে। এদের মধ্যে ৬ জন ধরা পড়েছে। তার মধ্যে চার জনকে কিছু দিন আগেই পাকড়াও করেছে এসটিএফ। দু’জন ধরা পড়ে উত্তর ২৪ পরগনায়, এক জন দক্ষিণ ২৪ পরগনায় এবং এক জন মুম্বইয়ে। মুম্বই থেকে গ্রেফতার হওয়া সাদ্দাম হোসেন খান গ্রেফতারি এড়াতে শ্রমিক সেজে মুম্বইয়ে লুকিয়েছিল। তবে বাকি ১৩ জনকে এখনও নাগালে পাননি তদন্তকারীরা।

Advertisement

এর মধ্যে অন্তত আবু তালহা-সহ তিন জন দক্ষিণ এশিয়ায় আল কায়দা সংগঠনের চাঁই বলে দাবি করছেন গোয়েন্দারা। তবে ওই তিন জন বাংলাদেশি নাগরিক। সীমান্ত পেরিয়ে এ দেশে ঢুকেছে তারা। গোয়েন্দাদের সন্দেহ, পশ্চিমবঙ্গ থেকে মধ্যপ্রদেশ, বিহার, দক্ষিণ ভারতের একাধিক রাজ্য-সহ দেশের নানা জায়গায় ছড়িয়ে পড়েছে ওই সংগঠনের সদস্যেরা।

এক গোয়েন্দা কর্তার মতে, এ রাজ্যের বিভিন্ন জেলা থেকে দেশের বিভিন্ন রাজ্যে পরিযায়ী শ্রমিকেরা যান। অতীতে দেখা গিয়েছে, জঙ্গি সংগঠনের সদস্যেরা আত্মগোপন করার জন্য ওই পরিযায়ী শ্রমিকের দলে ভিড়ে গিয়েছে। আবার অনেক সময়ে ওই দলে মিশেও ক্রমাগত মৌলবাদী এবং জঙ্গি ভাবধারা প্রচার করতে থাকে তারা।

তবে একটি সূত্রের দাবি, এ রাজ্যে অতীতে জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশের (জেএমবি) একাধিক সদস্য ভিন্‌ রাজ্যে বাঙালি শ্রমিকদের aদলে মিশে থাকার পর থেকেই পরিযায়ীদের উপরে বাড়তি নজরদারি শুরু হয়েছে। সেই সূত্রেই গোয়েন্দাদের আশা, দেশ ছেড়ে না-পালালে বাংলাদেশি চাঁইদেরও ধরা সম্ভব হবে।

গোয়েন্দা সূত্রের খবর, প্রায় তিন বছর আগে থেকে এ রাজ্যে সংগঠনের সলতে পাকানো শুরু করেছিল আল কায়দা। লকডাউনের সময়ে প্রশাসন দীর্ঘদিন অতিমারি নিয়ে ব্যস্ত ছিল, অন্য দিকে বিভুঁই থেকে ফিরেছিল বহু শ্রমিক। সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে দুই ২৪ পরগনা, হাওড়া, উত্তরবঙ্গের প্রত্যন্ত গ্রামে সংগঠন বাড়িয়েছে তারা। সেই সময়ে বাংলাদেশে বসে থাকা আবু তালহার নির্দেশেই কাজ হত। অতিমারি পরিস্থিতি কাটলে ত্রিপুরা-মেঘালয়ের সীমান্ত দিয়ে ঢোকে তালহা ও তার কিছু অনুচর। অসমের বরপেটা হয়ে উত্তরবঙ্গের ডুয়ার্সে ঘাঁটি গেড়েছিল। সেখান থেকেই তালহা ভিন্‌ রাজ্যে পাড়ি দিয়েছে বলে অনুমান।

অতীতে জঙ্গিদের আনাগোনা সীমান্ত লাগোয়া দক্ষিণবঙ্গের তিনটি এবং উত্তরবঙ্গের দু’টি জেলাতেই আবদ্ধ ছিল বলে জানাচ্ছেন গোয়েন্দারা। এর বাইরে খাগড়াগড় বিস্ফোরণের পরে বীরভূমে অবশ্য জেএমবি মডিউলের কথা জানা গিয়েছিল। কিন্তু আল কায়দার ক্ষেত্রে ডুয়ার্সের জলপাইগুড়ি, কোচবিহার এবং গাঙ্গেয় বঙ্গের দক্ষিণ ২৪ পরগনায় সংগঠনের কথা সামনে এসেছে। ফলে চিন্তা আরও বেড়েছে। শুধু তা-ই নয়, গত দু’বছরে বহু এলাকাতেই সে ভাবে নজরদারি ছিল না। তার ফলে কোন এলাকায় কাদের এই জঙ্গি সংস্রবে নিয়ে আসা হয়েছে এবং তারা বর্তমানে কোথায় রয়েছে, তা-ও খুঁজে বার করা কষ্টসাধ্য বলে মনে করছেন অনেকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন